জেলা প্রতিনিধি
১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৯ পিএম
সীমান্তবর্তী জেলা মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলায় দিন দিন বাড়ছে সবুজ মাল্টা চাষ। ফলন ভালো হওয়ায় চাষিদের চোখে এখন রঙিন স্বপ্ন। এতে আর্থিক স্বচ্ছলতা ও লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন মাল্টা চাষিরা।
যদিও একসময় জুড়ীতে লেবু জাতীয় ফসল উৎপাদনে এগিয়েছিল কমলা। সরকারি উদ্যোগের পাশাপাশি অনেকেই এখন ব্যক্তি উদ্যোগে চাষ করছেন মাল্টা। প্রতিবছর বাড়ছে মাল্টা বাগানের সংখ্যা।
কৃষি বিভাগ জানায়, মাল্টা দেখতে সবুজ হলেও খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু ও মিষ্টি। বারি-১ জাতের এই মাল্টার উৎপাদন বাড়ছে মৌলভীবাজার জেলার জুড়ীতে। সম্ভাবনাময় এই ফসল চাষাবাদে তুলনামূলক খরচ কম থাকায় সহজে ফলন হয়। সে জন্য কৃষকরা ঝুঁকছেন এখন মাল্টা চাষে।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, জুড়ী উপজেলায় ২৪ হেক্টর জমিতে মাল্টা বাগান গড়ে উঠেছে। গত বছর যা ছিল ২১ হেক্টর। এ বছর জুড়ীতে মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭৭ টন।
জানা গেছে, জুড়ী উপজেলার পূর্বজুড়ী, ফুলতলা, সাগরনাল ও গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে এর ফলন হচ্ছে বেশি। কেউ করেছেন সখের বসে চাষাবাদ আবার কেউ কেউ বাণিজ্যিক চিন্তাধারা নিয়ে। এছাড়াও উপজেলার সবকটি ইউনিয়নে কমবেশি হচ্ছে মাল্টার আবাদ। রয়েছে ছোট বড় শতাধিক বাগান।
সম্প্রতি পূর্ব জুড়ী ইউনিয়নের বিনন্দপুর গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার পাশে দুটি পাহাড়ে প্রায় ১২ শতাধিক মাল্টার গাছ দিয়ে তৈরি বিশাল বাগান। ৩ বছর পূর্বে প্রায় সাড়ে ৩ একর জমিতে মাল্টা চাষ শুরু করেন জাবের আহমদ। মাল্টার পাশাপাশি একই টিলা ভূমিতে রয়েছে কমলা ও জারালেবু। কিছুটা সরকারি হলেও বাকি সম্পূর্ণ করেছেন ব্যক্তিগত উদ্যোগে করেছেন তিনি।
জাবের আহমদ বলেন, সরকার থেকে সারসহ সকল ধরণের সহযোগীতা পেয়েছি। কৃষি কর্মকর্তারা নিয়মিত বাগান দেখছেন ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এবছর মাল্টার ফলন ভালো হওয়ায়, আশাকরি আগামী বছর মাল্টার বাম্পার ফলন হবে।
তিনি জানান, আমাদের বাগানে সরকার থেকে প্রদর্শনীসহ নিজ খরচে ১২শত মাল্টা গাছ, ৪শত কমলা গাছসহ লেবু জাতীয় বিভিন্ন প্রজাতির ফলের গাছ লাগানো হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৩ একর জায়গার ওপর এই মাল্টা বাগান। প্রতিনিয়ত ২ জন লোক আমাদের বাগানে কাজ করে।
উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের লাঠিটিলার ডোমাবাড়ি গ্রামের খোর্শেদ আলম ৩ বছর আগে ১০ শতক জায়গার ওপর গড়ে তুলেন মাল্টা বাগান। গত বছর ফল আসলেও তেমন ভালো হয়নি। বিগত বছরের তুলনায় এবছর প্রত্যেক গাছে বারি-১ জাতের মাল্টায় স্বপ্ন দেখছেন তিনি। ফলন ভালো হওয়ায় নিজের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করছেন এসব মাল্টা। সুস্বাদু এই মাল্টার প্রতি আগ্রহ মানুষের। যার জন্য বিক্রি হয়ে যাচ্ছে খুব সহজেই।
খোর্শেদ আলম জানান, এবছর প্রতিটি গাছে প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০টি করে ফল এসেছে। ছোট ছোট গাছের ফল দেখে অনেকের উৎসাহ বেড়েছে মাল্টার প্রতি। কেউ কেউ উদ্যোগ নিয়েছেন আগামীতে অনেকেই মাল্টা চাষে মনযোগ দিবেন।
আলাপকালে কয়েকজন মাল্টা চাষী জানান, বাজারে যে মাল্টা পাওয়া যায় তার চেয়ে এই ফলগুলো বেশি মিষ্টি। সাইজেও এই মাল্টাগুলো বড় হয়। ৬ থেকে ৭টি মাল্টায় কেজি হয়। বাজারে মাল্টা কেজি বিক্রি হয় ৩শত থেকে সাড়ে ৩শত টাকা করে। আর আমরা বিক্রি করি ২শত টাকা করে।
জুড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকতা মো. মাহমুদুল আলম খান বলেন, লেবু জাতীয় ফসলের উৎপাদন বাড়াতে কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি অফিসের পরামর্শে মাল্টা চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। যারা মাল্টা চাষ করেছে তাদের ফলন ভালো হয়েছে।
এবছর নতুন মাল্টা চাষী ৪৫ জন বেড়েছেন। শুকনো মৌসুমে মাল্টার উৎপাদন বাড়াতে গাছের পরিচর্যায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করা হবে বলে তিনি জানান।
প্রতিনিধি/ এজে