জেলা প্রতিনিধি
২৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:৫১ এএম
গাইবান্ধার কৃষকদের জন্য আধুনিক কৃষির এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হচ্ছে—বস্তায় আদা চাষ। একসময় সমতলে চাষাবাদ করে হতাশা আর মন্দার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেখানে এখন স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে কৃষকরা পাচ্ছেন নতুন আশার আলো। এই পদ্ধতি কেবল লাভজনক নয়, বরং সহজ ও কার্যকরীও। কৃষকরা এখন তাদের পতিত জায়গায় বস্তায় আদা চাষ করে দেখছেন নতুন ফলন আর মুনাফার সম্ভাবনা। এর ফলে কৃষির একটি নতুন ধারা শুরু হয়েছে, যা শুধু কৃষকদের জীবনই বদলাচ্ছে না, পুরো অঞ্চলের অর্থনীতিতে নতুন রূপ দিচ্ছে।
গাইবান্ধার মাঠে এখন চাষাবাদের দৃশ্যগুলো নতুন করে প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে। চলুন, জেনে নেওয়া যাক এই আকর্ষণীয় চাষ পদ্ধতির বিবরণ ও কৃষকদের অভিজ্ঞতা।
স্মার্ট প্রযুক্তির প্রভাব
গাইবান্ধা সদর উপজেলার খোলাহাটি ইউনিয়নের হাসেম বাজার এলাকা থেকে শুরু করে জেলার বিভিন্ন স্থানে সম্প্রতি দেখা গেছে বস্তায় আদা চাষের চিত্র। কৃষকরা এখন বস্তায় আদা চাষের দিকে ঝুঁকছেন, যা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী গত বছর ৬৬ হাজার ৭৫টি বস্তায় আদা চাষ হয়েছিল, এবার তা বেড়ে ৯৭ হাজার ৫৮৮ বস্তায় পৌঁছেছে। এটি নির্দেশ করে যে, কৃষকরা এই নতুন পদ্ধতি গ্রহণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
খরচ ও লাভের দিক
এই পদ্ধতিতে আদা চাষের খরচ অন্যান্য ফসলের চাষের তুলনায় অনেক কম। রোগবালাইয়ের ঝুঁকি কম থাকায় এবং পরিচর্যার খরচও তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় কৃষকরা এখন বেশ লাভবান হওয়ার আশা করছেন। স্থানীয় কৃষক সাইদুর রহমান জানান, তিনি ৪০০টি বস্তায় আদা চাষ করেছেন এবং এর থেকে লাভবান হওয়ার আশা করছেন। তিনি বলেন, ‘সারের খালি বস্তা সংগ্রহ করেছি এবং বেলে দো-আঁশ মাটি কিনেছি। বস্তায় জৈব, রাসায়নিক ও কম্পোস্ট সার মিশিয়ে ২-৩টি আদা রোপণ করছি।’
সেচ ও পরিচর্যার সুবিধা
বস্তায় আদা চাষের আরেকটি সুবিধা হলো, এটি খুব সহজেই বাড়ির আশেপাশে, আঙিনা, ফলবাগান বা গাছের নিচে ছায়াযুক্ত স্থানে করা যায়। ফলে, কৃষকরা নিজেদের কাজের পাশাপাশি এই চাষের পরিচর্যা করতে পারেন। শাহারুল প্রামাণিক নামের একজন কৃষক বলেন, ‘আমরা স্থানীয় কৃষকদের এই পদ্ধতিতে উৎসাহিত করছি, যাতে তারা নিজেদের অপ্রয়োজনীয় জায়গাগুলো ব্যবহার করতে পারে।’
সরকারি সহযোগিতা
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক খোরশেদ আলম জানান, বস্তা পদ্ধতি আদা চাষে খরচ কম হয় এবং পতিত জমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করে। তিনি বলেন, ‘বাড়ির আশপাশ, আঙিনা ও বিভিন্ন বাগানে গাছের নিচে ছায়াযুক্ত পতিত জমিতে সহজেই বস্তায় আদা চাষ করে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন। আমরা কৃষকদের সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করছি।’
কৃষকদের উদ্ভাবনী ভাবনা
এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকরা শুধু নিজেদের চাষাবাদে সফল হচ্ছেন না, বরং নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাও উন্নত করছেন। অনেক কৃষক এখন বাণিজ্যিকভাবে আদা চাষ করতে শুরু করেছেন, যা তাদের পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি স্থানীয় বাজারেও সাড়া ফেলছে।
গাইবান্ধায় বস্তায় আদা চাষের এই উদ্যোগ শুধুমাত্র একটি কৃষি পদ্ধতির পরিবর্তন নয়, এটি কৃষকদের জীবনে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করছে। কৃষকরা এখন নিজেদের কঠোর পরিশ্রমের ফল পেতে শুরু করেছেন এবং এই নতুন পদ্ধতির মাধ্যমে তারা নিজেদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হচ্ছেন।
এই পরিবর্তন শুধু স্থানীয় বাজারকেই সজীব করছে না, বরং গাইবান্ধার কৃষি অর্থনীতির জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহায়তা ও কৃষকদের উদ্ভাবনী চিন্তার সংমিশ্রণে গড়ে উঠছে এক সমৃদ্ধ কৃষি সংস্কৃতি। গাইবান্ধার কৃষকরা এখন নতুন উদ্যমে, নতুন আশায় এগিয়ে যাচ্ছেন—যা নিশ্চিতভাবেই বাংলাদেশের কৃষি ক্ষেত্রের জন্য একটি সুখকর পরিবর্তন বয়ে আনবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্ট সবাই।
প্রতিনিধি/একেবি