জেলা প্রতিনিধি
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:৪২ পিএম
ধানের রাজ্য হিসেবে পরিচিত গাইবান্ধা। এ ফসল ঘরে তুলে মৌলিক চাহিদা পূরণ করেন এখানকার কৃষকরা। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মৌসুমে আবাদ করা হয় রোপা আমন ধান। ইতোমধ্যে ভালো ফলন ঘরে তোলার স্বপ্ন দেখছিলেন তারা। এরই মধ্যে প্রচণ্ড আঘাত হেনেছে ঘূর্ণিঝড় দানা। এই ঝড়ের প্রভাবে উঠতি ধানগাছ নুয়ে পড়েছে মাটিতে। এখন হেলে পড়া এই ধান কেটে খাওয়ানো হচ্ছে গরুকে। এ অবস্থায় কৃষকের চোখে-মুখে দেখা দিয়েছে হতাশার ছাপ।
শনিবার (২৭ অক্টোবর) সরেজমিনে গাইবান্ধা সদরসহ বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে দেখা গেছে - রোপ আমন ধানের ক্ষয়-ক্ষতির চিত্র। যেখানে ধানের শীষ পরিপক্ক হওয়ার কথা, সে মুহূর্তে নুয়ে পড়া ধানগাছ কেটে দেওয়া হচ্ছে গবাদিপশুর মুখে।
আরও পড়ুন: কৃষি কর্মকর্তার ওপর হামলার প্রতিবাদে গাইবান্ধায় মানববন্ধন
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘূর্ণিঝড় দানা’র প্রভাব পড়েছে ধানক্ষেতে। কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিসহ দমকা হাওয়ায় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে কৃষকদের কাঙ্খিত স্বপ্ন। ঝড়ো হাওয়ায় ধানক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, জীবন-জীবিকার জন্য গাইবান্ধার অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। চলতি রোপা আমন মৌসুমে খরা আর বন্যাসহ নানা প্রতিকূল অবস্থা পেরিয়ে এবার সাতটি উপজেলায় প্রায় এক লাখ ৩৩ হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক বাড়তি খরচে সেচ দিয়ে রোপণ করেছেন এই ধানচারা। ইতোমধ্যে এই ক্ষেতের ধান বড় হতে শুরু করেছে। কোথাও কোথাও তা পাকতেও দেখা গেছে। এ অবস্থায় গাইবান্ধায় প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড় দানা’র। এর ফলে গত দু’দিন ধরে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টিসহ বইছে দমকা হাওয়া। এ কারণে রোপা আমন ক্ষেত নুয়ে পড়েছে মাটিতে। যার ফলে অভাবনীয় ক্ষতির শঙ্কায় আছে কৃষকরা।
স্থানীয় কৃষক মফিজ উদ্দিন জানান, এ বছর তিনি এক একর জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। ইতোমধ্যে এই ক্ষেতে থোড় থেকে ধানের শীষ বড় হয়। এরই মধ্যে বৃষ্টি-বাতাসে তার ২৫ শতক ক্ষেতের ধান নুয়ে পড়েছে মাটিতে।। এসব ধানগাছ কেটে বিক্রি করছেন বাজারে। প্রতি আঁটি পাঁচ টাকা দামে বিক্রি করছেন। এতে প্রায় ১০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে এই কৃষকের।
আরও পড়ুন: আনারসের রাজ্যে কফি চাষ, শিক্ষকতা ছেড়েও সফল ছানোয়ার
ডিপটি সরকার নামের এক শিক্ষক বলেন, গৃহপালিত পাঁচটি গরুর খাদ্য সংকট থাকায় এনায়েতপুর বাজার থেকে ৫০টি কাঁচা ধানের আঁটি আড়াইশ টাকায় কিনেছি। এছাড়া আমার ক্ষেতে হেলে পড়া ধানগাছগুলো কেটেও গরুকে দিচ্ছি।
প্রাকৃতিক দুর্যোগে কৃষকের নুয়ে পড়া ধানগাছগুলো লজিং আপ (দাড়) করানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এতে করে কৃষকের তেমন ক্ষতি হবে না বলে জানান - উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবু তাহের মিয়া।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক খোরশেদ আলম বলেন, চলতি মৌসুমে এ জেলায় এক লাখ ৩৩ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের আবাদ হয়েছে। সম্প্রতি বৈরী আবহাওয়ার কারণে যে সব ক্ষেতের ধান হেলে পড়েছে সেগুলোর যাতে ক্ষতি না হয়, তা নিয়ে কৃষি কর্মকর্তারা মাঠপর্যায়ে কাজ করছেন।
প্রতিনিধি/ এমইউ