নিজস্ব প্রতিবেদক
১৮ জুন ২০২৪, ০৬:১২ পিএম
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এরইমধ্যে জেলার চার উপজেলার সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী হয়েছেন কয়েক লাখ মানুষ।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, জেলার সীমান্তবর্তী চার উপজেলা- গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের সঙ্গে অধিকাংশ এলাকার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। প্রধান সড়কগুলোও পানিতে তলিয়ে গেছে। নদীর ছয়টি পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট ছাড়াও সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, সদরসহ অন্যান্য উপজেলার অবস্থা নাজেহাল। মঙ্গলবার সকাল থেকে নগরীসহ সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলার মানুষদের আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে দেখা গেছে।
সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, পিয়াইন, লোভা, ডাউকিসহ সবকটি নদীর পানি বেড়েছে। ১০টি পয়েন্টের মধ্যে সুরমা ও কুশিয়ারার পয়েন্টসহ ৬টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপরে দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীর উপচে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। ফলে প্লাবিত হয়েছে গ্রামের পর গ্রাম।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, মঙ্গলবার দুপুরে সুরমা নদীর কানাই পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার, সিলেট পয়েন্টে ২৪ সেন্টিমিটার, কুশিয়ার অমলশীদ পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৮০ সেন্টিমিটার, সারিগোয়াইন পয়েন্টে ২৫ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী দীপক রঞ্জন দাশ গণমাধ্যমকে বলেন, ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাতের ফলে পাহাড়ি ঢল নেমে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (সোমবার সকাল ৬টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৬টায়) সিলেটে ১৫৩ মিলিমিটার ও মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে ১২টা পর্যন্ত ৫৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
সিলেটের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি বিষয়ে জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকে লোকজন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠছেন। বিকালে আশ্রয় নেওয়া লোকদের পরিমাণ জানা যাবে।
তিনি বলেন, পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত আছে। আরও চাওয়া হয়েছে। ১২ লাখ ৭০ হাজার টাকা ছাড়াও চাল ও শুকনো খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। আজ বিকেলে বিভাগীয় কমিশনারসহ কোম্পানীগঞ্জ এলাকার বন্যা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে যাবেন। বুধবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী সিলেট আসবেন বলে জানান জেলা প্রশাসক।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, জেলার ১৩টির মধ্যে ১০টি উপজেলার প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দী। তবে মঙ্গলবার পানিবন্দির সংখ্যা আট লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তৌহিদুল ইসলাম জানান, গোয়াইন-সারি রাস্তা, রাধানগর, সালুটিকর-গোয়াইনঘাট, গোয়াইনঘাট-ফতেহপুর-সিলেট সদর রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। উদ্ধার কাজ, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার, ত্রাণ বিতরণ বিষয়ে পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। একইভাবে কানাইঘাট ও জৈন্তাপুরের বিভিন্ন সড়ক প্লাবিত হওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, শাহজালাল উপশহর প্রায় পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় বুকসমান পানি। একই অবস্থা শেখঘাট এলাকার। কোমর পর্যন্ত পানি বিভিন্ন স্থানে। বাসাবাড়ির লোকজন পানিবন্দী হয়ে আছেন।
যতরপুর, শিবগঞ্জ, রায়নগর, মেন্দিবাগ, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ মহানগরের অধিকাংশ এলাকার মানুষ এখন পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন।
জলাবদ্ধতার কারণে ঈদের দিন ওই এলাকার বাসিন্দারা ঈদের নামাজও পড়তে পারেননি।
মঙ্গলবার দুপুরে দক্ষিণ সুরমার বন্যা কবলিত টেকনিক্যাল এলাকা ও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।
পরিদর্শন শেষে তিনি গণমাধ্যমকে জানান, আশ্রয়কেন্দ্রে খাবার সরবরাহের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বন্যা পরিস্থিতির কারণে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
কারই/এমআর