নিজস্ব প্রতিবেদক
১০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩০ পিএম
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী রইছ উদ্দিন শ্যামল, যিনি বাবু নামে পরিচিত, একসময় ভাড়াবাড়িতে পরিবার নিয়ে কঠোর পরিশ্রম করতেন। কিন্তু বর্তমানে ময়মনসিংহ শহরে তার তিনটি বাড়ি এবং একটি টয়োটা প্রিমিও প্রাইভেট কার রয়েছে। প্রথম স্ত্রীর নামে তিনি নগরীতে একটি পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যার মূল্য প্রায় ২ কোটি টাকা। আর দ্বিতীয় স্ত্রীর জন্য তিনি একটি সাততলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন, যেখানে তিনি নিজেও বসবাস করছেন।
প্রথমে সরকারি বিদ্যালয়ের পিয়নের চাকরি করা বাবু, পরে মাউশি অফিসে কম্পিউটার অপারেটর পদে পদোন্নতি পান। এরপর থেকেই তিনি শিক্ষকদের এমপিওভুক্তির ফাইলগুলোতে দুর্নীতি শুরু করেন। বিভিন্ন ত্রুটির সুযোগ নিয়ে, তিনি শিক্ষকদের কাছ থেকে ১০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নেন। বর্তমানে তিনি ময়মনসিংহ গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুলের উচ্চমান সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন।
বাবুর জমি ও বাড়ির মালিকানার বিষয়ে স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, ময়মনসিংহ শহরের গোয়াইলকান্দি এলাকায় তার প্রথম স্ত্রীর নামে নির্মিত পাঁচতলা বাড়িটি ৭-৮ বছর আগে ২ কোটি টাকায় নির্মিত হয়। বাদেকল্পা এলাকায় ৬ শতাংশ জমিতে নির্মিত সাততলা বাড়ির তৃতীয়তলায় তার দ্বিতীয় স্ত্রী বসবাস করছেন। এর পাশেই ১৩ শতাংশ জমিতে একতলা বাড়ি এবং আরও দুটি প্লট রয়েছে বাবুর নামে।
বাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে— শ্বশুরের জায়গা কিনে স্ত্রীর নামে বাড়ি বানালেও, শ্বশুরের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। বাবু তার শ্বশুর নজরুল ইসলামের কাছ থেকে ৪ শতাংশ জমি কিনে পাঁচতলা বাড়ি নির্মাণ করেন, তবে শ্বশুরের দাবি অনুযায়ী, নিচতলার অংশ তাকে দেওয়া হয়নি। শ্বশুর নজরুল বলেন, ‘‘আমি যখন তাকে চাকরি পাইয়ে দিয়েছি, তখন আমাদের পরিবার ছিল খুব কষ্টে। বাবু বলেছিলেন, জমি বিক্রির পর নিচতলা তিনি আমাকে দেবেন, কিন্তু সাদা স্ট্যাম্পে সই নিয়ে পরে তিনি কথা রেখেননি।’’
স্থানীয় বাসিন্দা নূরুল আলম বলেন, ‘‘বাদেকল্পা এলাকায় সাততলা বাড়ি প্রথমবারের মতো বাবু নির্মাণ করেছেন। তিনি পিয়ন পদে চাকরি করেন, তবে কীভাবে এত সম্পদের মালিক হলেন? শুধু সাততলা বাড়ি নয়, পাশেই আরেকটি একতলা বাড়ি ও কয়েকটি প্লট রয়েছে। সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকায় ৫ শতাংশ জমি বিক্রি করেছেন তিনি।’’
এছাড়া, মাউশি অফিসে কর্মরত এক শিক্ষক জানিয়েছেন, বাবুকে এমপিও ফাইল দ্রুত সম্পন্ন করার জন্য তাকে ১ লাখ টাকা দিতে হয়েছে। টাকার বিনিময়ে ফাইলটির সব কাজ দ্রুত হয়ে যায়।
বাড়ি ও গাড়ির মালিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে বাবু বলেন, ‘‘কত সাংবাদিক এসেছেন, কিছুই হয়নি, আর কিছু হবে না। দুদক আমাকে ডেকেছিল, কিন্তু আমি তাদের কাছে সব হিসাব পরিষ্কার দেখিয়েছি, তাই আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। এসব সম্পত্তি আমার বাবার, আর বাবার মানে আমার, আমি তার একমাত্র ছেলে।’’
মাউশি ময়মনসিংহ অঞ্চলের উপ-পরিচালক রওশন আরা খান বলেছেন, ‘‘সম্পদ লুকানোর কোনো সুযোগ নেই। যদি বাবু সরকারী সম্পদের বিবরণী ফরম পূরণ করেন, তা হলে তার সব কিছু সামনে চলে আসবে। যদি তা অস্বাভাবিক মনে হয়, তবে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
এইউ