জেলা প্রতিনিধি
১৭ জানুয়ারি ২০২৪, ০৩:৪৩ পিএম
দেশের দ্বিতীয় সর্ববৃহৎ মোকাম কুষ্টিয়ার খাজানগরে আবারও বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম। ধানের দাম বৃদ্ধির অজুহাত তুলে বাড়ানো হয়েছে চালের দাম। খাজানগরের মিলগেটে চাল কেজি প্রতি ২ থেকে ৩ টাকা বাড়লেও খুচরা বাজারে বেড়েছে কেজি প্রতি ৪ থেকে ৬ টাকা পর্যন্ত।
খুচরা বিক্রেতারা বলছে, ধানের দাম বেড়ে যাওয়ার কথা বলে সব ধরনের চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে মিল মালিকরা। তাই বেশি দামে কিনে বেশি দামেই বিক্রি করছেন তারা। আর মিল মালিকদের দাবি গত ১ মাস ধরে প্রতিদিনই বাড়ছে ধানের দাম। তাই ধানের দাম যে পরিমাণে বেড়েছে তাতে চালের দাম কেজিতে ২/৩ টাকা বেড়ে যাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক। ধানের দাম কেন বাড়ছে সে বিষয়ে নজরদারি করার দাবি মিল মালিক ও ব্যাবসায়ীদের।
তবে আমন ধানের মৌসুম শেষ না হতেই চালের দাম হুট করে বেড়ে যাওয়ায় বিপাকে নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কঠোর নজরদারি চাইছেন তারা।
কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজার ঘুরে খুচরা বিক্রেতা এবং ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নানা অজুহাতে গত বছরের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে বেড়েছিল ৩ টাকা পর্যন্ত। মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে কয়েক দিন ধরে খুচরা বাজারে আবারও সব ধরনের চাল কেজিতে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চলতি আমন মৌসুম শেষে এ নিয়ে তিন দফায় কুষ্টিয়ায় চালের দাম বাড়ল।
কুষ্টিয়া পৌর বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৬২ টাকার মিনিকেট চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৬ টাকায়। কয়েকদিন আগেও ৫৬ টাকায় বিক্রি হওয়া কাজললতা চাল এখন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মোটা চাল আটাশ কেজিতে ৪ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৫৩ টাকা কেজিতে।
পৌর বাজারের কয়েকজন চাল বিক্রেতা জানান, বেশি দামে মোকাম থেকে চাল কিনতে হচ্ছে। তাই খুচরা বাজারে চালের দাম বেড়েছে। কদিন আগে কাজললতা চাল ৫৬ টাকায় বিক্রি করেছি, সেটা এখন ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। মোকাম থেকে বস্তা প্রতি বেশি দামেই কিনতে হচ্ছে চাল। সেই সঙ্গে বহন খরচ যোগ করে কেজি প্রতি চালের দাম ৪ টাকা বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।
বাজার সূত্রে জানা গেছে, ধানের দাম বাড়ার অজুহাতে অক্টোবর মাসের শেষের দিকে চিকন চালসহ অন্যান্য চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা পর্যন্ত বেড়েছিল। তার এক মাস আগেও সব ধরনের চাল কেজিতে ১ থেকে ২ টাকা বেড়েছিল। অন্যসব নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির মধ্যে চালের বর্ধিত দাম নাভিশ্বাস তুলেছে ভোক্তাদের। তাদের দাবি এর আগেও প্রশাসন যখন তৎপর হয়েছে, তখনই চালের দাম কমেছে কিংবা বৃদ্ধি বন্ধ হয়েছে।
চাল কিনতে আসা কয়েকজন ক্রেতারা জানান, ব্যবসায়ী ও মিলমালিকরা বরাবরের মতো আবার সিন্ডিকেট করে চাল মজুত রেখে দাম বাড়াচ্ছে। এতে তাদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। তাদের দাবি, প্রশাসন চাইলে দাম বাড়ানোর প্রচেষ্টা রুখে দেওয়া সম্ভব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুষ্টিয়ার দেওয়া তথ্য মতে এবারের আমন মৌসুমে প্রায় ৮৮ হাজার ৯০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে। যা লক্ষমাত্রার চাইতে বেশি। সেই সঙ্গে ফলন ও হয়েছে আশানুরূপ।
সিদ্দিকুর রহমান নামের এক যুব উদ্যোক্তা বলেন, আমন মৌসুম কেবল শেষ হয়েছে। মাঠে ফলন ভালো ছিল তার পরেও ধানের সঙ্কট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়ে দেওয়া সিন্ডিকেটের কারসাজি ছাড়া কিছুই না। এ বিষয়ে সরকারকে দৃষ্টিপাত করার অনুরোধ করেন তিনি।
রতন আলী নামের আরেক ক্রেতা বলেন, মিলাররা বলছে তারা লস দিয়ে চাল বিক্রি করছেন অথচ তারা নিজেরা টাকার কুমির হচ্ছে। গাড়ি বাড়িসহ বিলাশবহুল জিবন যাপন করছে, বিভিন্ন উসিলায় তারা চালের দাম বাড়িয়ে গরিব মানুষের পকেট কেটে কোটিপতি হচ্ছে। আর যারা এই কাজের দেখভালের দায়িত্বে আছে তাদের কাজ শুধু মাত্র লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই না।
আরও পড়ুন
চালের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতি কুষ্টিয়া শাখার সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন সাধু বলেন, ডিসেম্বর মাস থেকে ধানের দাম প্রতিনিয়তই বাড়ছে। প্রত্যেকটা ধানের দাাম প্রতি মণে ১৮০-২০০ টাকা বেড়েছে। মণ প্রতি মিনিকেট যে ধান কিনেছিলাম ১ হাজার ৪২০ টাকা সেই ধান কিনতে হচ্ছে ১ হাজার ৬৮০ টাকায়। সরকার যখন আমন মৌসুমে চাল সংগ্রহের ঘোষণা দিল, তখন নতুন যে ধান উঠেছিল তা ৯৮০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ কেনা হয়। সেই ধান এখন ১ হাজার ৮০ টাকা।
তিনি যোগ করে বলেন, চলতি মৌসুমে চার প্রকার ধান উঠেছে। মোটা হাইব্রিড, স্বর্ণা, ধানি গোল্ড ও বিনা-৭। নভেম্বরের শেষের দিকে এই ধান উঠলেও ডিসেম্বর মাসে এসে ধানের দাম বেড়ে গেছে।
জয়নাল আবেদীন বলেন, ধানের দামের বৃদ্ধির কারণে মোকাম থেকেই চালের দাম কেজি দুই থেকে আড়াই টাকা বেড়েছে। তিনি ধানের বাজার যে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা বাড়ল সেদিকেও নজর দেওয়ার দাবি তোলেন।
অন্যদিকে বাজার নিয়ন্ত্রণকারীরা বলছেন, অতিরিক্ত মুনাফা করে কেউ দাম বাড়াচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখছেন তারা। কুষ্টিয়া পৌর মার্কেটের তদারকিতে থাকা সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা সুজাত হোসেন খান বলেন, সকালেও আমাদের একটি টিম বাজার ঘুরে দেখেছে। দাম বেড়েছে। আমরা মিলগুলোর ধান ক্রয় ও মাড়াইয়ের খচরের সঙ্গে বিক্রয় মূল্যের তুলনা করে দেখছি। কেউ অতিরিক্ত মুনাফা করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, আমাদের কাছেও খবর এসেছে চালের দাম বৃদ্ধির। আমরা বিষয়টি কঠোরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি। এই কাজে আমাদের একাধিক টিম কাজ করছে। যদি কেউ অধিক মুনাফার লোভ বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।
প্রতিনিধি/এসএস