images

সারাদেশ

‘বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান’

জেলা প্রতিনিধি

৩১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:২৩ পিএম

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন ইঞ্জিনিয়ার ইকবাল হোসেন তাপস। তিনি দলটির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি বরিশাল ২ ও ৫ আসন থেকে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী হয়েছিলেন। 

 

রোববার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বরিশাল কলেজ সংলগ্ন রজনিগন্ধা কমিউনিটি ক্লাবে এক কর্মী সভায় ভোট নিরপেক্ষ না হওয়ার শঙ্কায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দলের চেয়ারম্যান পরিস্থিতির শিকার। তিনি বাধ্য হয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। নির্বাচনের আরও বেশ কয়েক দিন বাকি আছে। শেষ পর্যন্ত জাতীয় পার্টি নির্বাচনে থাকবে কি না, তা নিয়েও সংশয় রয়েছে।’ একই কারণ দেখিয়ে বরগুনা ১ আসনের জাতীয় পার্টির প্রার্থী খলিলুর রহমানও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান।

নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে ইকবাল হোসেন তাপস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘জাতির ক্রান্তি লগ্নে আজকে যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, সে নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ তথা সারা বিশ্বে সকল মানুষ তাকিয়ে আছে। কিন্তু সরকারের যে ভোট চুরির, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসতে পারবে? ২০১৪ সালের নির্বাচন, ১৮ সালের নির্বাচন সবাই দেখেছে। সে নির্বাচন কিভাবে হয়েছে। আমরা এ বছর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলাম। আমি সেখান থেকে বলতে চাই, সিটি করপোরেশন নির্বাচন আমরা চেয়েছিলাম একটি সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন। কিন্তু নির্বাচন কমিশনার ও সরকার মিলে একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন করেছে।’

তাপস আরও বলেন, ‘তারপরও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আমার দল গঠনতন্ত্রের ওপর আস্থা রেখে ৩০০ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছিলেন। তার মধ্যে কিছু যাচাই-বাছাইয়ে বাদ দেওয়ার পরে ২৮৭ জন টিকে আছেন। তারা নির্বাচনের মাঠে আছেন। তারমধ্যে আমিও প্রার্থী হিসেবে পর্যবেক্ষণে ছিলাম। নির্বাচনী মাঠে আমরা যা দেখেছি তার শেষ পরিণতি বরিশালে প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় একজন নিহত হয়েছেন। যেই মাঠে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও উপস্থিত ছিলেন।’

নির্বাচন কমিশনারকে নিয়ে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘এই নির্বাচন কমিশনার বলে যাচ্ছে, মোটা দাগে কোন সহিংসতা হয়নি। নির্বাচন কমিশনার এমন আচরণ ও বক্তব্য দেখে আমাদের মনে দিন দিন শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন মুখে বলে সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দিতে বদ্ধপরিকর। কিন্তু তাদের কর্ম এবং অন্যান্য আচরণে মনে হচ্ছে তারা একটি দল এবং সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।’

গণমাধ্যমের উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমরা সংবাদের মাধ্যমে জেনেছি আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের একেক জনের পঞ্চাশ হাজার গুণ, ষাট হাজার গুণ, দশ হাজার গুণ সম্পদ বেড়েছে গত পাঁচ বছরে। নির্বাচনী হলফনামায় সেটি প্রকাশও করেছে। সেখানে এক ভরি স্বর্ণের দাম দেখিয়েছে পাঁচ হাজার টাকা, এক একর জমির দাম দেখিয়েছে এক হাজার টাকা, ২ হাজার টাকা। কিন্তু এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। একজন মন্ত্রীর কোটি টাকার সম্পদ দেশের বাইরে আছে। তা হলফনামায় প্রকাশ করা হয়নি। তারপরেও আমাদের নির্বাচন কমিশনের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।‘

সব শেষে এই প্রার্থী বলেন, ‘সবকিছু মিলিয়ে আমার কাছে মনে হচ্ছে আবারো আগামী সাত জানুয়ারি প্রহসনের একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। যেই নির্বাচনের সাধারণ মানুষের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এখানে আছে একটি দল এবং সেই দলের লেজুড় ভিত্তিক কিছু মানুষ। তারাই এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে। তাই সার্বিক দিক বিবেচনা করে বরিশাল ও উজিরপুরের আমাদের দলের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে আমার মনে হয়েছে এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করাই উত্তম। তাই আজকে আমার কর্মী ও সাংবাদিকদের সামনে বলতে চাই, ৭ জানুয়ারির নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি।’

ওই সভায় সভাপতিত্ব করেন কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা ও বরিশাল মহানগর জাতীয় পার্টির আহবায়ক অধ্যাপক মহসিন উল ইসলাম হাবুল ও মহানগর যুব সংহতির সদস্য সচিব রফিকুল ইসলামের সঞ্চালনায় এই মতবিনিময় সভা হয়েছে। 

প্রতিনিধি/একেবি