images

সারাদেশ

৩৬৬ বছরের পুরনো মোগল আমলের শাহ সুজা মসজিদ

জেলা প্রতিনিধি

২৫ মার্চ ২০২৪, ০২:৩১ পিএম

মোগল সম্রাজ্যের আমলে নির্মিত ৩৬৬ বছরের পুরনো মসজিদ কুমিল্লার শাহ সুজা মসজিদ। ইতিহাস থেকে জানা যায়, পাকভারত উপমহাদেশের ইতিহাসে কুমিল্লা নগরীর মোগলটুলিতে অবস্থিত শাহ সুজা মসজিদ অন্যতম একটি প্রাচীন মসজিদ।

সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় পুত্র শাহ সুজা বাংলার সুবেদার ছিলেন। শাহ সুজা ১৬৩৯ থেকে ১৬৬০ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত তিনি রাজত্ব করেন। ১৬৫৮ খ্রিষ্টাব্দে কুমিল্লায় তার নামে নির্মিত হয় এই শাহ সুজা মসজিদ। ৩৬৬ বছরের ঐতিহ্যে লালিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি কুমিল্লার অন্যতম প্রাচীন নিদর্শন। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই মসজিদ দেখতে আসেন। আবার অনেকে নামাজ আদায় করেন।

Mosq

ঐতিহাসিক গ্রন্থ রাজমালায় ইতিহাসবিদ কৈলাস চন্দ্র সিংহ উল্লেখ করেন, কুমিল্লা নগরের শাহ সুজা মসজিদ একটি ইষ্টক নির্মিত বৃহৎ মসজিদ। মোগল আমলের সম্রাট শাহজাহানের ২য় পুত্র শাহ সুজা ত্রিপুরা রাজ্য জয় করে চিরস্মরণীয় হওয়ার জন্য এখানে এসে নিজের নামে মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি কুমিল্লার অন্যতম প্রাচীনতম স্থাপত্যশৈলী।

কর্তৃপক্ষ সূত্রে  জানা যায়, মসজিদটির বাইরের আয়তাকার দৈর্ঘ্য ১৭ দশমিক ৬৮ মিটার, প্রস্থ ৮ দশমিক ৫৩ মিটার। প্রাচীরগুলো ১ দশমিক ৭৫ মিটার পুরু। মসজিদের চার কোণে ৪টি অষ্টকোণাকার বুরুজ রয়েছে। এগুলো কার্নিসের বেশ ওপরে ওঠে গেছে ও এর শীর্ষে রয়েছে ছোট গম্বুজ। মসজিদের পূর্ব প্রাচীরে তিনটি ও উত্তর এবং দক্ষিণ প্রাচীরে একটি করে খিলানযুক্ত প্রবেশপথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশপথটি অপেক্ষাকৃত বড় ও এতে অধিকতর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। প্রবেশ পথগুলোর উভয় পাশে ও ওপরে প্যানেল নকশা অলঙ্কৃত। কিবলা প্রাচীরে রয়েছে তিনটি মিহরাব, কেন্দ্রীয়টি অপেক্ষাকৃত বড় ও অধিক আকর্ষণীয়। এটি ফুল, লতাপাতা ও জ্যামিতিক নকশায় শোভিত। দুই পার্শ্বে খিলান দিয়ে মসজিদের অভ্যন্তর তিন ভাগে বিভক্ত। মধ্যের অংশটি বাইরের দিকে পূর্ব ও পশ্চিমে কিছুটা উদ্গত করে নির্মিত। এ অংশের চার কোণে চারটি সরু মিনার কার্নিসের ওপরে উঠেছে। অষ্টকোণাকার ড্রামের ওপর নির্মিত তিনটি গোলাকার গম্বুজ দিয়ে মসজিদের ছাদ ঢাকা। মধ্যেরটি অপেক্ষাকৃত বড়। গম্বুজগুলোর শীর্ষদেশ পদ্মনকশা ও কলস চূড়া দিয়ে শোভিত। মসজিদের কার্নিসের নিচের অংশ মারলোন নকশায় অলঙ্কৃত।

Mosqe-4

কেন্দ্রীয় গম্বুজটি পাশের দুটি গম্বুজ থেকে আকারে বড়। সাম্প্রতিকালে মসজিদের দুই প্রান্তে ২২ ফুট করে দু’টি কক্ষ এবং সম্মুখ ভাগে ২৪ ফুট প্রশস্ত একটি বারান্দা নির্মাণ করায় আদি রূপ কিছুটা নষ্ট হয়েছে। মসজিদের উত্তর-পূর্ব কোণে একটি সুউচ্চ মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে। ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদ।

কুমিল্লা জেলার ইতিহাস বই থেকে জানা যায়, শাহ সুজা মসজিদের গম্বুজের শীর্ষে পদ্ম ফুলের নকশা ও তার ওপরে রয়েছে কলসি। গম্বুজের চারদিকে রয়েছে পদ্ম পাপড়ির মারলন নকশা। মসজিদের খিলানগুলো চতুর্কেন্দ্রিক রীতিতে তৈরি। মসজিদের ফটক ধবধবে সাদা রঙের।

ইতিহাসবিদদের মতে, এ মসজিদের উদ্বোধনী খুতবা পড়েছিলেন সম্রাট শাহজাহানের আত্মীয় ও মোগল বংশের লোক কাজী মনসুরুল হক। এর বাহ্যিক কারুকাজ প্রমাণ করে তৎসময়ে এর প্রতিষ্ঠাতাদের স্রষ্টার প্রতি সুবিশাল আনুগত্য ও রুচির পরিচায়ক। মোঘল আমলের ঐতিহ্য আর আভিজাত্যের প্রতীক মোগলটুলী শাহ সুজা মসজিদ-এ যেন ইতিহাসের এক জ্বলন্ত প্রদীপ।

Mosq---

মসজিদের খতিব মুফতি খিজির আহমদ বলেন, কালের সাক্ষী এ মসজিদে অসংখ্য দর্শনার্থী ও মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। কিন্তু স্থান সংকুলানের কারণে আমরা আগত মুসল্লি ও দর্শনার্থীদেরকে যথাযথ মুল্যায়ন করতে পারি না। তিনি বলেন, মূল কাঠামো ঠিক রেখে মসজিদটির পরিধি বাড়ানো খুবই দরকার।

শাহ সুজা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সভাপতি সফিকুল ইসলাম শিকদার ঢাকা মেইলকে বলেন, এখন ১২শ’র ওপরে মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ পড়তে পারেন। মসজিদের পরিধি বাড়ানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে।

ঢাকার কাওলা বাজার থেকে মসজিদটি দেখতে আসা একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রিয়াজ বলেন, কুমিল্লার শাহ সুজা সমজিদটি যে মোগল আমলের তৈরি এর স্থাপত্য নিদর্শন দেখলেই বোঝা যায়। মসজিদটি একটি ইতিহাসের সাক্ষ্য বহন করে।

m

মোগলটুলি এলাকার শেখ মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমাদের এলাকার শাহ সুজা মসজিদটি প্রাচীন কালের মোগল আমলের স্বাক্ষী বহন করে। তাই প্রতিদিন দেশের অন্যান্য জেলা থেকে মসজিদটি দেখতে লোকজনের সমাগম ঘটে।

নগর ইতিহাসবিদ আহসানুল কবীর বলেন, শাহ সুজা প্রায় ২০ বছর এ অঞ্চলে রাজত্ব করেন। এ অঞ্চলকে মেহেলকুল বলা হতো। এখানে মসজিদ নির্মিত হওয়ায় মুসলমানদের নামাজের ব্যবস্থা হয়। এ মসজিদই শাহ সুজা মসজিদ, যার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক বেশি।

প্রতিনিধি/এসএস