জেলা প্রতিনিধি
৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ পিএম
আদিবাসী পরিবারকে উচ্ছেদের হুমকি এবং স্থানীয়দের জমি হাতিয়ে নেওয়াসহ নানা অভিযোগের পর এবার রাতের আঁধারে অন্যের পুকুরের মাছ তুলে বিক্রি করেছেন ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত আব্দুর রশীদ ও তার ভাই মো. শহীদুল ইসলাম।
সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে পাবনার ভাঙ্গুড়া থানার খানমরিচ ইউনিয়নের চন্ডিপুর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী মো. ইয়াহিয়া ও তার পরিবারের প্রায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে। তাদের দাবি, ১৭ বিঘার ওই পুকুরটিতে অন্তত ১০০ মন মাছ ছিল। যার অধিকাংশই তুলে বিক্রি করে দিয়েছেন রশীদ ও তার ভাই। তাদের সহায়তায় রয়েছে আওয়ামীপন্থী গ্রাম্য দুই মোড়ল হাচেন ও বক্কার।
বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে ভাঙ্গুড়া থানা, ইউএনও ও থানাধীন সেনা ক্যাম্প বরাবর অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবার। অভিযোগে বলা হয়, ১৭ বিঘার পুকুরটির অধিকাংশ মালিকানা (প্রায় ১০ বিঘা) পরলোকগত মো. আজগার আলীর ২ সন্তান ও মেয়েদের। বাকি ৭ বিঘার মধ্যে সাড়ে ৪ বিঘা স্থানীয় গ্রামবাসীর এবং সোয়া ২ বিঘার দুই মালিক আব্দুর রশীদ ও তার ভাই। এই দুই বিঘার ক্ষমতাবলেই পুকুর কাটার দেড় বছরের মাথায় দখলে নিয়ে নেন রশীদ ও তার ভাই শহীদুল ইসলাম।
ভুক্তভোগীর অভিযোগ, পুকুরটির দখল নিতে এর আগে গত ৩ আগস্ট পাবনা-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মকবুল হোসেনের ছেলে ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম হাসনায়েন রাসেলের বাসায় গোপন বৈঠক করেন রশীদ। ঘুষ হিসেবে সেদিন ওই বাড়িতে ২৮ হাজার টাকার মাছও নিয়ে যান রশীদ। সিদ্ধান্ত হয়—পুকুর দখল শেষে মোটা অংকের টাকা লেনদেনের। কিন্তু ওই চুক্তির দু’দিন পর সরকার পতন হওয়ায় তা আলোর মুখ দেখেনি। মূলত সেই কাজটিই সরকার পতনের পর বিএনপি নেতা ভাইয়ের সহায়তায় করলেন রশীদ।
ঘটনায় ভুক্তভোগী ইয়াহিয়া বলেন, আমি গত ৩ দফায় ধার-ধেনা করে এই পুকুর সাজিয়েছি, কিন্তু প্রতিবারই রশীদ এটি ভেঙে গ্রাস করে নিয়েছেন। আমি এর কঠোর ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই, যেন ভবিষ্যতে সে অন্যের জমি-পুকুর নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সাহস না পায়।
ইয়াহিয়া আরও বলেন, পুকুর কাটার ২ বছরের মাথায় গ্রাম্য নেতাদের মাধ্যমে চাপ দিয়ে আমাকে এখান থেকে বের করে দেওয়া হয়। সে সময় লিজ বাবদ প্রতিবছর টাকা দেওয়ার কথা থাকলেও গত ১৪ বছরে এক টাকায় দেয়নি রশীদ। শুধু লিজের এই টাকা (প্রচলিত নিয়মে ২০ হাজার) ধরলেও পুরো এই সময়ে রশীদের কাছ থেকে তার পাওনা ১ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। সুতরাং আমি অবৈধ উপায়ে আজকের মাছ ধরা এবং গত ১৪ বছরের ক্ষতিপূরণ চাই।
এর আগে রশীদর বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করার হুমকির অভিযোগ উঠে। পরে দিশা না পেয়ে পরিবারটি মামলা করে, যা বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এর বাইরেও রশীদের বিরুদ্ধে জাল দলিল বানিয়ে অন্যের জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে। এসব মিলিয়ে বর্তমানে তার জমির পরিমাণ দাড়িয়েছে দুই’শ বিঘার ওপরে। এত জমি থাকার বিষয়টি রশীদ নিজেও স্বীকার করেছেন, যদিও উৎসের বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে রাজি হননি তিনি।
সার্বিক বিষয়ে আব্দুর রশীদ বলেন, পুকুরটি এক সময় আমার অধীনে ছিল। তাই আমিই এর মালিক। মাছ কে দিল, সেটা পরের বিষয়। এ সময় পুকুরে তার কত বিঘা জমি রয়েছে, এমন প্রশ্ন করলে উত্তর এড়িয়ে যান তিনি।
ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নাজমুল হক বলেন, অভিযোগটি শুনেছি। তদন্ত সাপক্ষে করে শিগগিরই দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাঙ্গুড়া থানার ইউএনও মোছা. নাজমুন নাহার জানান, অভিযোগটি পেয়েছি। কিন্তু বিষয়টি পুরো না জেনে মন্তব্য করতে পারছি না। উভয়পক্ষকে ডেকে বিষয়টি সুরাহা করা হবে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/একেবি