images

সারাদেশ

নোয়াখালী শহর ডুবল বৃষ্টিতে, মানুষের দুর্ভোগ

জেলা প্রতিনিধি

০২ জুলাই ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম

নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদী ছয় ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডুবেছে। শহরের প্রায় ৬০-৭০ ভাগ এলাকা বৃষ্টির পানিতে জলমগ্ন হয়েছে। পানি উঠেছে অনেক বাড়িঘরেও। ডুবে গেছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সড়ক। এতে বাসিন্দারা পড়েছেন চরম দুর্ভোগে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, পরিকল্পিত ড্রেনেজ–ব্যবস্থা না থাকায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

জেলা আবহাওয়া অধিদফতরের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, সোমবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে মঙ্গলবার (২ জুলাই) সকাল ৬টা পর্যন্ত ছয় ঘণ্টায় জেলা শহর মাইজদীতে ৮২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটি চলতি বর্ষা মৌসুমে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আর গত ২৪ ঘণ্টায় গতকাল সকাল ছয়টা থেকে আজ সকাল ছয়টা পর্যন্ত বৃষ্টি হয়েছে ১০৯ মিলিমিটার। আবহাওয়ার পূর্বাভাস অনুযায়ী আরও কয়েক দিন বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে।

আজ সকালে সরেজমিনে শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকা, নোয়াখালী সরকারি কলেজ, হরিনারায়ণপুর, কৃষ্ণরামপুর, নোয়াখালী সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, সরকারি মহিলা কলেজ এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এসব এলাকার বেশির ভাগ সড়ক বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে। সড়কের আশপাশের বাসাবাড়ির আঙিনায় বৃষ্টির পানি জমে আছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে শহরের সেন্ট্রাল রোডের বিভিন্ন অংশ, হাকিম কোয়ার্টার সড়কসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। এতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীসহ শহরের বাসিন্দারা চলাচলে সীমাহীন ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন।

শহরের লক্ষ্মীনারায়ণপুর এলাকার বাসিন্দা আবদুল জলিল বলেন, পৌরসভা কর্তৃপক্ষ সড়কের পাশে যে ড্রেন করে, সেটি ভারী বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনে উপযুক্ত নয়। সরু ড্রেন এমনিতে ময়লা, আবর্জনায় প্রায় সময় ভরাট হয়ে থাকে। তার ওপর একটু বেশি বৃষ্টি হলে ড্রেনগুলো বৃষ্টির পানির চাপ নিতে পারে না। এতে ড্রেনের পানি উপচে পড়ে আশপাশের বাড়িতে। মানুষ বাধ্য হয়ে ওই নোংরা পানিতে চলাচল করেন।

শহরের বছিরার দোকান এলাকার সৈয়দ বাড়িতে দেখা যায়, পুরো বাড়িতে প্রায় হাঁটুসমান পানি। বাড়ির বাসিন্দা তাজুল ইসলাম জানান, বছরের সাত-আট মাস তাদের বাড়ি জলমগ্ন থাকে। বৃষ্টির পানি নামার কোনো ড্রেন নির্মাণ করেনি পৌরসভা। বাসিন্দাদের যাতায়াতের সড়কও নেই। পৌরসভায় যোগাযোগ করলে বলে, বরাদ্দ নেই। এভাবেই বছরের পর বছর তারা কষ্টে কাটাচ্ছেন। কেউ তাঁদের দুর্ভোগ দেখার নেই।

হাঁটুপানি মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কথা হয় শহরের মহিলা কলেজ এলাকার বাসিন্দা ইসমাইল হোসেনের সঙ্গে। ঢাকা মেইলকে তিনি বলেন, দুর্ভোগ তাঁদের নিত্যসঙ্গী। একটু বৃষ্টিতেই তাদের বাড়িতে পানি ওঠে। পানিনিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টির পানি মাড়িয়ে পুরুষেরা কোনো রকম চলাচল করতে পারলেও পরিবারের নারী-শিশুদের বেশি কষ্ট হয়। অল্প বৃষ্টিতেই তাঁদের দুর্ভোগ নেমে আসে।

নোয়াখালী পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী সুজিত বড়ুয়া বলেন, শহরের প্রধান সড়কের পাশে সড়ক ও জনপথ বিভাগ নির্মিত ড্রেনটির ওপরের স্ল্যাব ঢালাই করা থাকায় তারা পরিষ্কার করতে পারছেন না। এ কারণে পানি নিষ্কাশনে সমস্যা বেশি হচ্ছে। তা ছাড়া শহরের পানি যে গাবুয়া খালসহ অন্যান্য খালে গিয়ে পড়ে, সেগুলোর পানিও উপচে পড়ছে। এ কারণে শহরের পানি সরছে ধীরগতিতে। তবে পৌরসভার ড্রেনেজ–ব্যবস্থার উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা প্রয়োজন বলেও মত দেন এই কর্মকর্তা।

নোয়াখালী পৌরসভার মেয়র সহিদ উল্যাহ খান বলেন, একটানা অধিক পরিমাণ বৃষ্টিপাত হওয়ায় শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়ার বিষয়ে তিনি অবগত রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে তিনি এরই মধ্যে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদক্ষেপ নিতে বলেছেন। তারা ড্রেনগুলো পরিষ্কার করে দেওয়াসহ দ্রুত পানিনিষ্কাশনে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। এ ছাড়া শহরের ড্রেনেজ–ব্যবস্থা উন্নয়নে একটি বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সেটি বাস্তবায়ন করা হলে এ সমস্যা আর থাকবে না।

প্রতিনিধি/একেবি