images

সারাদেশ / শিক্ষা

ইবিতে র‍্যাগিংয়ের নামে নবীন শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক

১৯ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:১৩ এএম

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) আবাসিক হলে র‍্যাগিং চলা অবস্থায়  হাতেনাতে কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ধরে সিনিয়র শিক্ষার্থীরা। এসময় অভিযুক্ত ছয় শিক্ষার্থীকে থানা হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।

সোমবার (১৮ নভেম্বর) দিবাগত মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।

অভিুযুক্ত শিক্ষার্থীরা হলেন ফিন্যান্স অ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের

সাব্বির হোসেন, শেহান শরীফ শেখ, লিমন হোসেন, কান্ত বড়ুয়া, সাকিব খান এবং ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের সঞ্চয় বড়ুয়া।

আরও পড়ুন

আন্দোলনের নামে তিতুমীরের শিক্ষার্থীদের হঠকারিতা, নিন্দার ঝড়

থানায় সোপর্দকালে উপস্থিত ছিলেন ইবির নিরাপত্তা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান, সহকারী নিরাপত্তা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জনি, আশরাফ।

এছাড়াও ছিলেন ইবি শিবিরের সভাপতি আবু মুসা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের তানভীর মাহমুদ মণ্ডল, ইয়াশিরুল কবির প্রমুখ।

তথ্যসূত্রে জানা যায়, রাত সাড়ে নয়টার দিকে ডাকে অভিযুক্ত শিহান। এসময় তিনি রাকিব এবং সাইমকে নিয়ে সাদ্দাম হলের সামনে আসতে বলে। এরপর ভুক্তভোগীরা হলের সামনে গেলে তাদেরকে লালন শাহ হলের ৩৩০ নম্বর রুমে ডাকেন। এরপর সাইম, রাকিবুল, শামীম, রাকিব, হামজা, তারেক, রিশান, তানভীর এবং মামুনসহ ৩৩০ নম্বর রুমে যায়। একপর্যায়ে চারজনকে রেখে (শামীম, সাইম, রাকিবুল, হামজা) বাকিদের বের করে দেয় অভিযুক্ত সাব্বির এবং সঞ্চয়। এরপর থেকে উক্ত চারজনের ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়। এসময় তাদের মধ্যে একজনকে পাঁচ রকম হাসি দিতে বলা হয়, এছাড়া একজনকে বড় ভাইকে কল দিয়ে বাজে ভাষা বলানো হয় এবং আরেকজনে নাচাতে বলা হয়৷ এছাড়া এক বন্ধুকে দিয়ে আরেকজনকে গালি দেয়ানো হয়। এরপর হলের আবাসিক শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না উপস্থিত হয়ে তাদেরকে হাতেনাতে ধরেন।

received_417686621408685

এর আগে ১৬ নভেম্বর রাত এগারোটার দিকে বারোজন শিক্ষার্থীকে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী সাদী অ্যান্ড হাদী ছাত্রাবাসে নিয়ে যাওয়া হয়৷ পরে তাদেরকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করা হয়৷ এসময় কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পর্ণ তারকা মিয়া খলিফা ও জনি সিন্সের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় আরেক শিক্ষার্থীকে অঙ্গ নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করানো হয়। তিনজনকে দিয়ে অশ্লীল কবিতা পাঠ করানো হয়৷ এছাড়া দুজনকে (সাইম, রাকিব) দিয়ে পর্ণ তারকার অভিনয় করা হয়৷ এছাড়াও একজনকে প্রায় ত্রিশ মিনিটের ওপরে সমকামী চরিত্রেও অভিনয় করার অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগীরা। এসময় উপস্থিত ছিলেন অভিযুক্ত আট শিক্ষার্থী।

এদিকে র‍্যাগিং চলা অবস্থায় হাতেনাতে ধরা দাওয়াহ অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের  হাসানুল বান্না অলি বলেন, আমার কাছে একটা কল আসে, হলের ৩৩০ নম্বর রুমে র‍্যাগিং চলতেছে। আমি সেখানে গিয়ে দেখি, সাব্বির এবং সঞ্জয় বড়ুয়া দুজন মিলে ওদেরকে র‍্যাগ দিচ্ছে। পরে আমাকে দেখে ওরা চলে আসে। পরে ঘটনা জিগ্যেস করলে তারা অস্বীকার করে। পরে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের কয়েকজন বন্ধু ঘটনাস্থলে পৌঁছালে তারা সত্যতা নিশ্চিত করে। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সহযোগিতায় অভিযুক্তদের থানায় পুলিশি হেফাজতে সোপর্দ করা হয়।

আরও পড়ুন

রাবিতে খেলাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ, আহত ১০

এদিকে অভিযুক্ত শরীফ শেহান বলেন, আমি হলের কক্ষে ছিলাম না৷ পরে আমাকে ডাকা হয়। এসময় ভেতরে গিয়ে বান্না ভাইকে  দেখতে পাই৷ এর আগে গতদিন মেসে জুনিয়রদের সঙ্গে বসেছিলাম। ওদিন ভিসি স্যারের নাম, প্রক্টর স্যারের নাম, বিভাগের নাম জিজ্ঞেস করা হয়। এসময় কেউ না পারলে তাকে ধমকও দেওয়া হয়। তবে এসময় তিনি গতদিনে মেসের ঘটনার কিছুটা সত্যতা রয়েছে বলেও জানান৷

অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম লিমন প্রথমে ঘটনার বিষয়টি অস্বীকার করলেও পরবর্তী স্বীকার করে বলেন, র‍্যাগিংয়ের ঘটনায় আমি উপস্থিত ছিলাম। এছাড়াও স্বীকার করে বলেন ওই সময়ে শফিউল্লাহ, শরীফ শেখ শেহান, কান্ত বড়ুয়া, সাব্বির হোসেন, সঞ্চয় বড়ুয়া, মুকুল, তরিকুল সেখানে ছিলেন।

ইবি থানার ডিউটি অফিসার এস আই মাসুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন আমাদের কাছে ছয়জনকে নিয়ে এসেছে। পরে তাদেরকে থানায় পুলিশি হেফাজতে নিরাপদে রাখা হয়েছে। আগামীকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

প্রতিনিধি/এসএস