images

সারাদেশ

শ্রমিক বিক্ষোভের পেছনে নানান কারণ: আসল পরিস্থিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক

১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১০:৩০ এএম

সাভারের আশুলিয়ার মণ্ডল মার্কেট এলাকায় গতকাল সোমবার, বন্ধ একটি পোশাক কারখানার গেটে উঁকি মারছিলেন দুই তরুণী, সুমাইয়া এবং খাদিজা। সিরাজগঞ্জের তাড়াশে তাদের গ্রামের বাড়ি হলেও চাকরির জন্য তারা আশুলিয়ার বিভিন্ন কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করছেন। সুমাইয়া জানান, তিনি আগে আশুলিয়ার এস-২১ নামে একটি কারখানায় চাকরি করতেন। অসুস্থতার পর গ্রামের বাড়ি ফিরে সুস্থ হয়ে ১৫ দিন আগে আবারও আশুলিয়া ফিরে এসে দেখেন, শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে চাকরি খুঁজে পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ধরনের বিক্ষোভের কারণে বহু শ্রমিকই সমস্যার মধ্যে পড়েছেন।

আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের কারণে কারখানার পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে আশুলিয়ার ইয়ারপুর ইউনিয়নের কারখানাগুলোতে পরিস্থিতি আরও খারাপ। গতকাল ৭৯টি কারখানা বন্ধ ছিল। বিক্ষোভের পেছনে নানা কারণে পরিস্থিতি অস্থির হয়ে উঠেছে। একদিকে শ্রমিক, মালিকপক্ষ, রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় বাসিন্দা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে যে, 'সুবিধাভোগী' নানা গ্রুপ এই পরিস্থিতির পেছনে রয়েছে। অনেক কারখানায় হামলা করা হচ্ছে, যেগুলোর সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে মালিকপক্ষ দাবি করছে, হামলার সঙ্গে শ্রমিকরা জড়িত ছিলেন না। বেশ কিছু জায়গায় ঝুট ব্যবসার হাতবদল নিয়ে বিরোধ চলছে এবং নতুন প্রভাব বলয় তৈরি করতে পুরনো কারখানার অস্থিরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত দুই সপ্তাহে ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আশুলিয়ায় একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে।

এছাড়া আশুলিয়ায় কিছুদিন ধরে কারখানায় ভাঙচুর, হামলা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। বেশ কিছু কারখানায় শ্রমিকরা হাজিরা দিয়েই বের হয়ে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিজিএমইএ, কারখানার মালিক এবং প্রশাসনের কর্মকর্তারা এই সমস্যা দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করছেন।

রোববার আশুলিয়ার আলিফ ভিলেজ কারখানায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। কারখানার নির্বাহী পরিচালক ফরিদ আহমেদ জানান, হামলার সময় তারা বাথরুমে লুকিয়ে ছিলেন এবং এখনও আতঙ্কিত। হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আসে, কিন্তু হামলাকারীরা কারখানার শ্রমিক ছিল না।

এক স্থানীয় বাসিন্দা জানান, হামলার সাথে অনেক শিশুও জড়িত এবং এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে আসছে। রিকশা ও ভ্যানচালকরা কেন হামলায় অংশ নিচ্ছে, তা প্রশ্নবিদ্ধ। তার মতে— তৃতীয় পক্ষ শ্রমিকদের উস্কে দিচ্ছে।

আরেকটি বিষয় হলো— আশুলিয়ায় অস্থিরতার পেছনে ঝুট ব্যবসার বিরোধও একটি বড় কারণ। গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণে ছিলেন। সরকার পতনের পর অনেকেই গা-ঢাকা দিয়েছেন, কিন্তু কিছু লোক এখনও নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে চায়নি। অন্যদিকে, বিএনপি নেতাকর্মীরা এই নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের চেষ্টা করছে। এর মধ্যে ইপিজেডে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে।

ন্যানি ফ্যাশন নামে একটি কারখানার কয়েক হাজার সাবেক শ্রমিক একত্রিত হয়ে মানববন্ধন করেছেন। তাদের দাবি, বন্ধ হওয়া কারখানার বকেয়া বেতন দ্রুত পরিশোধ করতে হবে। এছাড়া, আল-মুসলিম অ্যাপারেলস লিমিটেডের শ্রমিকরা বেতন ও অন্যান্য সুবিধা বাড়ানোর দাবি করেছেন।

মালিকপক্ষের প্রতিনিধিরা বলেছেন, শ্রমিকদের দাবির মধ্যে বেশিরভাগই অযৌক্তিক এবং একাধিক দাবির বৈপরীত্য রয়েছে। কারখানার মধ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মালিকরা শপথ গ্রহণ করেছেন এবং কিছু কারখানা ইতিমধ্যে শ্রমিকদের কিছু দাবি পূরণ করেছে।

শ্রমিক বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়ায় গতকাল ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা পরিস্থিতি পরিদর্শন করেছেন। শিল্প পুলিশ-১ এর সুপার মোহাম্মদ সারওয়ার আলম জানিয়েছেন, একসঙ্গে বেশ কয়েকটি কারখানায় সমস্যা হলে পুলিশের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে সহযোগিতা করা কঠিন।

এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুত ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।

এইউ