জেলা প্রতিনিধি
২৮ মে ২০২৪, ০৮:৫৫ এএম
ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে খুলনার দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলায় বাঁধ ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, রোববার রাতে নদীতে জোয়ারের তীব্র চাপে কয়রার মহেশ্বরীপুর ইউনিয়নের সিংহেরকোণা, মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বেলাল গাজীর বাড়ির সামনের বাঁধ ভেঙে যায়। কয়েকটি জায়গায় বেড়িবাঁধ ভেঙে জলোচ্ছ্বাসের তোড়ে তিন উপজেলায় ভেসে গেছে শত শত ঘেরের মাছ। স্বেচ্ছাশ্রমে নিজেরাই ভাঙা বাঁধ মেরামতের কাজ করছেন গ্রামবাসী। এছাড়া ঝড়ো বাতাসে ধসে পড়েছে বেশ কিছু কাঁচা ঘর, উড়ে গেছে টিনের চাল।
গত রোববার সন্ধ্যায় ১২০ কিলোমিটার বেগে সুন্দরবন দিয়ে উপকূলে আঘাত হানে রেমাল। জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলাসহ কয়েকটি জেলার বিভিন্ন এলাকা।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়টির তাণ্ডবে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা কয়েক ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে তলিয়ে গেছে। বেড়িবাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে উপকূলীয় জেলাগুলোর নিচু এলাকা। ঝড়ের প্রভাবে বাড়িঘর, গবাদিপশু, মাঠের ফসল, ক্ষেতের ফল ও সবজি এবং প্রচুর গাছপালার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। মৃত্যুর খবর এসেছে কয়েকজনের।
খুলনার কয়রা, পাইকগাছা ও দাকোপ উপজেলা ঘেরে মাছ চাষের জন্য বিখ্যাত। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসে প্রায়ই ক্ষতির মুখে পড়ে মাছ চাষিরা। রেমালের প্রভাবে কয়রা উপজেলার দশালিয়া মহেশ্বরপুর, নয়য়ানি, পাইকগাছার কুমখালি, খুদ খালি, গড়ইখালী, আলমতলার বেড়িবাঁধ ভেঙেছে শিবসা নদীর প্রবল স্রোতে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত মানুষ পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
এলাকাবাসী ভাঙনের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ঠিকাদার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের দায়ী করেছেন। তবে বাঁধ রক্ষায় চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আশরাফুল আলম।
স্থানীয় সংসদ সদস্য রশিদুজ্জামান মোড়ল বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বাঁধ উপচে এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। আসছে জোয়ারের আগেই দুর্বল এবং ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত না হলে তিনটি উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা করছেন মানুষ।
কয়রার মহারাজপুরের ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, রোববার রাতের জোয়ারের চাপে ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় প্রায় ৫০ মিটার বাঁধ ভেঙে কপোতাক্ষ নদের পানি ঢুকে পড়েছে। এতে অন্তত দুটি গ্রাম ও কয়েক’শ চিংড়ির ঘের তলিয়ে গেছে।
মহেশ্বরীপুরের ইউপি চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ শিকারি বলেন, তার ইউনিয়ন পরিষদের সিংহেরকোণা এলাকায় বাঁধ ভেঙে গেছে। এতে পানি ঢুকে অন্তত সাতটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া অসংখ্য চিংড়ির ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে।
ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে চাইলে কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম তারিক উজ জামান বলেন, ‘কয়েকটি স্থানে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে খবর পেয়েছি। এছাড়া ভারী বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডবে অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জেনেছি।
দাকোপ উপজেলার শিবসা ও ঢাকী নদীর বাঁধ ভেঙে তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ড এলাকা তলিয়ে গেছে।
তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য ক্ষিতীশ গোলদার বলেন, ‘একই এলাকায় পাঁচটি পয়েন্ট ভেঙে পানি ঢুকছে। কামিনীবাসিয়া গ্রামের ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের প্রায় পুরোটা লোনাপানি ঢুকে তলিয়ে গেছে।’
পাইকগাছা উপজেলার শিবসা নদীর বাঁধ ভেঙে সাগরের নোনা পানিতে প্লাবিত হয়েছে অর্ধশতাধিক গ্রাম। ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় এক লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এমআর