images

সারাদেশ

গাইবান্ধার ৪ উপজেলায় বন্যার হানা, ৮০ বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি

০৫ জুলাই ২০২৪, ১২:৫৮ এএম

গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার মধ্যে চারটিতে বন্যার আঘাত হেনেছে। আর এই বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হওয়া ইতোমধ্যে মাঠে ও শ্রেণিকক্ষে পানি ওঠায় নদ-নদীর তীরবর্তী ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ ঘোষণা করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। মধ্যে প্রাথমিক বিদ্যালয় ৭০টি ও  ১০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদরাসা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বিকেলে গাইবান্ধা জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোছা. রোকসানা বেগম ও জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণার তথ্য নিশ্চিত করেছেন। 

ওই কর্মকর্তারা জানান, সপ্তাহজুড়ে জেলায় ভারী বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা ঢলে গত দুইদিনে গাইবান্ধার নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে জেলার চার উপজেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। বন্যা কবলিত চার উপজেলার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চারদিকেই থৈ থৈ পানি। এরমধ্যে কিছু স্কুলের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকে পড়েছে এবং কিছু এলাকায় রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিদ্যালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। ফলে ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কেউই স্কুলে যেতে পারছে না। যার কারণে বন্যা কবলিত চার উপজেলার ৮০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইবান্ধায় দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধির কারণে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানি, মোল্লারচর, গিদারি, ঘাগোয়া ও ফুলছড়ি উপজেলার এরান্ডাবাড়ি, ফুলছড়ি ও ফজলুপুর এবং সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, হরিপুর ইউনিয়ন ও সাঘাটা উপজেলা ভরতখালী ও হলদিয়া ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়েছে। অন্যদিকে নদীতে পানি বাড়ার সাথে সাথেই নতুন করে সদরের মোল্লার চর ও ফুলছড়ির ফজলুপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। নদ-নদীবেষ্টিত জেলার চার উপজেলার ২৪টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়েছে অন্তত অর্ধলক্ষ মানুষ। প্লাবিত এলাকায় পাট ও গ্রীষ্মকালীন শাকসবজি পটোল এবং মরিচসহ অন্যান্য ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে আরও চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে জানানো হয়— এখন পর্যন্ত জেলার নদীবেষ্টিত গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ২৪টি ইউনিয়ন বন্যা কবলিত। এরমধ্যে সদরে ২টি, সুন্দরগঞ্জের ৭টি, সাঘাটার ৮টি এবং ফুলছড়ি উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। চার উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ১৭ হাজার ৮২০ পরিবার। পানিবন্দি পরিবারগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা সদরে ২ হাজার ১৫০টি, সুন্দরগঞ্জে ৪ হাজার ৭০০টি, সাঘাটায় ৫ হাজার ১৭০টি এবং ফুলছড়িতে ৬ হাজার ৮০০টি। জেলা প্রশাসন কর্তৃক শুকনা খাবার, জি আর চাল (প্রাকৃতিক দুর্যোগ), জি আর ক্যাশ (প্রাকৃতিক দুর্যোগ) মজুদ রয়েছে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী হাফিজুল হক বলেন, ভারী বর্ষণ ও উজনের ঢলে গাইবান্ধায় সবগুলো নদ-নদীর পানি বাড়ছে। তবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সব ধরনের ঝুঁকি মোকাবিলায় পানি উন্নয়ন বোর্ড প্রস্তুতি নিয়েছে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল মিয়া  বলেন, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। দুর্যাগ মোকাবেলায় জেলায় পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী এবং শুকনো খাবার মজুদ রয়েছে।

গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক কাজী নাহিদ রসুল জানান, ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার কার্যক্রমের জন্য নৌকা, স্পীড বোট প্রস্তুত রয়েছে। ইউনিয়নভিত্তিক বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। সবমিলে বন্যা মোকাবিলায় সব ধরণের কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

প্রতিনিধি/এইউ