২৭ মে ২০২৪, ১২:৩৭ এএম
ঘূর্ণিঝড় রেমাল এর প্রভাবে আজ সকাল থেকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর আরও বেশি উত্তাল রয়েছে। সকালে সমুদ্রের স্বাভাবিক জোয়ারের চাইতে ৮-১০ ফুট পানি বৃদ্ধি পেলেও রাতে বৃদ্ধি পেয়েছে আরও কয়েক ফুট। জিনজুরে বাতাসের গতিবেগ মোটামুটি স্বাভাবিক থাকলেও রোববার (২৬ মে) সন্ধ্যা থেকে বর্তমানে এর তীব্র গতিবেগ অব্যাহত রয়েছে। সন্ধ্যার পর থেকে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় রেমাল স্থলভাগে আঘাত হানার কথা থাকলেও এর প্রভাবে ঝড়োবৃষ্টি ও তীব্র বাতাস তাণ্ডব চালাচ্ছে। এতে এক চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে কুয়াকাটা উপকূলের জনজীবনে। যেকোনো সময় রেমাল প্রবল আঘাত হানার সম্ভাবনা থাকলেও ক্রমশ শক্তি হারাচ্ছে এটি।
গত শুক্রবার রাত থেকে আজ মধ্যরাত পর্যন্ত একটানা বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় এবং জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় অঞ্চল ৭-৮ ফুট প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও উপজেলার অনেক কাচা বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল ইসলাম এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে উপজেলার ধূলাসার ইউনিয়নে বাবলাতলা গ্রামের এক স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ হাওলাদার (২৫) আশ্রয় কেন্দ্রে যাওয়ার পথে বাতাসের তীব্রতায় পা পিছলে নদীতে ছিটকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ওই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আ. রহিম হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত ২০ মে সমুদ্রে ৬৫ দিনের মাছধরার উপর নিষেধাজ্ঞা চলমান থাকার কারণে সকল মাছধরা ট্রলারসমূহ ইতোমধ্যে কুয়াকাটা উপকূলের বিভিন্ন নদ-নদীসহ আলিপুর-মহীপুর মৎস্য বন্দরে নিরাপদ আশ্রয়ে রয়েছেন বলে জানান কলাপাড়া উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা।
ঘূর্ণিঝড় আতঙ্কে ইতোমধ্যে কুয়াকাটা ভ্রমণে আসা অধিকাংশ পর্যটক কুয়াকাটা ত্যাগ করেছেন বলে হোটেল মোটেল ওয়ানার্স এসোসিয়েশন সূত্র নিশ্চিত করেছেন। আবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে আগত অনেক পর্যটক বাধ্য হয়ে এখনো কুয়াকাটা অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। আজ সকালে কিছু সংখ্যক পর্যটক কুয়াকাটা ত্যাগ করেছেন। তবে কিছু সংখ্যক পর্যটক ঘূর্ণিঝড় রেমাল পরিস্থিতি দেখার জন্য কুয়াকাটা অবস্থান করছেন বলে আগত পর্যটকদের সাথে কথা বলে জানা যায়।
অবস্থারত এসব পর্যটকদের দিনজুড়ে সৈকত এলাকায় উল্লাস করতে দেখা গেছে। এসকল পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় কুয়াকাটার আবাসিক হোটেল-মোটেল এর কক্ষগুলোকে উম্মুক্ত করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছেন কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিওন। তবে স্থানীয় বাসিন্দাসহ জেলেদের জন্য ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন আবাসিক হোটেল-মোটেল গুলোকে উম্মুক্ত করে দেবেন বলে সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনের তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে লতাচাপলী সিপিপি টিম লিডার শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, কুয়াকাটা সাগর সংলগ্ন এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের ঘূর্ণিঝরের প্রভাব থেকে রক্ষায় নিরাপদ আশ্রয় গ্রহণের জন্য বারবার নির্দেশনা দেওয়া হলেও, কুয়াকাটা উপকূলের অধিকাংশ বাসিন্দারা তাদের বসতগৃহে অবস্থান করছে।
অন্যদিকে আজ বিকেল থেকে একটানা তীব্র বাতাসের গতিবেগ বেড়ে যাওয়ায় কুয়াকাটা সৈকত এলাকার স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দোকানের মালামাল সরিয়ে নিতে দেখা গেছে। ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টের বস্তা সরে গিয়ে সমুদ্র সংলগ্ন এলাকায় জোয়ারের পানিতে কয়েক ফুট প্লাবিত হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, আবহাওয়া অফিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পেড়েছি যে সমুদ্রে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমাল যেকোনো সময় উপকূলীয় অঞ্চলে আঘাত হানতে পারে। সে লক্ষ্যে কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ রিজিয়নের পক্ষ থেকে সতর্কতা অবলম্বনসহ সকল পর্যটকদের নিরাপদে রাখার জন্য সৈকত এলাকায় সারাক্ষণ মাইকিং অব্যাহত রেখেছি। কুয়াকাটার স্টক হোল্ডারদের নিরাপদে থাকার জন্য এবং সমুদ্র এলাকায় তাদের দোকানের যেসকল পসরা রয়েছে তা নিরাপদে রাখার জন্য বলেছি। এছাড়াও আবাসিক হোটেল-মোটেল সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেছি, যাতে দুর্যোগ চলার সময়ে অবস্থানরত পর্যটক দর্শনার্থীরা এদিক-সেদিক চলাচল করতে না পারে সে বিষয়ে সতর্ক করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে যেসকল পর্যটকরা ভ্রমণে এসে যাতে কোনো দুর্ঘটনায় পতিত না হয় তাদের নিরাপদের রাখার জন্য বলেছি। অন্যদিকে স্থানীয় প্রশাসনের সাথে সমন্বয় করে সার্বক্ষণিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় আমরা সর্বদা প্রস্তুত রয়েছি।
পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলায় ৭০৩টি সাইক্লোন শেল্টার ৩৫টি মুজিব কিল্লা, ৭৩০ মেট্রিক টন চাল, ১০ লাখ টাকার শিশু খাদ্য, ১০ লাখ টাকার গোখাদ্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া শুকনা খাবার রয়েছে ১৫০০ প্যাকেট। নগদ টাকা রয়েছে ২৪ লাখ ৭ হাজার ৫০০ টাকা।
/এএস