images

সারাদেশ

এস আলমের ব্যাংকে টাকা জমা রেখে বিপদে চট্টগ্রাম বন্দর

নিজস্ব প্রতিবেদক

২৯ আগস্ট ২০২৪, ০৮:১৯ পিএম

এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে থাকা চারটি ব্যাংকেই প্রায় এক হাজার কোটি টাকা আটকা পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দরের। স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করে রাখা এসব টাকার মুনাফা তো দূরের কথা, আসল টাকাও এখন উঠাতে পারছে না চট্টগ্রাম বন্দর। ফলে টাকা না পাওয়ায় তা পুনর্বিনিয়োগ করতে পারছে না বন্দর কর্তৃপক্ষ।

এতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যয় নির্বাহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে। ফলে প্রায় দেউলিয়া হতে বসা একটি ব্যাংকে আটকা পড়া টাকা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় সাহায্য চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। 

অন্যান্য ব্যাংকগুলোর কাছেও একের পর এক চিঠি লিখে কোন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক। বৃহস্পতিবার (২৯ আগস্ট) বিকেলে তিনি এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, আমাদের অনেকগুলো টাকা বেসরকারি কয়েকটি ব্যাংকে আটকা পড়েছে। ব্যাংকগুলোকে বারবার চিঠি দিলেও তারা আমাদের টাকা দিচ্ছে না। এফডিআরের টাকা যেকোন সময় উত্তোলন আমাদের অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার খর্ব করে তারা চিঠিরই জবাব দেয়না।

তিনি বলেন, পদ্মা ব্যাংকেও আমাদের টাকা আটকা পড়েছে। টাকাগুলো আটকে যাওয়ায় বন্দরের বিভিন্ন প্রকল্পের অর্থ সংস্থানে সমস্যা হচ্ছে। নানামুখী প্রেসার, তদবির এবং লোভনীয় নানা প্রচেষ্টার মাধ্যমে এসব টাকা জমা নিয়েছে বেসরকারি ব্যাংকগুলো। যা হাত ঘুরে বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। এতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ভয়াবহ রকমের বিপদে পড়ে গেছে। তবে এসব টাকা উদ্ধারে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

বিভিন্ন সূত্রের অভিযোগ, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের তহবিলে কয়েক হাজার কোটি টাকা রয়েছে। যা উপরি কমিশনের বিনিময়ে এস আলমের মালিকানাধীন বেসরকারি ব্যাংকে জমা রেখেছে বন্দর কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট অসাধু কর্মকর্তারা। ফলে এসব টাকা না দেওয়ায় চরম বিপদে পড়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

সূত্র জানায়, আইন ছিল সরকারি, আধাসরকারি বা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের তহবিলে থাকা টাকার ৭৫ শতাংশ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে এবং ২৫ শতাংশ বেসরকারি ব্যাংকে জমা রাখা যাবে। কিন্তু বছর চারেক আগে এই আইন সংশোধন করে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ৫০ শতাংশ এবং বেসরকারি ব্যাংকে ৫০ শতাংশ অর্থ জমা রাখার নির্দেশনা প্রদান করা হয়। 

এই নির্দেশনার পরই বন্দর তহবিলে থাকা টাকাগুলোর ৫০ শতাংশ রাষ্টায়ত্ত্ব ব্যাংকে এবং বাকি ৫০ শতাংশ বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রাখা হয়। এর মধ্যে নানা অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা এবং লুটপাটের কারণে রেড জোনে পড়ে যাওয়া কয়েকটি ব্যাংকে টাকা রেখে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

এর মধ্যে চারটি ব্যাংকেরই নিয়ন্ত্রণ ছিল এস আলম গ্রুপের। চারটি ব্যাংকের বিশটিরও বেশি শাখায় বন্দর কর্তৃপক্ষ এই টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করে রাখে। এর মধ্যে ইউনিয়ন ব্যাংকের ১১টি শাখায় ৪১১ কোটি টাকা, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের চট্টগ্রামের চারটি শাখায় ২১২ কোটি টাকা, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের চারটি শাখায় ১৯০ কোটি টাকা এবং গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের দুটি শাখায় ১১৫ কোটি টাকা এফডিআর করা হয়। এসব টাকার জন্য বারবার তাগাদা দেয়া হলেও ব্যাংকগুলো সাড়া দিচ্ছে না বলে বন্দও কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকে জরুরি পত্র দিয়ে পদ্মা ব্যাংকে (সাবেক ফারমার্স ব্যাংক) বিনিয়োগকৃত ১৭৯ কোটি টাকা উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছেন। এই ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখায় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ২২টি এফডিআরর মাধ্যমে ১৭৯ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু এই টাকার কোন মুনাফা ব্যাংক দিচ্ছে না।

গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুনাফা দেয়া বন্ধ করার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ এফডিআর ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ৬টি এফডিআরের বিপরীতে ৯৫ কোটি টাকা উত্তোলনের জন্য ব্যাংকে চিঠি দিলে তাতে কোন সাড়া মিলেনি। উপায়ান্তর না দেখে বন্দর কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ ব্যাংকের দ্বারস্থ হয়েছে। পদ্মা ব্যাংকের মতো ন্যাশনাল ব্যাংক, গেøাবাল ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক এবং আইসিবি বন্দর কর্তৃপক্ষের চিঠিতে কোন সাড়া দেয়নি। তারা কোন টাকা ফেরত দিচ্ছে না। এসব ব্যাংকের কাছে বন্দরের আটকা পড়া টাকার পরিমানও কয়েকশ কোটি টাকা বলে সূত্র জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, নানাভাবে চাপ দিয়ে আমাদের তহবিল থেকে টাকা নেয়া হয়েছে। এখন তারা তা ফেরত দিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো রেড জোনে চলে গেছে। এসব টাকার কি হবে তা আদৌ আমরা বুঝতে পারছি না। আল্লাহ আল্লাহ করছি।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো আমাদের টাকা না দেয়ায় আমরা তা পুনর্বিনিয়োগ করতে পারছি না। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় অর্থের ব্যয় নির্বাহ করতে আমাদেরকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর আচরণ কোনো সভ্য দেশের মতো নয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

প্রতিনিধি/একেবি