জেলা প্রতিনিধি
০৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৪৯ পিএম
পরিবারের বড় ছেলে স্বপ্ন ছিল বিদেশে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের অভাব-অনটন দূর করবেন। পরিবারের সদস্যদের মুখে ফোটাবেন হাসি। তাইতো পাসপোর্ট করার জন্য কাগজপত্রও প্রস্তুত করছিলেন। কিন্তু ভাগ্যে আর সহায় হলো না তার। তার আগেই ভয়াবহ আগুনে স্বপ্ন পুড়ে ছাই হয়ে গেল। এতে অনেকটা স্থায়ীভাবেই বন্ধ হয়ে গেল পরিবারের আনন্দ। ঈদেও ব্যতয় ঘটেনি এমন পরিস্থিতির।
বলছি, টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের দেওরা গ্রামের বাসিন্দা মেহেদী হাসানের কথা। তিনি কাজ করতেন রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনের দ্বিতীয় তলার একটি ফাস্টফুডের দোকানে।
গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভবনটিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ঘটনায় প্রাণ যায় তার। এরপর থেকে এখনো শোকের মাতম কাটেনি মেহেদী হাসানের পরিবারের। উপার্জনকারী সন্তানকে হারিয়ে দিশেহারা পরিবারের সদস্যরা।
আরও পড়ুন
পরিবার জানা যায়, মেহেদী হাসান ২০১২ মির্জাপুর কোড়ালিয়া পাড়া উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। ২০১৪ সালে দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটি আরফান খান মেমোরিয়ার ডিগ্রি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। অভাব অনটনের সংসারের হাল ধরতে ঢাকাতে চাকনি নেন।
মেহেদীর ছোট ভাই ইসরাফিল মিয়া বলেন, আমরা দুই ভাই একই জায়গায় কাজ করতাম। অগ্নিকাণ্ডের আগেই আমি একটি কাজে ভবনের অন্য আরেকটি ফ্লোরে ছিলাম। পরে আমি ভবন থেকে লাফিয়ে প্রাণে বেঁচে যাই। গত বছর আমরা দুই ভাই বাবা মার সাথে ঈদ করেছি। আর কোনো দিন ভাইয়ের সাথে ঈদ করা হবে না আমাদের।
তিনি আরও বলেন, দুই ভাই মিলে সংসার হাল ধরতে চেয়েছিলাম আর তা কোন দিন পূরণ হবে না। জানি না এখন এ স্বপ্ন আমি পূরণ করতে পারবো কি না। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের সহযোগিতা করা হোক।
মেহেদীর বাবা আয়নাল হক বলেন, অভাব অনটনের সংসার চালাতেই দুই ভাই কাজ করতেন ঢাকাতে। বড় ছেলে মেহেদীর বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ছিল। পাসপোর্ট করার জন্য কাগজপত্র রেডি করতেছিল। মেহেদী স্বপ্ন দেখতো, বিদেশে গিয়ে স্বাবলম্বী হয়ে পরিবারের অভাব অনটন দূর করবে। সবার মুখে হাসি ফোটাবে।
তিনি বলেন, আমর বয়স হয়ে গেছে, কিছু করতে পারি না। আমি ঋণ করেছি বড় ছেলে ঋণের টাকা প্রতি মাসে দিতো। এ টাকা এখন কে দিবে। গতবছর মেহেদী আমাদের সাথে ঈদ করেছে। আর কোন দিন আমার ছেলে আমাদের সাথে ঈদ করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, এ সংসার এখন কিভাবে চলবে। কে দেখবে এ সংসার। মাথায় আর কাজ করে না। ঈদ আসলেও আমাদের মাঝে সে আনন্দ নেই। ছেলের মা সব সময় কান্না করে। কান্না করতে করতে ছেলের মাও অসুস্থ হয়ে গেছে। সরকারের কাছে দাবি জানাই আমাদের যেন সহযোগিতা করেন।
মেহেদীর মা কল্পনা বেগম বলেন, মেহেদী বড় ছেলে ছিল। আমাদের সংসারে হাল ধরেছে সে পরিবারের সব খরচ দিতো। এখন এ সংসার কে দেখবে। গতবছর এক সাথে ঈদ করেছি। আমাদের জন্য গতবছর কাপড় ও বাজার করে নিয়ে আসছিল। এবার আর কেউ আসবে না। এ বলে মেহেদীর মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। আর মেহেদীর জন্য দোয়া করছেন।
এদিকে, টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) আসনের সংসদ সদস্য খান আহমেদ শুভ মেহেদীর পরিবারকে কিছু নগদ অর্থ সহযোগিতা দিয়েছেন। তার ছোট ভাইকে চাকরি দেওয়ারও আশ্বাস দিয়েছেন বলে জানায় পরিবারটি।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ নুরুল আলম বলেন, মেহেদীর পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে। আমরা আরও সহযোগিতা করার চেষ্টা করব।
প্রতিনিধি/একেবি