images

সারাদেশ

প্রেম-সংক্রান্ত দ্বন্দ্বে সুমন হত্যা, প্রেমিকাসহ তিনজন গ্রেফতার

জেলা প্রতিনিধি

১২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৪ পিএম

শেরপুরে প্রেমঘটিত কারণে কলেজছাত্র সুমন মিয়ার (১৭) হত্যাকাণ্ডের ঘটনা উন্মোচন হয়েছে। সুমন মিয়া এক সপ্তাহ নিখোঁজ থাকার পর, সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে শহরের সজবরখিলা এলাকার একটি বাড়ির উঠান থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই হত্যাকাণ্ডে সুমনের প্রেমিকা আন্নি আক্তার (১৯) ও তার প্রেমিক রবিন (১৯)সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, সুমনকে হত্যা করার মূল কারণ প্রেমসংক্রান্ত দ্বন্দ্ব।

নিহত সুমন শেরপুর শহরের বারাকপাড়া নিমতলা এলাকার কৃষক মো. নজরুল ইসলামের ছেলে এবং শেরপুর সরকারি কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র ছিলেন। অপরদিকে, আন্নি আক্তার শহরের বাগরাকসা কাজীবাড়ী পুকুরপাড় এলাকার শিক্ষক মো. আজিম উদ্দিনের মেয়ে এবং রবিন শহরের সজবরখিলা এলাকার উত্তরা হাসপাতালের পিছনের গলির মো. ফোরকান পুলিশের ছেলে।

এলাকাবাসী জানায়, সুমন ও আন্নির পরিচয় একটি পরীক্ষাকেন্দ্রে। তাদের সম্পর্ক শুরু হয় এবং প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু আন্নি বয়সে সুমনের চেয়ে বড় হওয়া সত্ত্বেও, তার সাথে প্রেম চলাকালীন সময়েই আন্নি স্থানীয় রবিন নামের এক ছেলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। রবিন ও আন্নির সম্পর্ক গভীর হয়ে উঠলে সুমন তাদের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ান।

এদিকে, ৪ নভেম্বর, সোমবার, আন্নি সুমনকে বিয়ের কথা বলে ডেকে নিয়ে আসে। এরপর থেকে সুমনের কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। সুমনের পরিবার প্রথমে সাধারণ ডায়েরি এবং পরে অপহরণের অভিযোগে মামলা দায়ের করেন। মামলায় আন্নি ও তার বাবা আজিম উদ্দিন মাস্টারসহ কয়েকজনকে আসামি করা হয়।

পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে এবং মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুমনের সর্বশেষ অবস্থান ময়মনসিংহে শনাক্ত করে। পুলিশ প্রথমে আন্নি ও তার বাবাকে গ্রেফতার করে, কিন্তু সুমনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে রবিনকে ময়মনসিংহ থেকে গ্রেফতার করা হয়। রবিন জিজ্ঞাসাবাদে সুমনকে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং জানান যে, তাকে শহরের সজবরখিলা এলাকার আন্নির বাড়ির উঠানে মাটিচাপা দিয়ে রাখা হয়েছে। পুলিশ রবিনের দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে সুমনের মরদেহ উদ্ধার করে।

স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আহম্মেদ বলেন, "এমন ঘটনা আমাদের সজবরখিলায় আগে কখনো হয়নি। মেয়েটির প্রেমের বলি হয়েছে সুমন। শুনেছি, সুমনের থেকে আন্নি বয়সে বড়। আমরা তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচার চাই।"

সুমনের বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, "আমার ছেলেকে খুন করা হয়েছে। আন্নি ও তার প্রেমিক মিলে আমার ছেলেকে খুন করেছে। আমি খুনিদের কঠিন শাস্তি চাই।"

শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, "এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত আমরা গুরুত্ব সহকারে পরিচালনা করেছি। মুঠোফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে সুমনের সর্বশেষ অবস্থান ময়মনসিংহে পাওয়ার পর, আমরা দ্রুত অভিযানে নামে। প্রেমঘটিত দ্বন্দ্বের কারণে এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। ইতিমধ্যে তিনজন আসামি গ্রেফতার হয়েছে। তদন্তে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে, তবে তাদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।"

এ ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ এবং শোকের সৃষ্টি হয়েছে।

প্রতিনিধি/এইউ