images

সারাদেশ

নেত্রকোনায় মন্দির ভাঙচুর করার সময় হাতেনাতে আটক হিন্দু যুবক

জেলা প্রতিনিধি

১৮ আগস্ট ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম

নেত্রকোনার পূর্বধলায় একটি মন্দিরে ভাঙচুরের সময় নেপাল চন্দ্র ঘোষ (৩৪) নামে এক যুবককে হাতেনাতে আটক করেছেন এলাকাবাসী। ভাঙচুরের পর আগুন দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। 

ভাঙচুরের সময় ঘটনাস্থলে আটজন থাকলেও নেপাল ছাড়া বাকি সবাই পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। স্থানীয় একজন তাদের টাকার বিনিময়ে মন্দিরে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার জন্য ভাড়ায় এনেছিলেন বলে জানান আটক নেপাল চন্দ্র।

গতকাল শনিবার (১৭ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে উপজেলার বাড়হা ঘোষপাড়া কালী মন্দিরে ভাঙচুর করার সময় তাকে আটক করে এলাকাবাসী। এসময়  গাছের শুকনো পাতা, ডালপালা,  হাতুড়ি ও অগ্নিসংযোগের সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়। পরে তাকে পূর্বধলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। 

এ ঘটনায় মন্দিরের সভাপতি বাদী থানায় মামলা করেছেন। এতে নেপালসহ আরও কয়েকজনকে আসামি করা হয়। পরে রোববার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠানো হয়। পূর্বধলা থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম রোববার এ তথ্য নিশ্চিত করেছন। আটক নেপাল চন্দ্র ঘোষ  উপজেলার জারিয়া ইউনিয়নের  নোয়াপাড়া গ্রামের সুধীর চন্দ্র ঘোষের ছেলে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে  মন্দিরের দেয়ালে আঘাতের শব্দ শুনে আপপাশের লোকজন ছুটে যান। বিষয়টি টের পেয়ে সেখানে থাকা কয়েকজন পালিয়ে যান। তবে হাতুড়ি দিয়ে মন্দিরের দেয়ালে আঘাত করা অবস্থায় হাতেনাতে নেপাল চন্দ্রকে আটক  করে স্থানীয়রা। এসময় আনসার সদস্যরা নেপালকে আটকে তাদের সহায়তা করেন। পরে খবর পেয়ে পূর্বধলা থানা পুলিশের একটি দল নেপালকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। 

মন্দির পরিচালনা কমিটর সদস্য ও প্রতিবেশী বিমল চন্দ্র বর্মন জানান, শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে হাঁতুড়ি দিয়ে মন্দির ভাঙার শব্দ শুনতে পেয়ে আমরা ছুটে আসি। তখন কয়েকজন দৌড়ে  পালিয়ে গেলেও নেপাল পালিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়। পরে থানা পুলিশে সোপর্দ করা হয়। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মন্দিরের দেয়াল বেশ কিছু ক্ষতি করেছে। তারা সাথে করে শুকনো খড়-গাছের পাতা, গ্যাস ম্যাচ নিয়ে এসেছিল। পরিকল্পনা ছিল ভাঙচুরের পর মন্দিরে আগুন লাগিয়ে দেওয়া।

আটককৃত নেপাল চন্দ্র ঘোষ জানান, বহিরাগত ছয়জন ও স্থানীয় দুজনসহ আমরা আটজন মিলে মন্দির ভাঙায় অংশ নিয়েছিলাম। স্থানীয় কৃষ্ণর ছেলে জয় আমাকে টাকার বিনিময়ে মন্দির ভাঙার জন্য নিয়ে আসে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ভাঙচুরের পর এতে আগুন দেওয়ার কথা ছিল। আগুন দেওয়ার জন্য গ্যাস ম্যাচ, গাছের শুকনো পাতা ও ডালপালাসহ আগুন দেওয়ার সরঞ্জাম সাথে নিয়ে আসি। বিষয়টি টের পেয়ে গ্রামের লোকজন চলে এলে সঙ্গে থাকা সবাই পালিয়ে যায়। তবে আমি দেয়াল টপকিয়ে পড়ে পায়ে ব্যথা পেয়েছি। এতে লোকজন আমাকে আটক করে। 

পূর্বধলা থানার ওসি মো. তাজুল ইসলাম বলেন, মন্দির ভাঙচুরের সময় এলাকাবাসী হাতে নাতে আটক করে নেপাল চন্দ্র ঘোষকে। পরে এ ঘটনায় মন্দিরের সভাপতি বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। এতে নেপাল চন্দ্র ও জয়সহ দুইজনের নামোল্লেখ সহ আরো ৫-৬জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে। মামলার পর  বিকালে নেপালকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মো. সাইদুর রহমান তালকুদার বলেন, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য একটি চক্র এসব কাজ করছে। তবে  সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এর বিরুদ্ধে  প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।

নেত্রকোনা জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যাপক মাসুম মোস্তফা জানান, ৫ আগষ্টের গণবিপ্লবকে যারা নস্যাৎ করতে চায় সেই দুষ্কৃতকারীরা পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনা ঘটিয়েছে। পূর্বধলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মন্দিরে নিরাপত্তা আরও জোরদারের দাবি জানান তিনি। 

প্রতিনিধি/একেবি