images

সারাদেশ

মিরসরাই ট্রাজেডির ১৩ বছর আজ, স্মৃতি শুধুই ছবির ফ্রেম

উপজেলা প্রতিনিধি

১১ জুলাই ২০২৪, ০১:১৬ এএম

মিরসরাই ট্রাজেডির ১৩ বছর পূর্ণ হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার। ঘুরে-ফিরে আবারও স্মরণকালের সেই মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াল স্মৃতি ফিরে আসছে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে কারো ভাই, কারো সন্তান, কারো বন্ধু-স্বজন কিংবা প্রিয় ছাত্রদের অকালে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার দৃশ্যপট। অথচ, মৃতদের স্মৃতি বলতে আছে শধু তাদের ছবির ফ্রেম।

মিরসরাই ট্রাজেডি মানে স্বজনদের বুকফাটা আহাজারি, অবিশ্রান্ত কান্নার রোল। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে ওই মৃত মানুষগুলো এখন শুধু স্মৃতি হিসেবে রয়ে গেছে হৃদয়ের মনিকোঠায়। তারা এখন শুধু  ছবির ফ্রেমে আটকে থাকা এক একটি অবয়ব। 

গণমাধ্যম ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ১১ জুলাই চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা সদরের স্টেডিয়াম থেকে বঙ্গবন্ধু-বঙ্গমাতা ফুটবল খেলা দেখে বাড়ি ফেরার পথে বড়তাকিয়া আবুতোরাব সড়কের সৈদালী এলাকায় চালকের অসতর্কতায় প্রায় ৮০জন শিক্ষার্থীকে বহনকারী একটি মিনি ট্রাক উল্টে পার্শ্ববর্তী ডোবায় পড়ে যায়। যেখানে ৪২ জন শিক্ষার্থীসহ ৪৫টি তাজা প্রাণ ঝরে যায়। লাশের মিছিলে ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের পর গ্রাম। শোকের জনপদে পরিণত হয়েছিল মায়ানী, আবুতোরাব, মঘাদিয়াসহ আশপাশের সাতটি গ্রাম। আজও সেই ডোবার পাশে এলেই গা শিউরে ওঠে স্বজন-সহপাঠী কিংবা পথচারীদের।

১১ জুলাই এলে শোকে বিহ্বল হয়ে পড়েন স্বজনরা। যদিও মৃত মানুষগুলো এখন শুধু ছবির ফ্রেমে আটকে থাকা এক একটি অবয়ব। তবুও তাদের স্মৃতি স্মরণ করে বাবা-মায়েরা বুক চাপড়ে আর্তনাদ করে ওঠেন। যদিও এ ভয়াবহ ঘটনার ১৩ বছর পার হয়ে গেঠে, তবু স্বজনরা ভুলতে পারছেন না ওই রোমহর্ষক স্মৃতি।

মিরসরাই ট্রাজেডির পর নিহতদের স্বজনদের সমবেদনা জানাতে ছুটে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরু দৌজা চৌধুরীসহ দেশের বিশিষ্টজনরা। থেমে ছিল না দেশের সমাজসেবকদের সাহায্যের হাত। মিরসরাই ট্র্যাজেডি নিয়ে ওই সময় ধারাবাহিক সংবাদ পরিবেশন করেছিল দেশের গণমাধ্যমের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও।

gf

নিহত ছাত্রদের স্মরণে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রবেশ মুখে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’ আর দুর্ঘটনাস্থলে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’। নিহতদের মধ্যে আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র বেশি হওয়ায় তাদের স্মৃতি রক্ষায় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ২০১২ সালে নির্মাণ করা হয় স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’। স্মৃতিস্তম্ভ ‘আবেগ’-এ নিহতদের ছবিসংবলিত বিশেষ টাইলস স্থাপন করা হয়েছে। আর দুর্ঘটনাস্থলে স্মৃতিস্তম্ভ ‘অন্তিম’ নির্মাণ করা হয়েছে।

আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মর্জিনা আক্তার বলেন, ‘মিরসরাই ট্রাজেডিতে নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় স্কুল প্রাঙ্গণে ছোট পরিসরে স্মরণসভার আয়োজন রয়েছে। এছাড়া স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, নিহত পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আবুতোরাব স্কুল প্রাঙ্গণে ‘আবেগ’ ও দুর্ঘটনাস্থল নির্মিত ‘অন্তিমে’ পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে এবং নিহত স্কুল শিক্ষার্থীদের স্মরণে স্থানীয় মসজিদ, মন্দির, গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন রাখা হয়েছে’।

প্রসঙ্গত, মিরসরাই ট্রাজেডিতে উপজেলার আবুতোরাব উচ্চ বিদ্যালয়ের ৩৪ জন, আবুতোরাব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারজন, আবুতোরাব ফাজিল মাদরাসার দু’জন, প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজের দু’জন শিক্ষার্থী নিহত হয়। এছাড়াও এক অভিভাবকসহ দু’জন ফুটবলপ্রেমীও নিহত হন সে দিনের দুর্ঘটনায়।
 
প্রতিনিধি/ এমইউ