জেলা প্রতিনিধি
২৫ মার্চ ২০২৪, ০৯:১৪ এএম
গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে সাদা ফুল, সবুজ কাচা ফল আর পাকা লাল স্ট্রবেরি। আর এই স্ট্রবেরি দিনাজপুরের বিরল উপজেলা রাণীপুকুর ইউনিয়নের শীবপুর গ্রামের কৃষক ছামিউল ইসলাম প্রথম বারের মতো বাণিজ্যিকভাবে চাষ শুরু করেছে।
স্ট্রবেরি চাষ করে সাড়া ফেলেছেন যুবক ছামিউল ইসলাম। তারা সফলতা দেখে স্ট্রবেরি চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন অনেক কৃষক। এই বিদেশি ফল চাষে কৃষকদের আগ্রহী করে তুলতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ছামিউল কয়েক বছর ধরে উচ্চ ফলনশীল বিভিন্ন লাভজনক ফসল আবাদ করে এলাকায় ব্যপক সাড়া ফেলেছে। বাড়ির পাশে ৬০ শতাংশ জমি ১০ হাজার টাকায় চুক্তি নিয়ে এবার আমেরিকান ফেস্টিভ্যাল জাতের স্ট্রবেরির হাইভ্যালু ক্রপ সংগ্রহ করে রোপণ করেন। গত বছরের নভেম্বর মাসে জয়পুর হাট থেকে ২০ হাজার টাকার স্ট্রবেরির চারা কিনে তার জমিতে রোপণ করেন। চারা রোপণের ৭০-৮০ দিনের মধ্যে ফল বিক্রির উপক্রম হয়। বর্তমানে তার বাগানে ৭ হাজারের মতো স্ট্রবেরির গাছ আছে। বিদেশি জাতের এই ফল আবাদ করে নিজের এলাকায় বেশ আলোচিত হয়েছেন ছামিউল ইসলাম। বর্তমানে ৩০০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা বিক্রি করলেও আগে তার ক্ষেত থেকে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা করে বিক্রি করছেন। একদিকে যেমন তিনি লাভবান হচ্ছেন অন্যদিকে এই বাগানে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়েছে অনেনের। এছাড়াও ছামিউল এবার উন্নত ও হাইব্রিড জাতের টমেটো, মরিচ ও শশা চাষের পাশাপাশি স্ট্রবেরিসহ বিভিন্ন জাতের টিস্যু চারাও বিক্রি করছে।
বিরল উপজেলার যুবক সুমন চন্দ্র সরকার ঢাকা মেইলকে বলেন, স্ট্রবেরি একটি বিদেশি ফল। আমাদের বিরলের মাটিতে এত সুন্দর ফল হবে। তা কখনও কল্পনা করিনি। সামিউল ভাইস্তা ৬০ শতাংশ জমি জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করে যে টাকা লাভবান হয়েছেন তা অন্য আবাদে সম্ভব নয়। ভালোভাবে বাজারজাত করতে পারলে আরও লাভ হওয়া সম্ভব। আমি পড়ালেখার পাশাপাশি আগামী বছর চারা সংগ্রহ করে এবং কৃষি বিভাগের পরামর্শ অনুযায়ী দুই বঘিা জমিতে স্ট্রবেরি চাষ করব।
প্রতিবেশী দিনেশ রায় ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি এই গ্রামের একজন কৃষক। আমি সামিউল ইসলামের স্ট্রবেরি দেখতে আসলাম। সামিউলের এই উদ্যোগ দেখে আমিও আগামী বছর স্ট্রবেরি চাষ করব।
সামিউলের স্ট্রবেরি বাগান দেখতে আসা মোস্তফা কামাল ঢাকা মেইলকে বলেন, এই ফলের নাম অনেক শুনেছি। কিন্তু সরাসরি দেখিনি। আজ স্বচক্ষে দেখলাম ও খেলাম। স্টবেরি ফলটি খেতে অনেক সুস্বাদু লাগল।
তরুণ উদ্যোক্তা ছামিউল ইসলাম ইসলাম ঢাকা মেইলকে বলেন, আমি আধুনিক প্দ্ধতিতে প্রথম স্ট্রবেরি চাষ করেছি। এই স্ট্রবেরি আবাদ করতে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আমি আশা করি এখানে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার মতো বিক্রি হবে। আমি আগামী বছরে টিস্যূ চারা নিজেই করব এবং বেশি জায়গা নিয়ে বড় আকারে চারা রোপণ করব।
বিরল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোস্তফা হাসান ইমাম ঢাকা মেইলকে বলেন, ফল ও ধান উৎপাদন এবং কৃষি ক্ষেত্রে অনেক অগ্রসর মানের বিরল উপজেলা। সেখানে নতুন মাত্রা যোগ করেছে স্ট্রবেরি ফল। উৎপাদন স্ট্রবেরি মূলত শীতকালীন ফল অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল। আমরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্ট্রবেরি উৎপাদন করছি সেটি বিরল। দিনাজপুর জেলায় এই সুযোগটি অন্যতম বলে আমি মনে করি। এখানে হচ্ছে দীর্ঘ শীতকাল থাকে। মাটির যে আদ্রতার প্রয়োজন, বেলে মাটি কিংবা বেলে দোয়াশ মাটি। সে মাটিও আমাদের রয়েছে। আমরা যদি সামান্য প্রযুক্তি জ্ঞান ব্যবহার করি মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করি এবং টেম্পারেচার একেবারে সহ্য করতে পারে না সে ক্ষেত্রে আমরা যদি শের দেই, দিয়ে ঢেকে রাখে আমরা যদি উৎপাদন করে নিতে পারি। বিরল উপজেলায় রোগবালাইয়ের প্রকোপ এখানে খুবই কম। তাপামাত্রা যদি নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় তাহলে একটি সম্ভাবনাময় ফল হিসেবে স্ট্রবেরি চাষ করা যেতে পারে এবং বিরলে সেটি শুরু হয়েছে আমাদের উদ্যোগে।
প্রতিনিধি/এসএস