images

সারাদেশ

পঞ্চগড়ে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষ, আহত ১৪

জেলা প্রতিনিধি

১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:৪৫ এএম

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সিপাইপাড়া বাজারে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ১৪ জন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে থানা পুলিশ ও বিজিবি।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকালে সিপাইপাড়া বাজারে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। ঘটনার পর পরেই পরিস্থিতি বিবেচনায় ৭ জনকে আটক করে নিজ হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। পরে আহতদের উদ্ধার করে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়াও হয়।

আহতরা হলেন— উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সোহরাব আলী (৩৬), আরিফ হোসেন (২৩), হিমেল (৪৯), জাফর আলী (৪৫), আইয়ূব আলী, তিরনইহাট ইউনিয়নের আশিক (২৮), আজিজুল (৪৫),  কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকার ফরিদুল ইসলাম (৩২)। এর মধ্যে কয়েকজন সামান্য আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

আটকরা হলেন— তিরনইহাট ইউনিয়নের বাসিন্দা আহসান হাবিব, জিয়ারুল, আনছার আলী, আনিছুর রহমান, ইউসুফ পাভেল, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের রুস্তম মাহমুদ ও আব্দুর রহমান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সোমবার সকালে স্থানীয় বিএনপি সমর্থক হোটেল ব্যবসায়ী ওবাইদুল ইসলামের দোকানে হামলা ও ভাঙচুর চালায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই খুদা মিলনের সমর্থকরা। এসময় বিএনপির সমর্থকরা এগিয়ে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনাটি ঘটে। এতে উভয় পক্ষের প্রায় ১৪ জন আহত হয়। ঘটনার পর আহতদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে যায় উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীরা।

স্থানীয়রা আরও জানায়, এর আগে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সিপাইপাড়া বাজারের মাংসের দোকানদার আইয়ুব আলীর সঙ্গে গোরস্তানের জমি নিয়ে বুধারু মুন্সি নামে এক ব্যক্তির ঝগড়া বাধে। এ ঘটনাকে নিয়ে হোটেল ব্যবসায়ী ওবায়দুল ইসলাম প্রতিবাদ করলে তার সঙ্গেও ঝগড়া হয়। আইয়ুব আলী ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদা মিলনের পক্ষের আর ওবায়দুল ইসলাম বিএনপির সমর্থক। এদিকে ওবাইদুল ইসলামের লোকজন আইয়ুব আলীর মাংসের দোকান ভেঙে দেয়। এঘটনার জের ধরে সোমবার বেলা ১১টার দিকে ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত-ই-খুদার পক্ষের লোকজন বাজারে থাকা ওবায়দুলের হোটেলে ভাঙচুর করে আগুন দেয়। এর পরপরই দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। এদিকে, বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে খবর পেয়ে থানা পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

বাংলাবান্ধা বিওপি সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। একই সঙ্গে লাঠি-সোটাসহ কয়েকটি দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

হাসপাতালে ভর্তি আহত আরিফ হোসেন গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগ করে বলেন, আমার বাবা বিএনপি করায় আমাদের হোটেলে বাবার ওপর এবং আমার ওপর হঠাৎ করে হামলা চালায় মিলন চেয়ারম্যানের লোকজন। তারা আমাদের মেরে ফেলার চেষ্টা করে। স্থানীয়রা আমাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। সন্ত্রাসী বাহিনী ভাড়া করে নিয়ে এসে এই হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনার আমরা বিচার চাই।

বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য সচিব রাশেদ আলী সরকার বলেন, মিলন চেয়ারম্যানের ভাড়াটে লোকজন সিপাইপাড়া বাজারে শোডাউন দিয়ে বেড়াচ্ছিল। এক পর্যায়ে তারা আমাদের লোকজনের ওপরে হামলা করেছে। এতে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তারা এখন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 

এদিকে, নিজের অনুপস্থিত থাকার কথা জানিয়ে বিক্ষুব্ধের হামলা ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে লুটপাত চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনের। তিনি বলেন, আমার বাড়িতে হামলা করে ভাঙচুর ও ঘর থেকে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, ৮ ভরি স্বর্ণ লুটপাট করে। আমার ব্যবহৃত গাড়িতে, একটি ট্রাক্টরে ও বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়। বাড়ির ফ্রিজ, আলমারিসহ বিভিন্ন মালামাল সব কিছুই পুড়ে গেছে। কোনো কিছুই বাঁচাতে পারিনি।

এ বিষয়ে তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, হামলার খবর শুনে পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এখন সার্বিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ৭ জনকে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে। এঘটনায় কোনো অভিযোগ দায়ের হয়নি।

উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদরত-ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে স্থানীয়দের জমি দখল, হয়রানি, সিন্ডিকেট ও মিথ্যা মামলা করার অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ- মানববন্ধন করে আসছিলেন স্থানীয়রা।

টিবি