জেলা প্রতিনিধি
২৫ মে ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
ঘূর্ণিঝড় রেমালের পূর্বাভাসে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধ নিয়ে চাপা আতংক বিরাজ করছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপকূলজুড়ে।
শ্যামনগর উপজেলার ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে প্রায় ১৫ কিলোমিটার জরাজীর্ণ ও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় ঝড়ের প্রভাবে নদীতে পানির চাপ বাড়লেই বেড়িবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার শংকায় দিন কাটছে তাদের।
বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ, কৈখালী, রমজাননগর, কাশিমাড়ি ও আটুলিয়া ইউনিয়নের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব এলাকায় বেড়িবাঁধের বেশকিছু পয়েন্ট অতিঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। যা সামান্য জলোচ্ছ্বাসের চাপ সামলানোর ক্ষমতাও রাখে না।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঝড়ের পূর্বাভাস না পেলে ঘুম ভাঙে না পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তখন তারা তোড়জোড় শুরু করে।
বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাজী নজরুল ইসলাম বলেন, বুড়িগোয়ালিনীর দুর্গাবাটিতে তিন জায়গায় ও দাতিনাখালীর দুই জায়গাসহ মোট ছয়টি স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জি.এম মাসুদুল আলম বলেন, ঝড়ের নাম শুনলেই আমাদের এলাকার মানুষের প্রাণ কেঁপে ওঠে। প্রায় প্রতিবছরই জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে এখানকার মানুষের জানমালের ক্ষতি হয়। তবে পাউবো যে বাঁধ নির্মাণ করে, তা কাজ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে যায়। সাধারণ জোয়ারে সেই বাঁধ প্লাবন ঠেকাতে পারে না, আর জলোচ্ছ্বাসে কী করে ঠেকাবে?
তিনি জানান, তার ইউনিয়নে অন্তত ৮টি স্থান ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। এর মধ্যে হরিষখালী, পার্শেমারী, খলষিবুনিয়া, লেবুবুনিয়াসহ ৫টি স্থানে বেড়িবাঁধ জরাজীর্ণ হয়ে আছে।
আটুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান আবু সালেহ বাবু বলেন, আটুলিয়া ইউনিয়নে ছয়টি পয়েন্টে পাউবোর বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে বিড়ালক্ষ্মীতে তিনটি, বড়কুপটে একটি ও খোন্তাকাটার একটি জায়গা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ঘূর্ণিঝড় রেমাল আঘাত হানলে এসব জায়গায় বাঁধ টিকবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা রয়েছে।
কৈখালী ইউনিয়নের ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আব্দুর রহিম বলেন, বর্তমানে ইউনিয়নের পূর্ব কৈখালী, নৈকাটিসহ বেশ কয়েক জায়গায় বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে বড় ক্ষতি হতে পারে। বাঁধ ভাঙলে গোটা ইউনিয়ন নদীর পানিতে তলিয়ে যাবে।
এ অঞ্চলের বেড়িবাঁধ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের (পওর) দায়িত্বে থাকা সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন বলেন, শ্যামনগর উপজেলায় মোট ১২৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ রয়েছে। এর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে ৫ কিলোমিটার, আর অতিঝুঁকিপূর্ণ ১ কিলোমিটার। ঝড়ের আভাস পেয়ে অতিঝুঁকিপূর্ণ ১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের সংস্কার করা হচ্ছে।
এদিকে, ঘূর্ণিঝড় রেমাল মোকাবেলায় জরুরী প্রস্তুতি সভা করেছে সাতক্ষীরা জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি।
সভায় জানানো হয়, উপকূলীয় শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ ও দেবহাটা এলাকার আশ্রয় কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত রাখা, শুকনা খাবার প্রস্তুত রাখা, ইউনিয়নে মেডিকেল টিম প্রস্তুতকরণ, খাওয়ার পানি মজুদ রাখা, দুর্যোগকালীন ও দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে উদ্ধার কার্যক্রম চালানোর জন্য ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স ও স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সাথে জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মচারীদের নিজ নিজ এলাকায় অবস্থানের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিনিধি/একেবি