images

সারাদেশ

সুবিধা বঞ্চিত আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের মানবেতর জীবনযাপন

জেলা প্রতিনিধি

০৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১২ পিএম

বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে আউটসোর্সিং, ডেইলি বেসিস কর্মচারীরা সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। অনেক সময় ১০ মাসেও তাদের বেতন হয় না।

নারী কর্মীদের মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান থাকলেও তা পাওয়া যায় না বরং কখনও কখনও বিভিন্ন হেনস্তার শিকারও হন। এমন মানবেতর জীবনের কথা তুলে ধরে বৈষ‌ম্যের প্রথা বাতিলের দাবি জানান তারা।

বিভিন্ন সময় জাতীয় প্রেসক্লাবসহ জেলা-উপ‌জেলায় গোলটেবিল বৈঠক, মানববন্ধন ও অবস্থান কর্মসূচিতে তা‌দের জাতীয়কর‌ণের দাবি তু‌লে ধ‌রেন। তা‌দের দাবি জাতীয়করণ হ‌লে পরিবার নি‌য়ে দু‌বেলা দুমু‌ঠো ভাত খে‌তে পার‌বে। অক্লান্ত প‌রিশ্রম করার প‌রেও ঠিক মতো পা‌চ্ছেন না বেতন ভাতা। ভারাক্রান্ত মনে এসব কথা ব‌লে‌ছি‌লেন পিরোজপুরের না‌জিরপুর উপ‌জেলার এল‌জিইডির প্রকল্পে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আমিনুল ইসলাম।

আরও পড়ুন

সিন্ডিকেট ভাঙতে ঝালকাঠিতে কেনা দামে সবজি বিক্রি

তি‌নি আরও জানান, গত ১৭ আগস্ট ও ১৯ অক্টোবর সারা দেশব‌্যাপী আউট‌সো‌র্সিং এ নি‌য়োগ প্রাপ্ত বি‌ভিন্ন দফতরে কর্মরত প্রায় লক্ষা‌ধিক জনবল নি‌য়ে জাতীয়কর‌ণের দাবিতে গিয়ে প্রধান উপ‌দেষ্টা বরাব‌রে এক‌টি স্মারকলিপি  প্রদান ক‌রি। আমরা বৈষ‌ম্যের শিকার হ‌চ্ছি। সরকা‌রি নি‌য়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে কাজ করে, আমা‌দেরও একই কাজ কর‌তে হয়। বরং তা‌দের তুলনায় আমা‌দের দ্বারা বে‌শি কাজ করে নেওয়া হয়। দফতর, অধিদফতর ও পরিদফতরে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োজিত আমরা সবাই এদেশের  মানুষের মৌলিক চাহিদা সেবা বাস্তবায়নে নিরলসভাবে সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করে আমরা স্ব-স্ব কাজে সুনিপুণ কলা-কৌশল ও দক্ষতা অর্জন করেছি। তারপ‌রেও আমা‌দের ন‌্যায‌্য অধিকার থে‌কে ব‌ঞ্চিত হ‌চ্ছি। কোনো উৎসব ভাতা বা বোনাস পাই না। নিয়মিত বেতন ভাতা পর্যন্ত পাই না। সরকারকে আমাদের জাতীয়করণ করার জোর দাবি জানাই।

এলজিইডি আউটসোর্সিং পরিবারের কেন্দ্রীয়   সমন্বয়ক আব্দুর রাকিব সনেট জানান, আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের নিয়োগ দেওয়া হয় আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বিধিমালা অনুসরণ করে। যা স্বৈরাচার সরকার কর্তৃক প্রণিত একটি বর্বর অন্ধকার আইন। যেখানে ইংরেজদের রেখে যাওয়া কৃতদাস প্রথার প্রতিফলন ঘটেছে। এই কালো আইন স্বৈরশাসকের দোসরেরা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য প্রণয়ন করেছে। যার সুবিধা গণঅভ্যুত্থানের পরেও যদি দোসররা ভোগ করতে পারে তাহলে সারাদেশ লজ্জিত হবে।

IMG-20241103-WA0011

আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরতদের রাজস্ব করতে গেলে অনেক অর্থের প্রয়োজন ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হয়তো বিলম্ব হচ্ছে, কিন্তু একটি পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে- বাংলাদেশের সব দফতর, অধিফতর ও পরিদফতরে যত জনবল ঠিকাদার কর্তৃক টেন্ডারের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে তাদের নিজ গ্রেডের বেতন ভাতার পরেও সরকার ঠিকাদারদের জনবল সরবরাহ কমিশন বাবদ প্রতিমাসে প্রায় ১০০ কোটি টাকা প্রদান করছে। যা সরকারি কোষাগার হতে অপচয় হচ্ছে তথা দেশের মানুষের অর্থ স্বৈরাচারের দোসররা কৌশলে আত্মসাৎ করছে। এই কালো আইন বাতিল হলে সরকারের কোষাগারে বিশাল অঙ্কের টাকা জমা থাকবে। সে টাকার মূলধন ও লভ্যাংশ মিলে প্রতি বছর সরকারি কোষাগারে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকার অধিক জমা হবে। এই বিশাল অঙ্কের টাকাই অবহেলিত আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের জাতীয়করণে অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখবে। শুধু সৎ ইচ্ছা ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার প্রয়োজন। তাই অনতিবিলম্বে আউটসোর্সিং আইন-২০১৮ বাতিল করে কর্মরতদের বয়স শিথিল করে স্ব-স্ব পদে জাতীয়করণ করে জাতিকে এই বিশাল বৈষম্য থেকে মুক্তি দিন।

আরও পড়ুন

নদী ভাঙনের মধ্যেই পাবনার পদ্মায় আবারও বালু উত্তোলনের মহাকর্মযজ্ঞ

আরও একজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাব্বি মৃধা জানান, কিছু ছাত্র ও অভিভাবকেরা প্রশ্ন করে যে, এত জনবল রাজস্ব হলে নতুন নিয়োগ হবে না। তাদের উদ্দেশে জানাতে চাই, এই কালো আইন চালু থাকলে আপনি বা আপনার সন্তানকেও ডিজিটাল কৃতদাস হয়ে বাঁচতে হবে। কিন্তু এই কালো আইন বাতিল করে অবহেলিতদের রাজস্ব করলে প্রতিটি দফতরে সরকারি চাকরির অনেক বড় সংখ্যার নতুন পদ সৃজন হবে। তাতে দেশের মানুষ বেশি সেবা পাবে সেইসঙ্গে আগামী প্রজন্ম দাস প্রথা থেকে মুক্তি পাবে এবং সরকারি চাকরিতে যোগদানের বিশাল সুযোগ পাবে। কারণ খুবই স্বল্প সময়ের মধ্যে রাজস্বকৃত অনেক বয়স্ক জনবল অবসরে যাবে। তাই স্বৈরশাসকের দোসরদের প্রলোভনে ভুল বুঝে যৌক্তিক দাবির বিপক্ষে গিয়ে দেশের অবহেলিত ও আগামী প্রজন্মের ক্ষতি করবেন না। আর এই আউটসোর্সিংয়ে কর্মরতদের জাতীয় দাবি বাস্তবায়িত হলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশের সবার কাছে অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

প্রধান প্রকৌশলী স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) মো. আলি আখতার হোসেন জানান, উপর্যুক্ত বিষয়ের প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশতঘ অধিদফতরের বিভিন্ন প্রকল্পে আউটসোর্সিং ভিত্তিতে নিয়োগকৃত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কর্তৃক রাজস্ব খাতে স্থান্তরের জন্য দাখিল করা স্মারকলিপি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী অধিদফতরের সচিবকে জানিয়েছি।

প্রতিনিধি/এসএস