জেলা প্রতিনিধি
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০২:২৫ পিএম
সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে সৎ খালা ও তার ২ ছেলেকে হত্যার দায়ে ভাগিনা আইয়ুব আলী সাগরকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে আদালত। একই সাথে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এই মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আইয়ুব আলী সাগর জেলার উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাতি গ্রামের মৃত মকছেদ মোল্লার ছেলে।
সিরাজগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আব্দুর রহমান ও স্টেনোগ্রফার রাশেদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ভিকটিম রওশনারা তার দুই শিশু ছেলেসহ বেলকুচি উপজেলার মবুপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। তার স্বামী সুলতান আলী তার খোঁজ খবর নিতো না। রওশনারা তাঁত ফ্যাক্টরিতে সুতার কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতো। তার সৎ ভাগিনা আসামি আইয়ুব আলী ঋণগ্রস্ত থাকায় ঘটনার ২০২২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রওশনারার বাড়িতে এসে রওশনারার ব্যবহৃত ট্রাংক ও জিনিসপত্র দেখে তার ধারণা হয় ট্রাংকের মধ্যে অনেক টাকা পয়সা আছে।
আইয়ুব আলী টাকা পয়সা নেয়ার পরিকল্পনা করে এবং ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে রওশনারার বাড়িতে মেহমান হয়ে আসে এবং রাতে খাওয়া দাওয়া করে রওশনারার ঘরে শুয়ে পড়ে। সে তার পরিকল্পনা অনুযায়ী গভীর রাতে উঠে ট্রাংকের তালা খুলে ট্রাংক থেকে টাকা বের করার চেষ্টা করলে শব্দে রওশনারার ঘুম ভেঙে যায়। তখন আসামি আইয়ুব আলী মসলা বাটার পাথরের শিল দিয়ে রওশনারার মাথায় আঘাত করলে রওশনারা অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধে হত্যা করে।
এর পর ৩ বছর বয়েসি ছেলে মাহিন জেগে উঠে কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও গলা টিপে হত্যা করে। অতঃপর রওশনারার অপর ছেলে জিহাদের ঘুম ভেঙে গেলে আসামি আইয়ুব আলী তাকেও গলা টিপে হত্যা করে মরদেহ ঘরের মধ্যে ফেলে রেখে দরজা বাহির থেকে শিকল আটকিয়ে চলে যান। ওই বাড়িতে আর কোনো লোকজন ছিল না।
রওশনারা পর পর ২ দিন তাঁত ফ্যাক্টরিতে কাজে না যাওয়ায় তাঁত ফ্যাক্টরির মালিক কুদ্দুস রওশনারা কেন কাজে আসলো না এ বিষয়ে খোঁজ খবর নিতে থাকেন এবং রওশনারার বোন লিলি খাতুনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। লিলি খাতুন রওশনারার বাড়িতে এসে ঘরের শিকল খুলে ঘরের ভিতরে ঢুকে দেখেন রওশনারা ও তার দুই ছেলের মরদেহ ঘরের মেঝেতে অর্ধগলিত অবস্থায় পড়ে আছে। খবর পেয়ে পুলিশ তাদের মরদেহ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।
এ ঘটনায় রওশনারার ভাই নুরজ্জামান বাদী হয়ে বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ আইয়ুব আলী সাগরকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠায়। হত্যার দায় স্বীকার করে আইয়ুব আলী আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করে। রাষ্ট্র পক্ষ অভিযোগ প্রমাণের জন্য মোট ১৩ জন স্বাক্ষীর স্বাক্ষ্য গ্রহণ করে। স্বাক্ষ্য প্রমান শেষে আজ মামলার একমাত্র আসামি আইয়ুব আলী সাগরকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন।
প্রতিনিধি/একেবি