images

সারাদেশ

কবর দেওয়ার মুহূর্তে কান্না করে উঠল ‘মৃত’ নবজাতক

উপজেলা প্রতিনিধি

০৩ জুন ২০২৪, ০৫:১৭ পিএম

মিরসরাইয়ে কবর দেওয়ার সময় কান্না করে উঠলেন মৃত নবজাতক। কবরস্থানে নামানোর পর হঠাৎ একটি শব্দ। এরপর পশুপাখির আওয়াজ মনে হলেও পরবর্তীতে কার্টুন খুলে দেখেন নবজাতকটি জীবিত এবং নড়াচড়া করছেন। দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয় নবজাতককে। ‘মারা যাওয়া’ সেই নবজাতক এখনও বেঁচে আছে!

শনিবার (১ জুন) চাঞ্চল্যকর এ ঘটনাটি ঘটেছে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামে। 

জানা গেছে, মিরসরাই উপজেলার মিঠানালা ইউনিয়নের পূর্ব মিঠানালা গ্রামের উমর আলী সারেং বাড়ির মো. ইউনুস আলীর স্ত্রী জেসমিন আক্তারের গত ২৬ মে গর্ভকালীন ব্যাথা অনুভব করলে উপজেলার মিঠাছড়া জেনারেল হাসপাতালে যান। সেখানে হাসপাতালের চিকিৎসক আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে সব ঠিক আছে বলে জানান চিকিৎসক ডা. শারমীন আয়েশা। এরপর গত ১ জুন (শনিবার) রক্তক্ষরণ হলে হাসপাতালে যাওয়ার পর জেসমিনকে স্যালাইন এবং ইনজেকশন পুশ করে ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করেন চিকিৎসক। পরে আল্ট্রাসনোগ্রাফি করানোর পরামর্শ দেন চিকিৎসক। এতে রিপোর্ট ভালো না বলে হাসপাতলে ভর্তি হওয়ার জন্য বলা হয় জেসমিনকে। 

সাত মাস আগে বিয়ে হয় মো. ইউনুস আলীর সঙ্গে জেসমিন আক্তারের। বিয়ের একমাস পর জেসমিন গর্ভবতী হয়। আনন্দের সীমা নেই এ দম্পতির সংসারে। এরপর কয়েকবার ডা. শারমিন আয়েশার শরনাপন্ন হয়েছেন। মা ও সন্তান দু’জনেই সুস্থ্য রয়েছেন বলে জানান এ চিকিৎসক। 

নবজাতকের বাবা মো. ইউনুস আলী অভিযোগ করেন, শনিবার সকালে আমার স্ত্রীর পেটে ব্যাথা উঠলে হাসপাতালে নিয়ে আসলে চিকিৎসক ডা. কারমীন আয়েশা চেকআপ করে বলেন বাচ্চা সুস্থ আছেন বলে জানান। এরপর আমার স্ত্রীর শরীরে স্যালাইন পুশ করার পর তীব্র ব্যাথা শুরু হয়। বিকেলে আবার চেকআপ করে বলেন বাচ্চা বেঁচে নেই। পরে ডেলিভারির ব্যবস্থা করেন। আমাকে বাচ্চা নিয়ে যাওয়ার জন্য কাটুনের ব্যবস্থা করতে বলেন। রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হওয়ার পর রাত ৯টার দিকে কার্টুন করে বাচ্চাকে কাফন দাফনের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাই। এরমধ্যে কবর খোঁড়াও সম্পন্ন হয়ে গেছে। বাচ্চার বয়স ৫ মাস ১৯ দিন বয়সী হওয়ায় পরিবার ও বাড়ির সবাই কার্টুন খুলতে নিষেধ করেন। পরে কবর দেওয়ার জন্য কাটুন খুলে দেখি বাচ্চা কান্না করছে। এরপর মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে হাসপাতালে ফোন করলে তারা বলেন, পাটিতে রাখেন বাচ্চা মারা যাবে! সেখান থেকে বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে আসলে হাসপাতালের লোকজন আমার বাচ্চাকে জীবিত অবস্থায় দেখে দ্রুত চট্টগ্রাম শহরে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন। রাত দেড়টায় আমি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করাই। আমার বাচ্চা এখন চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
 
তিনি আরও বলেন, তারা আমার বাচ্চাকে মৃত বলে ৫ মাস ১৯দিন বয়সে ডেলিভারি করে। বাচ্চা এখনও অপরিপক্ক। তারা কি ডাক্তার? নাকি অন্যকিছু। জীবিত বাচ্চাকে মৃত বলে কার্টুনে করে নিয়ে যেতে বলে। বেঁচে থাকলেও বাচ্চার শারীরিক অবস্থা এখন ভালো না। এর জন্য ডাক্তার শারমীন ও মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতাল দায়ী।  

মিরসরাই সদর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ফরহাদ আনোয়ার জানান, শনিবার রাতে বাজার থেকে বাড়ি যাওয়ার পথে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালে লোকজনের ভীড় দেখে ভেতরে যাই। গেয়ি দেখি ভূমিষ্ট হওয়া নবজাতক জীবিত রয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিভাবে মৃত বললো আমি বুঝতেছিনা। 

এ বিষয়য়ে ডা. শারমিন আয়েশা বলেন,  গত ২৬ তারিখে জেসমিন এসে আমাকে বলে আমি দুইদিন আগে পড়ে গিয়ে ব্যাথা পেয়েছি। আমার বাচ্ছার নড়াছড়া বন্ধ। তখন আমি চেকআপ করে দেখি সবকিছু ঠিক আছে। এরপর আমি তাকে অক্সিজেন এবং স্যালাইন দিয়েছি। তখন জেসমিন আমাকে বলে, এখন বাচ্ছা নড়াছড়া করতেছে। এরপর আমি তাদের বাচ্ছা নড়াছড়া করার জন্য ঔষুধ দি। পরবর্তীতে ১ তারিখে এসে বলে আমার রক্তক্ষরণ হচ্ছে, তখন আমি আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে দেখি তার জরায়ুমুখ খুলে বাচ্ছা নিচের দিকে নেমে যাচ্ছে। তখন ইনজেকশন দিয়ে জরায়ুমুখ বন্ধ এবং ব্যাথা কমানোর চেষ্টা করি। সাধারণত ২৮ সপ্তাহ হলে বাচ্চা ডেলিভারি করা সম্ভব হয়। তবে জেসমিনের বাচ্ছাটি ২২ সপ্তাহ হওয়ায় পরিবারের সঙ্গে কথা বলে বাচ্চাটি ডেলিভারি করা হয়। ডেলিভারির পর বাচ্ছাটি দুই হাত দুই পা নড়াছড়া করে। এরপর বাচ্চাটিকে প্রায় ২০ মিনিট আমার অবজারবেশনে রাখা হয়। পরে একটি কার্টুন রাখা হয়। আমি পরিবারকে বলি নাই যে, এখনি গোরস্থানে গিয়ে দাফন করতে হবে। পরে রাত সাড়ে ১০টার দিকে নার্সের মাধ্যমে খবর পাই, বাচ্চা নড়াছড়া করছে। 

যোগাযোগ করা হলে মিঠাছরা জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক মাসুদ রানা বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, রোগীর অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে শনিবার রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে ডেলিভারি হয়ে যায়। ডেলিভারি হওয়ার পর বাচ্চার ১ মিনিট নড়াছড়া ছিল। ১৫ মিনিট নবজাতককে চিকিৎসকের অবজারবেশনে রাখা হয়। রোগীর স্বজনরা নবজাতককে দেখতে আসে এবং হাসপাতাল থেকে বাচ্চাটি বাড়ি নিয়ে যায়। সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে বাড়ি নিয়ে গেছেন বলে  দাবি করে তিনি।

তিনি বলেন, নবজাতক মারা গেছে তাদের বলা হয়নি। তারা বাড়ি নিয়ে কেন কবর দিচ্ছে সেটাও আমরা জানি না। যদি মারা যেত আমরা ড্রেথ সাটিফিকেট দেব, রেজিস্ট্রারে এন্ট্রি করব। 

এ বিষয়ে মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মিনহাজ উদ্দিন বলেন, এই ধরনের ঘটনা আমি অবগত নই। সাধারণত ৫-৬ মাসের বাচ্চা ভূমিষ্ট হলে বাঁচার কথা না। ভুক্তভোগী পরিবার অভিযোগ দিলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/এজে