জেলা প্রতিনিধি
১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৫:০৫ পিএম
‘আন্দোলন থেকে না ফেরা মেয়েটা আমার ইন্টার পাস করছে। কিন্তু আফসোস স্বাধীন দেশে নিজের রেজাল্টটা আর দেখতে পারল না আমার মা।’
ঢাকার সাভারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত নাফিসা হোসেন মারওয়ার বাবা আবুল হোসেন এভাবেই কান্না করে মেয়ের এইচএসসির ফলাফলের কথা জানাচ্ছিলেন।
১৭ বছরের নাফিসা চলতি বছর গাজিপুরের টঙ্গী এলাকার শাহাজউদ্দিন সরকার স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছিলেন। আজ ফলাফল ঘোষণার পর দেখা যায় জিপিএ ৪.২৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি।
নাফিসার বাবা আবুল হোসেন পেশায় একজন চা দোকানি। নাফিসা ও তার ছোট বোন রাইসাকে নিয়ে বাবা আবুল হোসেন থাকতেন টঙ্গীর এরশাদনগর বস্তি এলাকার আট নাম্বার ব্লকে একটি ভাড়া বাড়িতে। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতা ফেরাতে নাফিসার মা কুলসুম বিদেশে পাড়ি জমান কয়েক বছর আগে।
মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবুল হোসেন বলেন, ‘মেয়ের লেখাপড়ায় যাতে ব্যঘাত না ঘটে সেজন্য তাকে কখনও রান্না করতে দিতাম না। নিজের ছোট্ট চায়ের দোকানে যা আয় হতো পুরোটাই মেয়েদের পড়াশুনা আর দেখভালে খরচ করেছি। ১৮ জুলাই আমাকে না বলেই নাফিসা উত্তরায় ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়। পরে প্রতিবেশীদের কাছে বিষয়টি জানতে পেরে আমি মেয়েকে বাধা দেই।
কিন্তু মেয়ে আমাকে ফাঁকি দিয়ে আগস্টের ৩ তারিখ সাভারে তার মামার বাসায় বেড়াতে যায়। নাফিসার স্কুল সাভারে হওয়ায় সেখান তার অনেক বন্ধু-বান্ধবী ছিল। তাদের সঙ্গেই আমার মেয়ে সাভারে আন্দোলনে যোগ দিয়ে গুলিতে শহীদ হয়েছে। কিন্তু একটাই কষ্ট, যেই স্বাধীনতার জন্য আমার মেয়েটা প্রাণ দিল সেই স্বাধীন দেশেই আমার মেয়ে তার পরীক্ষার রেজাল্ট দেখে যেতে পারেনি।
![]()
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনরত অবস্থায় বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয় নাফিসা। পরে তার সঙ্গে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরা আহত নাফিসাকে উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন এই অকুতোভয় বীর কন্যা। পরে খবর পেয়ে নাফিসার বাবা হাসপাতাল থেকে মেয়ের মরদেহ নিয়ে এসে টঙ্গীর এরশাদনগর এলাকার কবরস্থানে দাফন করেন।
প্রতিনিধি/এসএস