images

সারাদেশ

সেই ভাইরাল সিদ্দিক এখন কেমন আছেন

জেলা প্রতিনিধি

২৪ জুন ২০২৪, ০৫:০৭ পিএম

‘আমার ভুল হচে আমাক ক্ষমা করে দেন’ বলে নেটদুনিয়ায় দ্রুত ভাইরাল হওয়া আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে সিদ্দিক চোর (৩৭) বর্তমানে চরম দুরবস্থার মধ্যে আছেন। জীবিকা নির্বাহ ও ঘর নির্মাণের জন্য এখন ভিক্ষা করছেন তিনি।

এক সময়ে চুরির অপবাদ নিয়ে দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তাকে দিয়ে দর্শকপ্রিয় ভিডিও কনটেন্ট বানিয়ে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করেন- ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবারেরা। এখন সেই সিদ্দিকের সংসার চলে না। স্ত্রীকে নিয়ে খেয়ে না খেয়ে জীবনযাপন করছেন একটি ভাঙা ঘরে। বর্তমানে এই ভাঙা ঘরটি নির্মাণের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে হাত পাতছেন সেলিব্রেটি এই অভিনয়শিল্পী।

সম্প্রতি সেই সিদ্দিকের সঙ্গে দেখা হয় - গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা শহরে। তাকে একটি থাকার ঘর নির্মাণের জন্য সাহায্য করছিলেন কয়েকজন ব্যক্তি। এ সময় দর্শকপ্রিয় ভিডিও-এর সিদ্দিক চোর হিসেবে তাকে চিনে ফেলেন অনেকে। এরই মধ্যে কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন নিজের নানা দুঃখের কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সিদ্দিক দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করছেন প্রতিনিয়ত। এছাড়া তার রয়েছে মানসিক সমস্যাও। জীবিকার তাগিদে জড়িয়েছিলেন ভিক্ষাবৃত্তিতে। এরই মধ্যে কয়েক বছর আগে এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেন। এরপর চোর ভেবে তাকে আটকের পর পুলিশে সোপর্দ করে স্থানীয়রা। সেই দৃশ্য ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। আর এই সুযোগ কাজে লাগায় কিছু সংখ্যক ফেসবুক পেজ ও ইউটিউবাররা। তাকে ‘সিদ্দিক চোর’ আখ্যা দিয়ে নানান ধরনের নাটকের ফ্লিম তৈরি করেন তারা। এরই ধারাবাহিকতায় নেট-দুনিয়ায় ভাইরাল হয় এই সিদ্দিক। দ্রুত হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি।

স্থানীয়রা জানান, রংপুরের মিঠাপকুর উপজেলার ইমাদপুর ইউনিয়নের গইলবাড়ী গ্রামের মৃত খতিব উদ্দিন ও মোছা. ভানু বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে আবু বক্কর সিদ্দিক। তার আরও চার বোন রয়েছে। জীবদ্দশায় পিতা খতিব উদ্দিন ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালাতেন। তার সন্তানদের মধ্যে এই আবু বক্কর সিদ্দিক একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। বাবার সংসারে হাল ধরতে সিদ্দিকও ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমে পড়েন। এরই মধ্যে বিয়ে করলে সেই স্ত্রীটি মারা যায়। পরবর্তীতে আশমনি আক্তার নামের একজনকে দ্বিতীয় বিয়ে করে সিদ্দিক। এই সংসারটিও টেকেনি তার। মানসিক সমস্যা আর চরম দরিদ্রতার কারণে সিদ্দিককে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন আশামনি। এরপর বগুড়া রেল স্টেশনের একটি চা দোকানে কাজ নেয় সিদ্দিক।

পাশের একটি ফুটপাতে ভাতের দোকানে কাজ করছিলেন নছিমন খাতুন নামের কর্মচারী। একপর্যায়ে নছিমনকে বিয়ে করেন সিদ্দিক। এই নছিমনও মানসিক প্রতিবন্ধী। তবুও চলছে দাম্পত্য জীবন। জীবিকার তাগিদে ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চলে সিদ্দিকের। বসবাসের জন্য রয়েছে জরাজীর্ণ একটি ঘর। সেই ঘরটিও ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়েছে। এভাবেই দরিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে আছেন সিদ্দিক।

এরই একপর্যায়ে কয়েক বছর আগে গাইবান্ধার ফুলছড়ি ঘাটে ভিক্ষা করতে গিয়ে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন সিদ্দিক। এ সময় এক নারীর হাত থেকে ৫০০ টাকা নিয়ে দৌড় দেন। এ ঘটনায় স্থানীয়রা তাকে আটকের পর সোপর্দ করে পুলিশে। এই দৃশ্য ভিডিও ধারণের পর ধীরে ধীরে নেটদুনিয়ায় ভাইরাল হন সিদ্দিক।

Screenshot_2024-06-24_171024এরপর আলম মিয়া, বাবু ও ফারুকসহ আরও অনেকে সিদ্দিককে দিয়ে ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সর্ট নাটক তৈরি করে আয় করেন লাখ লাখ টাকা। এভাবে সিদ্দিক হয়ে ওঠেন সেলিব্রেটি। তবে তাকে দিয়ে অন্যরা মোটা অংকের টাকা আয় করলেও সিদ্দিকের পকেট থাকে ফাঁকা। ওই পেজ মালিক ও ইউটিউবাররা ঢাকা, গাজীপুরসহ বিভিন্ন লোকেশনে সিদ্দিককে দিয়ে মাসের পর মাস কাজ করিয়ে নিলেও তাকে দেওয়া হয়নি যোগ্য পারিশ্রমিক। শুধুমাত্র বাড়িতে আসার সময় তার হাতে দেওয়া হতো গাড়ির ভাড়া। এখন এই ভাইরাল সিদ্দিকের কদর নেই বললেই চলে। কেউ খোঁজ নেয় না তার। ভিডিও কন্টেন করতেও আর ডাকে না কেউ। সিদ্দিককে চোর উপাধি দিয়ে আর লাখ লাখ টাকা রোজগার করে সটকে পড়েছে সবাই। বাধ্য হয়ে ফের ভিক্ষাবৃত্তি পেশায় নেমেছে সেলিব্রেটি সিদ্দিক।

শহিদুল ইসলাম নামের এক দর্শক জানান, বিভিন্ন ফেসবুক পেজ ও ইউটিউব চ্যানেলে সিদ্দিকের নানান ধরণের সর্ট নাটক দেখে মুগ্ধ হয়েছেন তিনি। এমনকি সিরাজগঞ্জে ব্যারিস্টার সুমন ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠানে সিদ্দিককে বিশেষ অতিথি হিসেবে রাখা হয়েছিল। সেই সিদ্দিক আমার কাছে আর্থিক সাহায্য নেয়। এখন ভিক্ষা করে জীবিকা নির্বাহ করছে এটি খুবই দুঃখজন বলে মনে করেন তিনি।

ভাইরাল আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘হামাক দিয়্যা ইউতিউব তিবিতে (টিভি) মেলাগুলা নাতক (নাটক) বানাছে। তামরা (তারা) নাখ নাখ (লাখ) ত্যাকা কামাই করচে। হামাক ত্যাকা দেয়নি কেউ। এখন হামার থাকার ঘর না থাকায় মানষের কাছে ত্যাকা (টাকা) সাহায্য নিতিছি। এক কথায় মুই একন বিক্ষা (ভিক্ষা) করি খাতিছোম।’

ইমাদপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য ও প্রতিবেশী ইব্রাহীম মিয়া বলেন, আবু বক্কর সিদ্দিকের পরিবারটি অত্যন্ত দুস্থ-অসহায়। সহায়-সম্বল বলতে কিছুই নেই তাদের। আছে একটি ভাঙা ঘর। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয় সে। এখন আমরা ভাতার টাকা দিয়ে সিদ্দিককে সহযোগিতা করছি। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকেও সহযোগিতা করা হচ্ছে।

প্রতিনিধি/ এমইউ