জেলা প্রতিনিধি
১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫০ এএম
শুধুমাত্র পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় প্রতিবছর ফসল উৎপাদনে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, খাল এবং নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৫১০ হেক্টর কৃষিজমি বছরে সাত - আট মাস থাকে পানির নিচে। যার ফলে তিন ফসলি জমি হওয়া সত্ত্বেও সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে। বাকি সময় এসব ফসলি জমি থাকে পানির নিচে। এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করলেও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
স্থানীয় ভুক্তভোগী চাষিদের দাবি, এখানকার পানি নিষ্কাশন করা গেলে একই জমিতে বোরো ও আমন এই দুই মৌসুমে আরও প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হতো। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ( প্রতিকেজি ৩৩ টাকা দরে)। তবে আধুনিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের চাষাবাদ করলে আরও বেশি মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: কৃষকের কাঁচা ধান খাচ্ছে গরু
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মোট ১৮ হাজার ২৪০ হেক্টর আবাদি জমির মধ্যে প্রায় ৫১০ হেক্টর জমিতে বছরে সাত - আট মাস হাঁটুর ওপর সমান পানি জমে থাকে। তার মধ্যে নন্দলালপুর ইউনিয়নে ১৫০, সদকীতে ১০০, জগন্নাথপুরে ৮০, শিলাইদহে ৭০, যদুবয়রাতে ৬০ এবং চাপড়া ইউনিয়নে ২০ হেক্টর। সেখানে কৃষকরা বছরে মাত্র একবার ধান চাষ করেন। ফলে প্রতি বছর প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এতে কৃষকরা পড়েছেন ক্ষতির মুখে। আর উপজেলায় খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। এছাড়া বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকা, খাল এবং নালা দখল করে স্থাপনা নির্মাণসহ ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করার কারণে এই উপজেলার প্রায় ৫১০ হেক্টর কৃষিজমি বছরে সাত - আট মাস থাকে পানির নিচে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদের ( ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান খোকন বলেন, খালজুড়ে কেউ বাড়ি করেছে। কেউ পুকুর খনন করেছে। সেজন্য কয়েক হাজার বিঘা জমি প্রায় সারা বছরই পানির নিচে থাকে। ফসল হচ্ছে না। তিনি খাল খননের জন্য উপজেলা প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছেন। তবে কোনো লাভ হয়নি। এই সমস্যা সমাধানে বিভিন্ন দপ্তরে ঘোরাঘুরি করলেও নেওয়া হয়নি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ।
আরও পড়ুন: সবুজ ক্ষেতে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন
পরিকল্পিত নালার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ কুমার দাস। তিনি বলেন, পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় এ উপজেলায় প্রায় ৫১০ হেক্টর কৃষি জমি বছরে সাত - আট মাস থাকে পানির নিচে। সেখানে কৃষকরা বছরে একবার শুধু রবি মৌসুমে প্রায় দুই হাজার ৮০৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করে।
তবে বোরো ও আমন মৌসুমে চাষাবাদ করলে আরও প্রায় ছয় হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদন করা সম্ভব হতো। যার বাজার মূল্য প্রায় ১৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা ( প্রতিকেজি ৩৩ টাকা দরে)। আর আধুনিক পদ্ধতিতে হাইব্রিড জাতের চাষাবাদ করলে আরও বেশি মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব বলে তিনি জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) এস এম মিকাইল ইসলাম বলেন, পরিকল্পিতভাবে খাল খনন বা নালার জন্য ইতোমধ্যে বিএডিসির সঙ্গে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। তালিকা চলছে। খুব দ্রুতই কার্যক্রম শুরু করা হবে।
প্রতিনিধি/ এমইউ