০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৬:৪৯ পিএম
রসমালাইয়ের জেলা কুমিল্লায় ভ্রাম্যমাণ খাবারের দোকানগুলো নগরীর মানুষের কাছে দিনে দিনে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। জমজমাট হয়ে উঠেছে স্ট্রিট ফুডের ব্যবসা। সোজা কথায় ‘রাস্তার পাশের খাবার’ বা ফুটপাতের দোকানের খাবার। কোনো কোনো স্থানে অভিযোগ উপেক্ষা করে এই রাস্তার খাবারই কুমিল্লা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
রাস্তার পাশে ঝকঝকে চকচকে দৃষ্টিনন্দন একেকটি ছোট্ট চাকা-ঘর হয়ে উঠছে মুখরোচক খাবারের কেন্দ্র। তুলনামূলক কম দামে ‘স্ট্রিট ফুড’ খেতে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন জায়গায় ভিড় জমান ভোজন রসিক মানুষ।
কাঁচঘেরা ছোট্ট ‘স্ট্রিট ফুড’ এর দোকানে হাতে গ্লাভস পরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবেই পরিবেশন করা হয় খাবার। যেকোনো রেস্টুরেন্ট থেকে অনেক কম দামে চোখের সামনে তৈরি করা মজাদার হরেক রকম খাবার মন কাড়ে নগরবাসীর। অপরদিকে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িতরাও অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। ইদানিং এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে অনেকেই।
স্ট্রিট ফুডের কথা বলতেই সাধারণত আমরা ছোলা, পিঁয়াজু, ঝালমুড়ি, চানাচুর এবং চটপটি ও ফুচকাতেই আটকে যাই। অথচ এই নগরীতে কত পদের খাবার শুধু রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকানগুলোতে বিক্রি হয়, তার হিসেব নেই। শরবত বিক্রি হয় শতাধিক রকমের। চিকেন ফ্রাই থেকে শুরু করে পিজ্জা, বার্গার, নুডলস, চাপ মাসালা, কাবাব, ভাপা পিঠা, বেলপুরি সবই সড়কপথেই বিক্রি হচ্ছে।
কুমিল্লা নগরীর বাসিন্দাদের অন্যতম পছন্দের স্থান কান্দির পাড় সংলগ্ন ধর্ম সাগর পাড়। এই এলাকায় গড়ে উঠেছে হরেক রকম খাবারের মেলা। স্ট্রিট ফুড কিংবা ছোট্ট পরিসরে খাবারের দোকান নিয়ে বসেছেন অনেকে। হালিম, মুড়ি ভর্তা, ফুচকা, ছোলা বাটোরা থেকে শুরু করে চা-কফি প্রায় সব রকমের খাবার পাওয়া যায় এখানে।
তরুণ প্রজন্মের সান্ধ্যকালীন আড্ডাস্থল নগরীর কান্দির পাড় টাউন হল ও ধর্ম সাগর পাড়ে। সন্ধ্যা নামতেই এই এলাকায় বসে ভ্রাম্যমাণ বাহারি ফাস্ট ফুডের দোকান। এসব দোকানগুলোতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ভোজন রসিকদের সংখ্যা।
কুমিল্লা সড়কের ধারে সন্ধ্যার পর চোখে পড়ে স্ট্রিট ফুডের বাহারি ভ্রাম্যমাণ দোকান। কেউ দাঁড়িয়ে কেউবা বসে খাবার খাচ্ছেন, কেউবা আবার অপেক্ষায়।
এছাড়া কম দামে পাওয়া যায় বলে প্রতিনিয়ত বাড়ছে ক্রেতা। মুরগির শিক কাবাব ৮০ টাকা, চিকেন ফ্রাই ৭০ টাকা, গরুর শিক কাবাব ১২০ টাকা, জালি কাবাব ৩০ টাকা, বার্গার ৭০ টাকা, টিক্কা ৩০ টাকা, এছাড়া বাহারি সব খাবার মেলে স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাকিলা পারভীন বলেন, আমরা বান্ধবীরা মিলে কলেজের সামনের আব্দুল্লাহ মামার ভেলপুরি খেতে আসছি। এখানের ভেলপুরি খুবই সুস্বাদু। তাই আমরা বিকেল বেলায় মামার ভেলপুরি খেতে আসি। প্রতি ছোট ভেলপুরির প্লেট ৩০ টাকা আর বড় ভেলপুরির প্লেট ৪০ টাকা। টক-মিষ্টি ও ঝাল সস দিয়ে ভেলপুরি মামা পরিবেশন করেন।
নগরীর কান্দির পাড় টাউন হল মসজিদের সঙ্গে মিনি বার্গার বিক্রি করেন শাহরিয়ার নাদিম তিনি বলেন, আমি ডিমের বার্গার ২০ এবং মুরগির বার্গার ৩০ টাকা করে বিক্রি করি। প্রায় ৫ বছর ধরে আমি এসব বার্গার বিক্রি করি। নগরীর কান্দির পাড়, চকবাজার, রাজগঞ্জ এবং টাউন হলের পাশে বিক্রি করি বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা, ১০ টা পর্যন্ত। আমার আব্বা আবুল কালাম ফেনি ও নোয়াখালীতে বিক্রি করেন।
কুমিল্লা রেল স্টেশনে হাসের মাংস ও মুরগির মাংস দিয়ে ঝাল মুড়ি বিক্রি করেন মো. নুরুন্নবী। তিনি বলেন, ২০টা দেশি হাঁস ৪ বারে পাকানো হয় এবং ২৫ কেজি মুরগি ৪ বেলায় বিক্রি করি। এখানে কুমিল্লার বিভিন্ন স্থানসহ দেশের অন্যান্য জেলা যেমন- হবিগঞ্জ, সিলেট, চাঁদপুর ভৈরব, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ ঝাল মড়ির স্বাদ নিতে আসেন। আমি যেহেতু স্বাস্থ্যসম্মতভাবে তৈরি করি, তাই আমার খাবারের চাহিদাও অনেক। রেলে ভ্রমণকরা যাত্রীরা খাবার কেনেন। আমি প্রায় ১ বছরের বেশি সময় ধরে এ খাবার বিক্রি করছি।
চানাচুর বিক্রেতা ফরিদ জানান, প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে বেচাকেনা। করোনাকালে বেশ কয়েকমাস ব্যবসা খারাপ ছিল। এখন আবার আগের মতো শুরু করেছে। এখন ৩ জন স্টাফ নিয়ে ভালোই চলছে তার ভ্রাম্যমাণ স্ট্রিট ফুড ব্যবসা। খাবার পণ্য ক্রয় ও স্টাফদের হাজিরা দিয়ে দৈনিক ১ হাজার ৫০০ টাকার মতো আয় হয়।
স্ট্রিট ফুড খেতে আসা মুন্না জানান, কোনো কোনো জায়গায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাবার প্রস্তুত হয়। এতে বিভিন্ন জটিল রোগ সৃষ্টি হতে পারে। এরপরও খেতে উপাদেয় বা মুখরোচক ও দামে সস্তার কারণেই দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এ খাবারগুলো।
নগরীর কাটাবিল স্কুলের ছাত্রী বিথি আক্তার ও প্রভা বলেন, ভেলপুরি, চটপটি, বার্গার, চাপ মাসালা স্টুডেন্টরা খেতে। বেশি পছন্দ করি। দামে কম ও মানেও বেশ ভালো। চোখের সামনে স্বাস্থ্যকর উপায়ে তৈরি হচ্ছে এসব খাবার। এজন্য খেতে সমস্যা মনে করি না।