images

সারাদেশ

হোগলা পাতায় স্বাবলম্বী হচ্ছেন নারীরা, পণ্য যাচ্ছে ২৮ দেশে

জেলা প্রতিনিধি

১৮ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১৬ পিএম

নীলফামারী জেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার উত্তরে খোকশাবাড়ি ইউনিয়ন। এক সময় দরিদ্রতা ছিল এ এলাকার মানুষের জীবনসঙ্গী। ঘরের কাজ শেষ করার পর অবসর সময় কাটতেন নারীরা। কিন্তু বর্তমানে বদলে গেছে সেই গ্রামগুলোর চিত্র। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে তৈরি হচ্ছে হোগলাপাতার হস্তশিল্প। তাদের হাতে তৈরি পণ্য ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিশ্বের অন্তত ২৮টি দেশে যাচ্ছে। সংসারের কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ কারুশিল্পের কাজ করার সুযোগ থাকায় গ্রামের অধিকাংশ নারী ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্পের সঙ্গে নিজেদের সম্পৃক্ত করে আজ স্বাবলম্বী।

Nilphamari_Pic_(11)

হোগলাপাতার রয়েছে নানা ধরনের নাম। বাংলায় হোগল, হোগলাপাতা ও ধারী পাতা নামে পরিচিত হলেও ইংরেজিতে এটাকে ক্যাট টেইল বা বিড়ালের লেজ বলা হয়। সাধারণত ৫ থেকে ১২ ফুট উচ্চতার এই হোগলাপাতা রোদে শুকিয়ে বিশেষ কায়দায় এই পাতা পেঁচিয়ে প্রথমে দড়ি বানানো হয়। হোগলাপাতা আড়া আড়ি ও দড়ি দিয়ে পেঁচিয়ে পছন্দের কারুপণ্যের রূপ দেওয়া হয়। মাপ ও সাইজ ঠিক রাখার জন্য অধিকাংশ কারুপণ্য বানাতে লোহা ও জিআই তারের ডাইস ব্যবহার করা হয়।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(1)

হোগলা পাতাসহ এসব পণ্য পৌঁছে দেওয়ার কাজটি করে কারখানা। এরপর পণ্য তৈরির জন্য দেওয়া হয় নিদিষ্ট সময়। তৈরি হয়ে গেলে কারখানা থেকে কর্মী এসে পণ্য সংগ্রহ করেন নারীদের কাছ থেকে। প্রাকৃতিক উপকরণ দিয়ে তৈরি এসব কারুশিল্প পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বৈদেশিক বাজারে এর চাহিদাও ব্যাপক। এখানকার তৈরি কারুপণ্য সাপ্লায়ারদের হাত হয়ে আমেরিকা, কানাডা, চীন, জাপান, জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়াসহ প্রায় ২৮টি দেশে রফতানি হয়।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(3)

হোগলাপাতা পণ্য তৈরি করে স্বাবলম্বী নারী রোকসানা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমার স্বামী মানুষের বাসায় কাজ করে। আগে স্বামীর একদিন কাজ না থাকলে কী খাব সেই চিন্তায় থাকতে হতো। এখন আল্লাহর রহমতে ভালো আছি। সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি সন্তানের চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারি।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(4)

রিকশা চালক  স্বামীর পাশে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেন জোসনা বেগম। তিনি ঢাকা মেইলকে বলেন, আগে সবসময় সংসারে অভাব লেগে থাকতো। এসব কাজ শুরু করার পর সংসারের অভাব দূর হওয়ার পাশাপাশি সন্তানের চাওয়া পাওয়া পূরণ করতে পারি। এসব পণ্য বানানোর কাজ শিখতেও বেশি সময় লাগে না। কাজও সহজ। আর কাজের জন্য বাইরে যেতে হয় না। বাড়িতে বসে কাজ করা যায়।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(5)

মর্জিনা বেগম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা এমন একটা কাজ করতে পারব যা বাড়িতে বসে করা যাবে এবং টাকাও পাওয়া যাবে আমরা তা কল্পনাও করিনি কোনোদিন। তবে এই কাজটা আসার পর আমার সংসারের পাশাপাশি অনেক পরিবার সচল হয়েছে। না হলে কত মানুষ অভাবে না খেয়েও কাটাতে হতো । খুব ভালো একটা কাজ। কাজ করতে কোনো রকম কষ্টও মনে হয় না।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(6)

আর্টিশিয়ান হাউজ বিডি. লিমিটেডের প্রোডাকশন ম্যানেজার হামিদুল হক মোল্লা বলেন, আমাদের যে মালগুলো তৈরি হয় এর কাঁচামাল নোয়াখালী থেকে নিয়ে আসি। নিয়ে আসার পর গ্রাম এলাকায় যারা কাজ করছেন তাদের হাতে পৌঁছানো হয়। কাজ হয়ে গেলে আমাদের টিম আছে তারা চেক করে নিয়ে আসে। কোনো সমস্যা হলে সেটা সমাধান করে ঢাকা পাঠানো হয়। সেখান থেকে বিভিন্ন দেশে যায়। বেশিরভাগ যায় ইউরোপের দেশগুলোতে।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(9)

হোগলাপাতা খুব সহজেই পচনশীল হওয়ায় এতে পরিবেশ দূষণের কোনো সম্ভাবনা নেই। বিশ্বজুড়ে আজ পরিবেশ দূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় জনপ্রিয় হয়ে উঠছে সি-গ্রাস বা সমুদ্রের তীরের ঘাস অর্থাৎ হোগলাপাতা, তালপাতা, খেজুরপাতা ও গোলপাতা জাতীয় জিনিসের তৈরি পণ্য। পরিবেশবান্ধব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার সম্প্রসারিত হওয়ায় হোগলাপাতার পণ্যের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

thumbnail_Nilphamari_Pic_(12)

বিসিক জেলা কার্যালয়ের উপ-ব্যবস্থাপক  নুরেল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, হোগলাপাতার পণ্য তৈরির মাধ্যমে গ্রামের অনেক নারী স্বাবলম্বী হচ্ছে ৷ অন্য কোম্পানির কাজ করার পাশাপাশি, তারা যদি কেউ নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে কাজ শুরু করতে চায় আমার সাধারণ ঋণের ব্যবস্থা করব, এবং যে পণ্যগুলো তৈরি করবে সেগুলো আমাদের বিভিন্ন মেলায় প্রদর্শনের সুযোগ করে দেওয়া হবে। এর পাশাপাশি আমাদের কাছে কিছু বায়ার থাকে আমরা তাদের সঙ্গে কানেক্টেড করে দেব। আমরা যথেষ্ট সহযোগিতা করব। আর এই হোগলা পাতার পণ্য তৈরি কারখানাগুলোর উদ্যোক্তাদের কোনো সহযোগিতা প্রয়োজন হলে বিসিক সবসময় তাদের পাশে থাকবে।

প্রতিনিধি/এসএস