images

সারাদেশ

চট্টগ্রাম বন্দরে ২৩ নাবিককে সংবর্ধনা, আবেগঘন পরিবেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

১৪ মে ২০২৪, ০৬:২৪ পিএম

দীর্ঘ দুই মাস নানা ঝড়-ঝঞ্ঝার পর চট্টগ্রাম বন্দরে স্বজনদের মাঝে ফিরেছেন সোমালীয় জলদস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া কেএসআরএম গ্রুপের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক।

মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টামিনাল-১ (এনসিটি) জেটিতে পৌঁছে জাহাজ থেকে একে একে নেমে আসেন তারা। এনসিটি জেটিতে আগে থেকে অপেক্ষায় ছিলেন নাবিকদের অনেক স্বজন, জাহাজের মালিক পক্ষসহ বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা।

জেটিতে নাবিকরা নামার পর স্বজনরা তাদের জড়িয়ে ধরেন। এ সময় কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন। বন্দরের এনসিটি এলাকায় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মুহূর্তে যেন নিস্তব্ধতা নেমে আসে কর্মচঞ্চল জেটিতে।

এদিকে এনসিটি-১ নম্বর জেটিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ নাবিকদের জন্য এক সংবর্ধনার আয়োজন করে। সেখানে তাদের লালগালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। কেএসআরএমের পক্ষ থেকে নাবিকদের বরণ করা হয়।

Chittagong1

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। উপস্থিত হন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, বন্দরের পরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ সোহায়েল, সচিব ওমর ফারুক।

চিফ অফিসার মো. আতিক উল্লাহ খান বলেন, বীভৎস সেই দিন থেকে আলোর দিনে ফিরেছি। দুঃসহ সেই স্মৃতির কথা আর মনে করতে চাই না। আমরা ট্রমা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছি। আপনারা দোয়া করবেন। দুই সন্তানকে কাছে পেলাম। বাসায় আরেক সন্তান কান্না করছে। তার কাছে ফিরতে হবে দ্রুত।

এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) বেলা ১২টার দিকে কুতুবদিয়ায় ৫৬ হাজার মেট্টিকটন চুনাপাথর বহন করা জাহাজটি নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করা হয়। এরপর নাবিকরা চট্টগ্রাম বন্দর জেটির উদ্দেশে কুতুবদিয়া থেকে রওনা হন। জাহাজটি থেকে বর্তমানে চুনাপাথর খালাস করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন

২৩ নাবিকের পরিবারে ফিরল ‘ঈদ আনন্দ’, খুশিতে কাঁদলেন স্বজনরা

খালাস শেষে জাহাজটি বুধবার সন্ধ্যার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছবে। এমন ধারণা করছেন চট্টগ্রামের কবীর গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিংয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মেহেরুল করিম।  

তিনি বলেন, সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটের দিকে জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ কুতুবদিয়ায় বঙ্গোপসাগরে নোঙর করে। একইদিন এমভি জাহান মণি-৩ নামে একটি লাইটারেজ জাহাজে করে ২৩ নাবিকের নতুন একটি টিম কুতুবদিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা দেয়। সেই জাহাজে করে ফিরেন জলদস্যুর হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ২৩ নাবিক।

Chittagong2

নাবিকরা হলেন, এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের মাস্টার মোহাম্মদ আবদুর রশিদ, চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খান, সেকেন্ড অফিসার মোজাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, থার্ড অফিসার এন মোহাম্মদ তারেকুল ইসলাম, ডেক ক্যাডেট সাব্বির হোসাইন, চিফ ইঞ্জিনিয়ার এ এস এম সাইদুজ্জামান, সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. তৌফিকুল ইসলাম, থার্ড ইঞ্জিনিয়ার মো. রোকন উদ্দিন, ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার তানভীর আহমেদ, ইঞ্জিন ক্যাডেট আইয়ুব খান, ইলেকট্রিশিয়ান ইব্রাহীম খলিল উল্লাহ এবং ক্রু মো. আনোয়ারুল হক, মো. আসিফুর রহমান, মো. সাজ্জাদ হোসেন, জয় মাহমুদ, মো. নাজমুল হক, আইনুল হক, মোহাম্মদ শামসুদ্দিন, মো. আলী হোসেন, মোশাররফ হোসেন শাকিল, মো. সালেহ আহমদ, মো. শরিফুল ইসলাম ও মো. নুরুদ্দিন।

আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদুল্লাহকে জিম্মি করে সোমালিয়ান জলদস্যুরা। অস্ত্রের মুখে দস্যুরা সেখানে থাকা ২৩ নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রাখে। আটকের পর জাহাজটিকে সোমালিয়ার উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে জিম্মিকালীন সময়ে মালিকপক্ষের তৎপরতায় সমঝোতা হয় জলদস্যুদের সঙ্গে।

আরও পড়ুন

এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্বে নতুন ২৩ নাবিক

চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছেন ২৩ নাবিক

১৩ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে দস্যুরা নেমে যায়। এর আগে একই দিন বিকেলে দস্যুরা তাদের দাবি অনুযায়ী মুক্তিপণ বুঝে নেয়। একটি বিশেষ উড়োজাহাজে মুক্তিপণ বাবদ তিন ব্যাগ ডলার এমভি আবদুল্লাহর পাশে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ তিনটি কুড়িয়ে নেয়। দস্যুমুক্ত হয়ে ১৩ এপ্রিল দিবাগত রাতে সোমালিয়ার উপকূল থেকে আরব আমিরাতের পথে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ।

Chittagong4

২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়াহ পৌঁছে। সেখানে কার্গো খালাস করে জাহাজটি একই দেশের মিনা সাকার থেকে কার্গো লোড করে দেশের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন এমভি আবদুল্লাহ আগে গোল্ডেন হক নামে পরিচিত ছিল। ২০১৬ সালে তৈরি বাল্ক কেরিয়ারটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। গত বছর জাহাজটি এসআর শিপিং কিনে নেয়। বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে চলাচলকারী এরকম মোট ২৩টি জাহাজ আছে কবির গ্রুপের বহরে।

২০১০ সালের ডিসেম্বরে আরব সাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়েছিল একই কোম্পানির আরেক জাহাজ জাহান মণি। ওই সময় জাহাজের ২৫ নাবিক এবং প্রধান প্রকৌশলীর স্ত্রীকে জিম্মি করা হয়। নানাভাবে চেষ্টার পর ১০০ দিনের চেষ্টায় জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্তি পান তারা।

আইকে/জেবি