জেলা প্রতিনিধি
২২ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৪৬ পিএম
'আমার বাবা আমাকে খুব আদর করতো, প্রতিদিন নিয়ে বাজারে যেত। আমাদের দুই ভাই বোনকে বাজারে নিয়ে রুটি খাওয়াতো। এখন আমাদের বাবা আর নাই। আমার বাবাকে পুলিশ গুলি করে মারছে, আমি এর বিচার চাই। আমার দুইটা অপারেশন করতে হবে, বাবা বলেছিল এবার টাকা জমিয়ে অপারেশন করাবে। এখন আমার বাবাই নাই, আমার অপারেশন কে করবে?' একথা বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন পুলিশের গুলিতে নিহত ফারুক হোসেনের পঞ্চম শ্রেণি পড়ুয়া ছেলে মো. মাহফুজ হোসেন।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবি আন্দোলনে উত্তাল হয়ে ওঠে সারাদেশ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় দেশের বিভিন্ন স্থান। গত ২০ জুলাই দুপুরে সাভারে পুলিশের গুলিতে ঝাঁঝরা হন জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর ইউনিয়নের ডেঙ্গারঘর এলাকার ফারুক হোসেন। ২১ জুলাই সাভারের এনাম মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন গিয়ে তার নিথর দেহ নিয়ে আসে জামালপুরে। পরে নিজ গ্রামেই নিরবে দাফন করা হয় তার লাশ।
ফারুক হোসেন সাভারের একটি মুরগির দোকানের কর্মচারি ছিলেন। তিনি ডেঙ্গারঘর এলাকার মৃত হায়দার আলী ছেলে। তার মৃত্যুতে এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া ও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে এই পরিবারের ভবিষ্যৎ।
নিহত ফারুক হোসেনের স্ত্রী সন্ধ্যা বেগম জানান, অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফেরাতে সাভারের একটি মুরগির দোকানে কর্মচারির কাজ করতেন ফারুক হোসেন। গত ২০ জুলাই দুপুরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালিয়ে ধাওয়া দেয় পুলিশ। শিক্ষার্থীরা দৌড়ে পাশে থাকা বাজারের বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেয়। সেখানেও নির্বিচারে ছাত্র-জনতার ওপর গুলি ছুঁড়ে পুলিশ। সে সময় দোকানের সামনে কাজ করার সময় গুলিবিদ্ধ হন ফারুক। কয়েক ঘণ্টা পরে স্থানীয়ও ছাত্রদের সহযোগিতায় তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে পরদিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।
তিনি আরও জানান, তাদের দুই সন্তান মাহফুর ও তাবাচ্ছুম। মাহফুজ পড়ে পঞ্চম শ্রেণিতে ও তাবাচ্ছুম পড়ে প্রথম শ্রেণিতে। ফারুক হোসেন সামান্য উপার্জনে চলত তাদের সংসার। ছেলে মাহফুজের শ্বাসকষ্ট ও পলিপাসের সমস্যা রয়েছে। চিকিৎসক দ্রুত অপারেশন করতে বলেছে। এবার টাকা জমিয়ে অপারেশন করাবে বলে জানিয়েছিল ফারুক হোসেন। কিন্তু তার এই মৃত্যুতে সব শেষ হয়ে গেছে । এখন ছেলের অপারেশন ও সংসার কিভাবে চলবে এই চিন্তায় দিশেহারা তিনি।
মানবাধিকার কর্মী জাহাঙ্গীর সেলিম বলেন, ফারুক হোসেন ছিলেন পরিবারটির একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এমন মৃত্যুতে তার স্ত্রী অসুস্থ ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন। তাই অসুস্থ ছেলেটির চিকিৎসা ও তাদের পড়ালেখাসহ ভরণপোষণের জন্য সরকারের সহযোগিতা চান তিনি।
জামালপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিন্নাত শহীদ পিংকি বলেন, আমরা পরিবারটিকে প্রাথমিকভাবে ঘর তৈরির জন্য ঢেউটিন, নগদ অর্থ ও খাদ্য সহয়তা দিয়েছি। এই পরিবারটিকে নিয়ে আমাদের আরও অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তাদের জন্য খাস জমি দেখা হচ্ছে। ছেলে মেয়েদের জন্য ভিত্তির ও তার স্ত্রীর জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। সর্বপোরি এই অসহায় পরিবারটির পাশে উপজেলা প্রশাসন সব সময় থাকবে বলে জানান তিনি।
প্রতিনিধি/এসএস