জেলা প্রতিনিধি
১০ আগস্ট ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
দেশে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ে চরম হতাশ রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি, ক্রাইম এন্ড অপারেশন) সাবিনা ইয়াসমিন। সম্প্রতি নিজের ফেসবুক আইডিতে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এ হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। শুরুতেই প্রশ্ন তুলে লিখেছেন- ‘কী দিয়ে লিখব, রক্ত নাকি চোখের পানি?’
এরপর সাবিনা ইয়াসমিন লেখেন, আজ বাংলাদেশ পুলিশে চাকরির ১০ বছর পার করেছি, সুদীর্ঘ চাকরি জীবনে আমি ব্যক্তিগতভাবে বলতে পারি, কোনো সাধারণ মানুষকে মারা তো দূরের কথা কোনদিন খারাপ ব্যবহার পর্যন্ত আমি করিনি। আর এ চাকরি জীবনের বেশিরভাগ সময় আমি পুলিশের পোশাক পরিধাণ করে মাঠ পর্যায় কাজ করেছি মানুষের সঙ্গে মিশে আর অধস্তনদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ রেখে।
তিনি লিখেছেন, আজ আমি আমার অধস্তনদের যৌক্তিক দাবির সঙ্গে সম্পূর্ণ রূপে একমত। আজ আমার কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অতি দলীয়করণ চিন্তাভাবনা, ব্যক্তিস্বার্থ, অতি হটকরণ সিদ্ধান্ত, চামচামি আর সঠিক সময়ে সঠিক নেতৃত্ব দানের কাপুরুষতা আমাদেরকে জাতির কাছে ভিলেন বানিয়ে রক্তাক্ত করে দিয়েছে অথচ যার অধিকাংশই শুধু চাকরি বাঁচানোর ক্ষেত্রে নিরূপায়। আমার ভাইয়ের, সহকর্মীর এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড যারা ঘটালো তারা কি একবারও ভাবেনি এরাও কারোর বাবা ,মা, ভাই,বোন, কারও সন্তান। পুলিশকে সারা জীবন সবাই শুধু ব্যবহার করেই গেল। সেটা হোক নিজের আত্মীয়-স্বজন কিংবা সরকার, নিজের প্রয়োজনে সবাই ফোন দেয়।
আরএমপির এডিসি লেখেন, বিনা অপরাধে দুইটা রাত নির্ঘুম কাটিয়ে মৃত্যুর প্রান্ত থেকে দুইটা ছোট্ট শিশু নিয়ে যখন প্রতিমুহূর্ত অনিশ্চয়তায় কাটিয়েছি রক্তাক্ত হৃদয় নিয়ে এ কথায় ভেবেছি; থানা ভবন, সদর দফতর থেকে যখন দেখেছি দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে সারিসারি লাশ, মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে সহকর্মীদের বাঁচার আকুতি আর রক্তের বন্যার ওপর দিয়ে সরকারি মালামাল গুলো লুট করে নিয়ে যাচ্ছে! এই দেশ, এই স্বাধীনতাই কি আমরা চেয়েছিলাম!
প্রশ্ন রেখে সাবিনা লিখেছেন, মনে রাখবেন, যে জিনিসগুলো আপনারা লুট করে নিয়ে গেলেন এইগুলা দিয়েই দেশের আইনশৃঙ্খলা, বিচার ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রিত হতো? কি দিয়ে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী কাজ করবে এখন? আজ এখান থেকে লুট করলেন কাল আপনার ঘর থেকে লুট হবে কে দিবে নিরাপত্তা আজ পুলিশকে মারলেন কাল আপনি যখন মার্ডার হবেন কোথায় যাবেন আপনার আত্মীয়-স্বজন বিচার চাইতে? মনে রাখবেন সীমা লংঘনকারীকে আল্লাহ পছন্দ করেনা!!
সারাক্ষণ কেমন জানি ট্রমাটাইজড হয়ে ভাবছি, এইতো কিছুদিন আগেও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষকদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে, আইনশৃঙ্খলার সহযোগিতা দিতে নিজের নাম্বার দিয়ে এসেছি। আর আজ কিনা ছাত্র বনাম পুলিশ! কখনও পুলিশের হাতে ছাত্র রক্তাক্ত আবার কখনও ছাত্রের হাতে পুলিশ রক্তাক্ত। আর মাঝখান দিয়ে বিভাজন সৃষ্টিকারীরা রয়ে গেল ধরা ছোঁয়ার বাইরে। মনে রাখবেন, ছোট্ট একটি দেশ বাংলাদেশ। এদেশে আপনারই আত্মীয়-স্বজন পুলিশ হয়তোবা আমারই ভাই ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারী, সন্তান ছাত্র, স্বামী শিক্ষক হয়ে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়ে! নিজে হৃদয়ের রক্তক্ষরণ নিয়ে মাঠে দাঁড়িয়ে আছি দায়িত্বের খাতিরে!
সবশেষ সাবিনা ইয়াসমিন উল্লেখ করেন, প্রতিহিংসা যেন আমাদের অন্ধ করে না দেয়! রক্ত কখনও হিন্দু, মুসলিম, পুলিশ, ছাত্র, জামায়াত শিবির, বিএনপি আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ ভিন্ন ভিন্ন হয় না, যুগে যুগে যে ধ্বংসের চর্চা সেই চর্চা থেকে বেরিয়ে এসে সেখানে দল, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সুখী, সুন্দর সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি, সেই অনুযায়ী কাজ করি! কোনো মায়ের কোল যেন আর খালি না হয়। দেশের সম্পদ যেন আর বিনষ্ট না হয় লুট না হয়, সহমর্মিতাই ফিরে আসি আমরা।
প্রতিনিধি/ এজে