জেলা প্রতিনিধি
২৬ মে ২০২৪, ০৮:১১ পিএম
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রবল ঘূর্ণিঝড় রেমালে পরিণত হয়ে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ঝড়ের কারণে মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে ঝড়ের প্রভাবে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলীলের সুন্দরবন সংলগ্ন নদ-নদী উত্তাল হয়ে উঠেছে। ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে শুরু হয়েছে হালকা বৃষ্টিপাত। স্থানীয়দের আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
শ্যামনগর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা পিআইও মো. শাহিনুল ইসলাম জানান, আজ সকালে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতের নির্দেশনা পেয়ে আমরা ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের নিকটবর্তী আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছি। বিকাল ৫টা পর্যন্ত এ উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে প্রায় ৯ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আরও লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়ার কাজ চলছে।
শ্যামনগর উপজেলার চুনা নদীর তীরের বুড়িগোয়ালিনী ফরেস্ট মাধ্যমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে বিকাল ৪টার পর ৪০-৫০জন আশ্রয় নিয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বুড়িগোয়ালিনী মোল্লাপাড়া গ্রামের জহুর আলী গাজী (৬৫) বলেন, ঝড়ের অবস্থা খুব খারাপ মনে হচ্ছে। এই জন্য ভয়ে বউ, পোতা-পুতনী নিয়ে আশ্রয়কেন্দ্রে আইছি। আইলায় সাহস করে অনেক মানুষ বাড়িতে থেকে মরছে। তবে আমাদের গ্রামের অনেকে এখনও আশ্রয় কেন্দ্রে আসেনি। তারা ঘরবাড়ি কি হয় এই ভেবে আশ্রয় কেন্দ্রে আসছে না।
আশ্রয়কেন্দ্রটির পাশেই ছোট্ট ঝুপড়িতে বসবাস করেন শাহিন ইকবলের পরিবার। সেখানে সন্ধ্যা ছয়টার দিকে গিয়ে দেখা তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রহিমা খাতুন (২৬) ও তার মা বসে আছে। অন্তঃসত্ত্বা হয়েও ঝুঁকি নিয়ে এখনো কেন আশ্রয় কেন্দ্রে জানি এমন প্রশ্ন শাহীন ইকবালের স্ত্রী রহিমা খাতুন বলেন, আমাগো ঘর তো আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে। তাই চিন্তা করছি ঝড় বেশি আসলে তাই যাবো। ওখানে অনেক লোক আমি অসুস্থ তো তাই একটু নিরিবিলি বসে আছি।
একই ইউনিয়নের দাতিনাখালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে চুনা নদীপারের ৫০টি পরিবারের অন্তত এক থেকে দেড়শ জন। এর মধ্যে কাঞ্চন বিবির বয়স (৯০)। তিনি বলেন, ‘বুড়া মানুষ। বন্যা শুরু হলি দৌড় দিয়া কেন্দ্রে আসার শক্তি নাই। তাই আগেভাগেই আইছি।
তবে, এসব আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া ব্যক্তিদের কাছে এখনও পর্যন্ত শুকনা খাবার পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, এখনও পর্যন্ত আমাদের কোনো খাওয়ার দেওয়া হয়নি। এখানে যারা দায়িত্বে আছেন তাদের তারা বলছেন রাত্রে দেয়া হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নাজিবুল আলম বলেন, দুর্যোগ মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনাঘয় আমরা প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস এবং পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রতিনিধি/এজে