জেলা প্রতিনিধি
১৫ জুন ২০২৪, ০৭:৩৩ এএম
কুষ্টিয়ার কুমারখালীর বহুল আলোচিত সেই আড়াই মাসের শিশু ইসরাফিলকে হত্যা করেছে তার গর্ভধারিণী মা রেহেনা খাতুন। সন্তানকে ঠিকঠাক বুকের দুধ পান করাতে পারতেন না মা। সেজন্য তাকে হত্যা করে চুরির নাটক সাজিয়ে লাশ মাঠে ফেলে রেখে এসেছিল মা।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেলে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন মা রেহেনা খাতুন।
রাত পৌনে আটটার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন কুমারখালী থনার উপ-পরিদর্শক (এস আই) ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. ইকরামুল হক।
তিনি জানান, রেহেনার দু’টা সন্তান বুকের দুধ পান করত। তবে সব সময় তারা ঠিকঠাক দুধ পেত না। এ নিয়ে মা রেহেনা খাতুন সব সময় মানসিকভাবে অশান্তিতে থাকতেন।
মায়ের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, সেদিন (সোমবার) রাতে আড়াই মাসের শিশু ইসরাফিল বিছানা থেকে ইটের ওপর পড়ে যায়। এতে তার মাথা থেঁতলে গিয়ে মারা যায়। সে সময় দিশেহারা হয়ে মা রেহেনা শিশুটিকে প্রথমে একটি পরিত্যাক্ত টয়লেটের স্লিপারের ভেতরে রাখেন। পরে বাড়ির পাশে বিলের মধ্যে রেখে আসেন নিহত সন্তানের নিথর দেহ।
নিহত শিশু ইসরাফিল উপজেলার চাঁদপুর ইউনিয়নের আনন্দনগর গ্রামের কৃষক জিয়াউর রহমান ও গৃহিণী রেহেনা দম্পতির সন্তান। তাদের দাম্পত্য জীবনে তিন মেয়ে সন্তানের পর একমাত্র ছেলে সন্তান ছিল ইসরাফিল।
এর আগে নিখোঁজের প্রায় ৪২ ঘণ্টা পরে গত বুধবার বিকেলে উপজেলার বাগুলাট ইউনিয়নের আদাবাড়িয়া গ্রামের বুড়িমারা বিল থেকে মরদেহটি উদ্ধার করে মর্গে পাঠায় পুলিশ। বিলটি তার নানাবাড়ি থেকে প্রায় ৬০০ মিটার দূরে (পূর্বদিকে)। গত সোমবার সকালে গৃহিণী রেহেনা খাতুন আড়াই মাস বয়সি একমাত্র ছেলে সন্তান নিয়ে বাবা মোহন ম-লের বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। রাতে শিশু ইসরাফিল, মা রেহেনা ও নানী রেনু খাতুন দরজা বন্ধ না করেই ঘুমিয়ে পড়েছিল। রাত ১০টা থেকে শিশুটি নিখোঁজ ছিল বলে দাবি করেছিলেন স্বজনরা। গত মঙ্গলবার সকালে অজ্ঞাত আসামি করে থানায় শিশু চুরির মামলা করেছিল বাবা জিয়াউর রহমান।
জানতে চাইলে শিশুটির নানা মোহন মন্ডল বলেন, নাতিকে আমার মেয়েই হত্যা করেছে। ওর (রেহেনা) মাথা ঠিক নেই, পাগল। মানসিক রোগী। উপড়ি দোষ আছে। প্রায়ই ভুতে ধরে। সেজন্য বেহুশভাবে ছেলেকে হত্যা করেছে। তার ভাষ্য, মেয়েকে পুলিশের কাছ থেকে নিয়ে এসে তিনি চিকিৎসা করাবেন।
আরও পড়ুন
নড়াইলে কিশোরের মরদেহ উদ্ধার
তবে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি শিশুটির বাবা জিয়াউর রহমান। তবে লাশ উদ্ধারের দিন ঘাতকদের বিচার চেয়েছিলেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শিশুটির মা রেহেনা খাতুনকে আটক করে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তিনি পুলিশের কাছে হত্যার দায় স্বীকার করেন। এরপর পুলিশ শুক্রবার বিকেলে তাকে আদালতে পাঠায়। আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কুমারখালী থানার ওসি মো. আকিবুল ইসলাম জানান, ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে জবানবন্দী দিয়েছেন শিশুটির মা। পরে আরও বিস্তারিত জানানো যাবে।
প্রতিনিধি/এসএস