জেলা প্রতিনিধি
০১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪১ পিএম
চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার শ্রী শ্রী মেহের কালিবাড়িতে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব শ্যামাপূজা (কালীপূজা) ও দীপাবলি উৎসব উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লক্ষাধিক পুণ্যার্থীর আগমন ঘটেছে। এই উৎসব চলমান থাকবে চলতি নভেম্বর মাসজুড়ে।
এশিয়ার বৃহত্তম কালিবাড়ি হিসেবে পরিচিত এ ধর্মীয় পীঠস্থানে দীপাবলি উৎসবে প্রতিবছর কার্তিক মাসের অমাবস্যা তিথিতে পূজায় অংশ নিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ভক্তদের আগমন ঘটে থাকে।
বৃহস্পতিবার (৩১ অক্টোবর) বিকেল ৩টায় পূজার লগ্ন শুরু হয়ে শেষ হয় শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেল ৫টায় ।

এসময় ভক্তকুলের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠে গোটা এলাকা। দীপাবলী উৎসব উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কালিবাড়িতে প্রদীপ প্রজ্বালন করেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন ও পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আব্দুর রকিব।
দীপাবলি উৎসবকে ঘিরে প্রতি বছরের মতো কালিবাড়ি সংলগ্ন নিজমেহার পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে মাসব্যাপী মেলা বসেছে। স্থানীয়ভাবে যা কালিবাড়ি মেলা নামে পরিচিত।
মেলায় শিশুদের টমটম গাড়ি, নানা রঙের পুতুল, বেলুন থেকে শুরু করে খেলনার ড্রোন পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে। পাশাপাশি পাহাড়ি অঞ্চল থেকে আসা খাট, আলমারি, ড্রেসিং টেবিল, সোফা সেট, ডাইনিং টেবিল, ডিভানসহ নানা আসবাবপত্র রয়েছে।

এ ছাড়াও রয়েছে দৈনন্দিন ব্যবহার্য কাঠ-বাঁশ-বেতের তৈরি আসবাবপত্র ও মাছ ধরার সরঞ্জাম। গৃহস্থালি সামগ্রীর মধ্যে হাড়ি, পিড়ি, মালসা, জলচৌকি ব্লেন্ডার, প্রেশার কুকার, ইলেকট্রিক কেটলি থেকে শুরু করে ইনডাকশন চুলা পর্যন্ত রয়েছে।
দা, খন্তা, কুড়াল, কাস্তে, মাটির ব্যাংক, কাসা ও স্টিল এবং কাঁচের তৈজসপত্রসহ নানা ধরনের জিনস পাওয়া যাচ্ছে মেলায়। এছাড়া চটপটি-ফুচকা, তিলা, কদমা, নিমকিসহ রয়েছে হরেক রকমের খাবার।

পূজা দিতে আসা নোয়াখালীর সুবল দাস জানান, শক্তিরূপিণী, মঙ্গলময়ী দেবী কালীর পূজা দিতে তিনি প্রতিবছর সপরিবারে এখানে আসেন।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের অমিয় চক্রবর্তী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থেকে আসা লিটন সূত্রধর জানান, এটি সিদ্ধ পীঠস্থান, যা বাংলাদেশে অদ্বিতীয়।
কালিবাড়ির বাসিন্দা, শাহরাস্তি প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক স্বপন কর্মকার মিঠুন জানান, ৭০০ বছর আগে তৃতীয় জন্মে ঠাকুর সর্বানন্দ শবদেহের ওপর বসে কালি মাতার সাধন করেন এবং পৌষ সংক্রান্তির তিথিতে কালি মাতাকে ১০টি রূপে দর্শন লাভ করেন। এজন্য এটি দশ মহাবিদ্যা সিদ্ধ পীঠস্থান।

তিনি আরও জানান, এখানে মা কালির কোনো মূর্তি নেই। জিন বৃক্ষের বেদিতে ভক্তরা পূজা দিয়ে থাকেন।
শ্রী শ্রী মেহের কালিবাড়ি কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পূজা উদযাপন কমিটির সভাপতি নিখিল মজুমদার জানান, ৩০০ বছরের বেশি সময় ধরে এখানে এ উৎসব পালিত হচ্ছে। এখানকার মাসব্যাপী মেলা ধর্মীয় আচারের পাশাপাশি প্রাচীন লোকজ ঐতিহ্য বহন করে আসছে।
প্রতিনিধি/এসএস