জেলা প্রতিনিধি
১৩ মে ২০২২, ০৩:২০ পিএম
সীমান্ত জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ঔষধিগুণ সম্পন্ন ব্ল্যাক রাইস প্রজাতির ধানের চাষ শুরু হয়েছে। এই ব্ল্যাক রাইস ঔষধি গুণসম্পন্ন হওয়ায় ক্ষুধা নিবারণের পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। এ ধান চাষে অতিরিক্ত ঝুঁকি এবং খরচ নেই। তেঁতুলিয়া উপজেলা সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সীমান্ত সংলগ্ন ইসলামবাগ গ্রামে এ ধান চাষ করে সবার দৃষ্টি কেড়েছেন ঢাকা কলেজ থেকে অর্থনীতিতে স্নাতকোত্তর করা শিক্ষার্থী সাদেকুল ইসলাম সুসম।
কৃষি প্রধান বাংলাদেশের উত্তরের প্রান্তিক জনপদ পঞ্চগড়ের উর্বর মাটিতে উচ্চ ফলনশীল হওয়ায় চা চাষসহ আগে থেকেই বিভিন্ন ধরণের ধান চাষ হয়ে আসছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে ব্ল্যাক রাইস নামের ভিন্ন প্রজাতির ধানের চাষ। এটি সাধারণ ধানের মত চাষ হলেও অতিরিক্ত সার বা পানির প্রয়োজন হয় না। প্রয়োজন হয় না আলাদা কোনো পরিচর্যারও। এটি একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান। এ ধানের চাল উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়ায় অন্যান্য আধুনিক ধান চাষের মতই প্রথমবার এই ধান চাষ করছেন সাদেকুল।
তেঁতুলিয়া উপজেলার রওশনপুর এলাকার বাসিন্দা সাদেকুল জানান, করোনাকালে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে বাবার ৬০ শতক জমিতে ব্ল্যাক রাইস ধানের চাষ করেন তিনি। গ্রামের বাড়ির পাশে একটি জমিতে গত জানুয়ারি মাসের শেষে দিকে এই ধান রোপণ করেন তিনি। কিছুদিনের মধ্যেই এ ধান কেটে মাড়াই করবেন। এই কালো ধানের চাষ এবং উপকারিতা শুনে অনেক কৃষকই এ ধানের বীজ সংগ্রহে জন্য অনেকে আগে থেকে বলে রেখেছেন। মাত্র ৩ মাসের মধ্যে প্রত্যেক গাছেই প্রচুর পরিমাণে ফলন ধরে।
সাদেকুল আরও জানান, ২ বিঘা জমিতে উৎপাদিত এই ধান লক্ষাধিক টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি।
এদিকে, শুধু সাদেকুলই নয় অন্যান্য চাষিরাও এ ধান চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে জানান তিনি। সাদেকুল বলেন, এই ধান চাষে খরচ কম এবং ফলন বেশি হয়।
ধান চাষি সাদেকুল পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনই হাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ গ্রামের ফেরদৌস কামালের ছেলে। বর্তমানে বাবার জমির দেখাশোনা ও চাষাবাদ করছেন তিনি। ইউটিউব ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে ঢাকার গাজীপুর থেকে এ কালো ধানের বীজ সংগ্রহ করেন তিনি। ধানের শীষও সাধারণ ধানের চেয়ে বড়। অন্যান্য ধানের মতোই এ ধানের পরিচর্যা করতে হয়। ধানগুলো দেখতে যেমন কালো, চালও দেখতে তেমন কালো। এ চালের ভাতও কালো এবং পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। বাড়িতে পরিবার নিয়ে খাওয়ার এবং উৎপাদন কেমন হয়, তা জানতে প্রথম ব্ল্যাক রাইস বা কালো ধান চাষ করেছেন বলে জানান সাদেকুল।
আরও পড়ুন: ‘এডা ধান আইছে কালা কালা— লাগাইতে খরচ কম, লাভও বেশি’
তিনি বলেন, বাংলাদেশে দশ প্রকারের কালো ধান চাষ হয়। তবে আমি তিন প্রকারের ধান চাষ করেছি। বিঘাপ্রতি জমিতে ১৫-১৮ মণ ধান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মূল্য যদি আকর্ষণীয় হয় এবং চাহিদা যদি থাকে তাহলে আগামীতে ব্লাক রাইসের চাষ আরও বৃদ্ধি করবো।
সাদেকুল বলেন, ব্ল্যাক রাইসের চালে মূলত ডায়াবেটিস, স্নায়ুরোগ ও বার্ধক্য প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এতে ভিটামিন, ফাইবার ও মিনারেল রয়েছে। তাই কালো চাল উৎপাদনে উদ্যোগী হয়েছি। এই ধানের উৎপাদনের পরিমাণ এবং মূল্য নির্ধারণ এখনই করা যাচ্ছে না। ধান ঘরে তুলে চাল করার পর পরিমাণ বোঝা যাবে। আর বাজারজাত করার মাধ্যমে জানা যাবে আর্থিক মূল্য। এ জন্য কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
এ ধানকে নিষিদ্ধ ব্লাক রাইসও বলা হয়। কারণ এক সময় চীনের রাজা-বাদশাদের খাবার ছিল ব্ল্যাক রাইস। যা প্রজাদের জন্য চাষ করা বা খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। এ কারণে একে নিষিদ্ধ চাল বলা হয়।
স্থানীয় চাষীরা জানান, এই ধান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন অনেকে। ফলন ভাল এবং দামি হওয়ায় স্থানীয় কৃষকরাও এ ধান চাষের উদ্যোগ নিচ্ছেন।
তেঁতুলিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান, ব্ল্যাক রাইস একটি অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ধান। এ ধান সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে। এ চালের বর্তমান চড়া মূল্য হলেও চাষাবাদ বেশি হলে দাম কমে আসবে। ব্ল্যাক রাইসকে বর্তমানে পৃথিবীর নতুন সুপার ফুড হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ ধানের চাল উৎপাদন করে সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া গেলে তা দেশের কৃষি অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলেও মনে করেন তিনি।
এএ