বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৩ পিএম
অ্যাডভেঞ্চারে পাহাড় ট্রেকিং অনেকের কাছে নেশার মতো। গিরিপথ-পাহাড়-ঝরনা সৌন্দর্য্যের টানে আর লোকালয়ের কোলাহল থেকে ছুটি নিয়ে নির্জনে নিজেকে আবিষ্কার করতে ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছুটে যান এ ট্রেকিংয়ে। ট্রেকিং মানে কোনো ঝরনার সন্ধানে দুর্গম পাহাড় বেয়ে ওঠা, বন জঙ্গলের পথ মাড়িয়ে, কখনও বা কাদা মাখা ঢালু রাস্তা ধরে এগিয়ে এ নেশাকে জয় করতে হয়।
বাস্তবে নিজের এ নেশাকে পরিপূর্ণ মাত্রায় রুপ দিতে পাহাড় ট্রেকিংয়ে নেমেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) সাবেক শিক্ষার্থী ইশরাত জাহান। কিছুদিন আগেও যার চোখে মুখে ছিল বিজ্ঞানী হওয়ার স্বপ্ন। ফলে বিজ্ঞান প্রচারের জন্য কাজ করেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সায়েন্স ক্লাবে। কিন্তু নিজের লক্ষ্য অর্জনের পথে চলতে গিয়ে হঠাৎ মাথায় আসে পাহাড়ের দুঃসাহসী অভিযানের নেশা। পিএইচডির পাশাপাশি সম্প্রতি স্বামীর সঙ্গে এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্পসহ ৫ হাজার মিটারের উপরে তিনটি পাহাড় অভিযান করেছেন তিনি।
ইশরাত জাহান ক্যাম্পাসে সকলের কাছে ‘ঈশু’ নামে পরিচিত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে অনার্স শেষ করে বর্তমানে থাইল্যান্ডের মাহিদোল ইউনিভার্সিটিতে ফুল ফান্ড স্কলারশিপ নিয়ে মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড ইমিউনলজি বিভাগে পিএইচডি করছেন। তার বাসা সিরাজগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায়। তিনি পরিবারসহ এখন থাইল্যান্ডেই অবস্থান করছেন।
ইশরাত জাহান পাহাড় ট্রেকিংয়ের রোমাঞ্চকর মুহুর্তগুলোর ভিডিও ধারন করেন। আর এসব ভিডিওগুলো কন্টেন্ট আকারে তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে শেয়ার করে থাকেন। দর্শক মহলে এমন সব ভিডিওর চাহিদা থাকায় ইতোমধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়তে শুরু করেছে তার এসব ভিডিও কন্টেন্টে। এখন পর্যন্ত তার পাহাড় ট্রেকিং অভিযানের এই ভিডিওগুলো ইউটিউবেই প্রায় ১ লাখ ঘণ্টা দেখা হয়েছে।
ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানী হওয়ার ব্যতিক্রমী স্বপ্ন ছিল ইশরাতের। এবং পাহাড় ট্রেকিংয়ের ওপর ছিল তার আলাদা টান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইশরাত জাহান জানান, ছোটবেলায় কেউ যদি আমাকে জিজ্ঞাসা করত আমি বড় হয়ে কি হতে চাই, অকপটে বলতাম আমি বিজ্ঞানী হতে চাই! যদিও আমাদের দেশে বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের একটা পারিবারিক চাপ থাকে, যে ডাক্তার অথবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে। তাই আমার ক্ষেত্রেও এটার ব্যতিক্রম ছিল না।
পাহাড় ট্রেকিং পছন্দের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ব্যক্তিগত জীবনে অনেক সংগ্রাম করেছি । যতবার আমি পারব না ভেবেছি, ততবারই পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। নিজেকে পাহাড়ের নতুন নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার মাধ্যমে পাহাড়ের মতো অটল থেকে নিজেকে অন্য মাত্রার নিয়ে যাবার চেষ্টা করে যাচ্ছি। বাধা বিপত্তিগুলো দূর করে নিজেকে যেভাবে পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে যাই, ঠিক সেভাবেই বাস্তব জীবনের সমস্যাগুলো কাটিয়ে নিজেকে অনন্য মাত্রায় নিয়ে যেতে চাই।
তিনি আরও বলেন, পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সুযোগ পেলেই আমার বরকে নিয়ে পাহাড় অভিযানে বেড়িয়ে পড়ি। এবং আমদের পাহাড় ট্রেকিংয়ের অভিজ্ঞতাগুলোকে ভিডিও আকারে কন্টেন্ট বানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করি। আমরা হানিমুনেও গিয়েছিলাম নাফাখুম-আমিয়াখুম ট্রেকিংয়ে। ইতোমধ্যে আমরা এভারেস্ট বেইজ ক্যাম্প ভীয়া গোকিও ট্রেকসহ থাইল্যান্ডের ১ হাজার মিটারের উপরে কয়েকটি মাউন্টেইনে আমাদের সফল অভিযান করেছি।
পরবর্তী পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আফ্রিকা মহাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত ‘মাউন্ট কিলিমানজারো’ সামিটের মাধ্যমে আমরা সেভেন সামিট (৭টি মহাদেশের ৭টি সর্বোচ্চ পর্বত) মিশনের চ্যাপ্টার শুরু করতে যাচ্ছি। ২০২৪ সালের মধ্যে আমরা আফ্রিকা মহাদেশে পাড়ি জমানোর পরিকল্পনা করছি।
প্রতিনিধি/এসএস