images

সারাদেশ

ঝিনাইদহের ডাকবাংলোগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের দখলে

১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭:২৫ পিএম

ঝিনাইদহ জেলা ও উপজেলা পরিষদের ডাকবাংলোগুলো সরকারি কর্মকর্তাদের দখলে। মাসের পর মাস থাকেন অত্যাধুনিক ভিআইপি কক্ষে। ভাড়া দেন নির্ধারিত অংকের অর্ধেক। কেউ এক টাকাও ভাড়া দেন না। অথচ কেয়ারটেকারের বেতন, রক্ষণাবেক্ষণসহ বিভিন্ন খাতে প্রতিবছর ব্যয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। অনুসন্ধানে মিলেছে অনিয়ম দুর্নীতির ভয়াবহ সেই চিত্র।

ঝিনাইদহ জেলা শহরের প্রাণ কেন্দ্রে সরকারি কেসি কলেজের দক্ষিণে অবস্থিত জেলা সদর ডাকবাংলো। বিগত তিন বছরের রেজিষ্টার খাতা (২০২২, ২০২৩ ও ২০২৪ ) পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ বাংলোর নতুন ভবনে রয়েছে ৪টি ভিআইপি কক্ষ (রুম)।

কেয়ারটেকার মেহেদেী হাসান জানান, বাংলোর একটি কক্ষ সর্বক্ষণ রির্জাভ রাখা হয়। বাকিগুলো ভাড়া দেওয়া হয়। তার দেওয়া তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৯ জুন বাংলোর কক্ষ (রুম) ভাড়া নির্ধারণ করে চার্ট (তালিকা) প্রকাশ করা হয়েছে। ওই চার্টে স্বাক্ষর করেছেন জেলা পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস (জেলা আওয়ামী লীগ নেতা) ও সচিব (জেলা পরিষদ) মুহাম্মদ রেজা আরিফিন সরকার। তালিকা মোতাবেক জেলা সদরের বাংলোর ভাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ভিআইপি এসি রুম প্রতিদিন ৪০০ টাকা, নন এসি (ভিআইপি) ২০০ টাকা, দুই সিট (বেড) বিশিষ্ট কক্ষ প্রতি সিট ১৫০ টাকা।

উপজেলা বাংলো গুলোতে (সরকারি কর্মকর্তা) এসি কক্ষ (ভিআইপি) প্রতিদিন ৩০০ টাকা , নন এসি (ভিআইপি) ২০০ টাকা (প্রতিদিন) এবং  দুই সিট বিশিষ্ট কক্ষ প্রতি সিট ১৪০ টাকা। বেসরকারি ও স্বায়িত্বশ্বাসিত প্রতিষ্ঠান, সেক্টর করপরেশনের কর্মকর্তাদের জন্য আদালা রেটে ভাড়া আদায়ের বিধান রয়েছে।

জেলা পরিষদের প্রধান সহকারী ( বড়বাবু) আনোয়ার হোসেন জানান, একজন কর্মকর্তা ডাকবাংলোতে টানা তিন দিনের বেশি অবস্থান করলে নির্ধারিত ভাড়ার দ্বিগুন আদায় করার বিধান রয়েছে। রেজিষ্টার খাতায় দেখা যায়, ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল ঝিনাইদহের ( সদর হাসপাতাল) সদ্য অপসারিত তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম নতুন ভবনের (জেলা সদর বাংলোর ) ভিআইপি এসি ৩ নাম্বার কক্ষে থাকেন। ২০২২ সালের ১ লা ফেব্রুয়ারি থেকে ওই কক্ষ ভাড়া নিয়েছেন তিনি (তত্বাবধায়ক)। প্রতি মাসে ভাড়া প্রদান করেছেন মাত্র ছয় হাজার টাকা। হিসাব মতে ২০০ টাকা হারে প্রতিদিন ভাড়া দিয়েছেন তিনি।

চলতি (২০২৪) সেপ্টেম্বর মাসেও ওই কর্মকর্তা (তত্বাবধায়ক) কক্ষটি দখলে রেখেছেন। প্রতিদিন ৪০০ টাকা হারে ( মাসে বারো হাজার টাকা) তত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলামের কাছে তিন লাখ ছিয়াত্তর হাজার টাকা পাওনা হয়। অথচ ২০২৪ সালের আগষ্ট মাস পর্যন্ত ওই কর্মকর্তা মাসিক ছয় হাজার টাকা হিসাবে ভাড়া প্রদান করেছেন।  নির্ধারিত ( প্রতি দিন চারশত) ভাড়ার অর্ধেক ( দুইশত টাকা) দিয়েছেন তিনি। এক লাখ আটাশি হাজার টাকা পাওনা রয়েছে তার ( ডা. রেজাউল) কাছে।

অপর দিকে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. শওকত হোসেন ২০২১ সালের ২৪ আগষ্ট থেকে ২০২২ সালের ২ আগষ্ট পর্যন্ত জেলা সদর ডাকবাংলোর এক নাম্বার ভিআইপি এসি কক্ষে অবস্থান করেছেন। ওই সময়ে ৪০০ টাকার পরিবর্তে প্রতিদিন ২০০ টাকা হারে ভাড়া প্রদাণ করেছেন তিনি। অপর এক কর্মকর্তা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আবু রাসেল ২০২১ সালের ৯ জুন থেকে ২০২২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত (একই ডাকবাংলো) ভিআইপি ২ নাম্বার এসি রুমে থেকেছেন। কেয়ার টেকার মেহেদীর দেওয়া তথ্য মতে এক টাকাও ভাড়া প্রদাণ করেননি পুলিশের এ কর্মকর্তা।

বাংলোর সাবেক কেয়ার টেকার বাবুল (বর্তমান হরিণাকুন্ডু) অভিযোগ করেন, ভাড়া চাওয়া মাত্র মাদক দিয়ে চালান করে দেওয়া হুমকি দিয়েছিলেন তিনি ( অতিরিক্ত পুলিশ সুপর)।

জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে ঝিনাইদহ জেলার ৬ উপজেলায় ৬টি ডাকবাংলো রয়েছে। সে গুলোর মেরামত, রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ, তৈজষপত্র ক্রয় এবং কেয়ারটেকারদের বেতন খাতে প্রতিবছর খরচ হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। কোটি কোটি টাকা খরচ করে বিভিন্ন সময়ে বাংলো গুলো নিমার্ণ করা হয়েছে। প্রত্যেক কেয়ারটেকার মাসিক বেতন পান ষোলহাজার পাঁচশত টাকা। সেই হিসাবে ৬ জন কেয়ারটেকারের এক বছরে বেতন এগারো লাখ আটাশি হাজার টাকা। বিপুল অংকের এই টাকা জেলা পরিষদকে প্রদাণ করতে হয়। প্রাপ্ত তথ্য মতে যে ভাড়া আদায় করা হয় তাতে একজন কেয়ারটেকারের বেতনও হয় না।

জেলা সদরের (সরকারি কেসি কলেজের সামনে) বাংলোটি অত্যাধুনিক। সেখানে পুরাতন একটি দ্বিতল ভবন ( ১১টি কক্ষ) এবং নতুন একটি দ্বিতল ভবন (কক্ষ ৪টি) রয়েছে। কোটচাঁদপুরের উপজেলা শহরের বাংলোটি সদ্য বিলুপ্ত জাতীয় সংসদের ঝিনাইদহ-৩ ( কোটচাদপুর-মহেশপুর) আসনের সাবেক এমপি মেজর জেনারেল (অব.) সালাউদ্দিন মিয়াজীর ব্যক্তিগত অফিস গড়ে তুলেছিলেন। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরে বাংলো ছেড়ে চলে গেছেন সাবেক ওই এমপি। আজো ভাড়া নেওয়া হয়নি তার কাছ থেকে।

এ বিষয়ে জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (উপ-সচিব) সেলিম রেজা  বলেন, বিনা ভাড়ায় থাকা কিংবা অর্ধেক ভাড়া দেওয়ার কোনো  বিধান নেই। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে বকেয়া ভাড়া পরিশোধের জন্য শিগগিরি চিঠি দেওয়া হবে। বিধি মোতাবেক পাওনা আদায় করা হবে।

প্রতিনিধি/একেবি