images

সারাদেশ

পিরোজপুরে বেড়িবাঁধ ভেঙে ২ উপজেলা প্লাবিত,  সুপেয় পানির তীব্র সংকট

জেলা প্রতিনিধি

০১ জুন ২০২৪, ০৮:৩৩ পিএম

পিরোজপুরে দুই  উপজেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তান্ডবে ইন্দুরকানী ও মঠবাড়িয়ার বিভিন্ন পয়েন্টে জোয়ারের পানির চাপে বেড়িবাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে হাজার হাজার মানুষ। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, পুকুর, মাছের ঘের ও ফসলি জমি। জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার টগড়া ও মঠবাড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে।

স্থানীয়রা জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের জোয়ারের পানির চাপে গত রবিবার বিকেলে থেকে দুই উপজেলার পয়েন্টে বেড়িবাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়েছে পানি। ডুবে গেছে রাস্তাঘাট। ফলে চরম দুভোর্গে পড়েছেন এসব গ্রামের বাসিন্দারা।

চন্ডিপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মশিউর রহমান মঞ্জু  জানান, প্লাবিত এলাকায় চরম মানবিক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ঘর থেকে বাইরে যেতে পারছেন না কেউ। দিন মজুরেরা কাজে যেতে পারছেন না। অধিকাংশ পরিবারের রান্নাঘরের চুলা জ্বালাতে পারছেন না। ফলে সেখানে খাদ্য ও পানযোগ্য পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ইউএনও স্যার এসে দেখে গেছে তিনি বলেছেন জেলা প্রসাশককে বলেছেন দ্রুত কাজ করা হবে।

স্থানীয় অনেকের অভিযোগ, ঘূর্ণিঝড় রিমালের দুই-তিন পর এখানে মেম্বার, চেয়ারম্যান ও ইউএনও আসছিলো কিন্তু আমাদের অবস্থা অনেক খারাপ। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ বলে বোঝানো যাবে না। ঘরে রান্না করতে পারি না। চাল-চুলা কিছু নাই। রাস্তায় রান্না করে খাই। আমাদের খাবারও সংকট কেহ দেখার নাই। 

এ ব্যাপারে ইন্দুরকানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বকর সিদ্দিকী জানান, রিমালের কারনে  বেড়িবাঁধ ভেঙে গত রবিবার থেকে গ্রামগুলো প্লাবিত হয়েছে। আমি উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি যত দ্রুত সম্ভব সেখানে মেরামত করা হবে এবং খাবার পৌছেয়েছি।

পিরোজপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী  নুসাইর হোসেন জানান,  পিরোজপুরে ইন্দুরকানী যে বেড়িবাঁধ ভেঙেছে সেটা দ্রুত মেরামত করা হবে।  মঠবাড়িয়া বিভিন্ন জায়গায় আমাদের বেড়িবাঁধ আংশিক নষ্ট হলে সেখানে মেরামত করা হয়েছে। 

ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রায় ৩০ ঘণ্টাব্যাপী তাণ্ডব স্থলভাগে যে জলোচ্ছ্বাস হয়েছে তাতে জেলা শহর পিরোজপুরসহ উপজেলা শহরগুলো প্লাবিত হওয়ায় বাসিন্দারা সুপেয় পানির তীব্র সংকটে পড়েছে।

পিরোজপুর থানা রোডের বাসিন্দা মো. সালেহ উদ্দিন জানান, তাদের দালানটি সাধারণ অন্যান্য বাড়ির চেয়ে অপেক্ষাকৃত উঁচুতে। কিন্তু দুই দিন আগের রেমালের প্রভাবে তাদের বাড়ির এলাকাসহ শহরের অধিকাংশ এলাকা চার-পাঁচ ফুট পানিতে প্রায় ৮-১০ ঘণ্টা নিমজ্জিত ছিল। ফলে রাস্তা ও আশপাশের ময়লাযুক্ত পানি ভূগর্ভস্থ ট্যাংকের মধ্যে ঢুকে যায়। যদিও দুই দিন ধরে পৌর পানি সরবরাহের পানি কোনো কোনো এলাকায় পাওয়া গেলেও তা ভূ-গর্ভস্থ ট্যাংকে সংরক্ষণ করে ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ। কোনো কোনো  পৌরবাসী বাধ্য হয়ে এই পানি পানসহ গৃহস্থালী কাজে ব্যবহার করেন বটে কিন্তু এর ফলে ডায়রিয়াসহ পেটের পীড়া, টাইফয়েড, জন্ডিস ইত্যাদি মারাত্মক রোগের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া এই ট্যাংক পরিষ্কার করার মতো প্রয়োজনীয় লোকবল পৌরসভাসহ বেসরকারিভাবে পাওয়া না যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়জনিত জলোচ্ছ্বাসে দূষিত পানি শহরবাসীর জন্য আরেকটি বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

পিরোজপুর পৌরসভার পানি সরবরাহ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মচারী রইস উদ্দিন জানান, এ সমস্যা জানিয়ে শত শত পৌরবাসী তাদের সাহায্য চেয়ে মোবাইল ফোনে এবং সরাসরি পৌর ভবনে এসে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তারা তেমন কোনো সেবা দিতে পারছেন না। এ দিকে মঠবাড়িয়া, ভাণ্ডারিয়া, কাউখালী, ইন্দুরকানী, নেছারাবাদসহ উপজেলা শহরসমূহ থেকেও এরকম বিপদের খবর পাওয়া যাচ্ছে। উপজেলা শহরসহ অন্যান্য এলাকার অবস্থাও অনুরূপ। এসব শহরের দুই একটিতে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা থাকলেও ভূ-গর্ভস্থ ট্যাংক ময়লা পানিতে নিমজ্জিত থাকায় তার ব্যবহার দুরূহ হয়ে পড়েছে। কোথাও কোথাও গভীর নলকূপ দিয়ে পানি উঠানো গেলেও তা সংরক্ষণের সময় দূষিত হয়ে পড়ে। অন্যদিকে গ্রামাঞ্চল ও হাট-বাজারে সুপেয় পানির সংকট তীব্র। খাবার পানির উৎস পুকুর প্লাবিত হয়ে লোনা ও দূষিত পানিতে ভরে থাকায় গ্রামের মানুষের সুপেয় পানির সংকট প্রবল। গভীর ও অগভীর নলকূপ দিয়ে কোথাও কোথাও এ সংকট মোকাবিলা করার চেষ্টা চললেও জেলার অধিকাংশ দুর্গত এলাকার মানুষ বিপাকের মধ্যে রয়েছে।

এদিকে জেলা সদর ও ৭টি উপজেলা সদরে বিদ্যুৎ পৌঁছালেও বেশির ভাগ গ্রামে নেই বিদ্যুৎ। 

জেলা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, পিরোজপুরের বিদ্যুৎ বেশ কয়েকটি এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে যাওয়াসহ বিদ্যুতের লাইনের ওপর গাছ ভেঙে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।লাইন মেরামত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। তাই জেলার ৭টি উপজেলায় বিদ্যুৎ কিছু এলাকায় এখনো সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আমরা কাজ করে যাচ্ছি দ্রুত সংযোগ দেওয়া হবে।

প্রতিনিধি/ এজে