images

সারাদেশ

ইচ্ছা হয় বড় দোকানের কাপড় কিনবো, কিন্তু এত টাকা তো নাই

জেলা প্রতিনিধি

২৫ এপ্রিল ২০২২, ০৭:৩৩ পিএম

‘ইচ্ছা হয় বড় দোকানের কাপড় কিনবো। কিন্তু এত টাকা তো নাই, কী দিয়ে কিনবো। আমরা গরিব মানুষ, তাই ছোট দোকান থেকে কাপড় কিনি।’ বলছিলেন মৌলভীবাজার জেলার রাজনগরের কাওয়াদীঘী হাওরাঞ্চলের কৃষক ছয়ফুল মিয়া।

ঈদ আসছে। চলছে কেনাকাটা। ছয়ফুল মিয়ার মতো সবাই চেষ্টা করেন সামর্থ্যের মধ্যে পছন্দের পোশাক কিনতে এবং প্রিয়জনকে উপহার দিতে। এক্ষেত্রে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তদের আশ্রয়স্থল অলিগলির ছোট দোকান কিংবা ফুটপাতের মার্কেটগুলো। আর তাই সেইসব ছোট দোকান আর মার্কেটে এই সময়টায় ধুম পড়ে কেনাকাটায়। কারণ এখানে পাওয়া যায় কম মূল্যের প্রয়োজনীয় নানা রুচিসম্মত পোশাক।

অভিজাত শপিংমলে পণ্যের গায়ে ঝুলিয়ে থাকা একদরের স্টিকারের সঙ্গে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তরা পরিচিত নন। তারা ফুটপাতের মার্কেটে কেনাকাটায় জয়ী হন বিক্রেতার সঙ্গে দরকষাকষি করে। আবার ক্রেতাদের ফিরিয়ে না দিয়ে অল্প লাভেই বেশি বিক্রির কৌশলে ধরে রাখেন এখানকার বিক্রেতারা।

মৌলভীবাজার জেলা শহরের সেন্ট্রালরোড, কোর্টরোড, পশ্চিমবাজারসহ কুসুমবাগ এলাকায় রয়েছে এমন অনেক ছোট ছোট দোকান।

সরেজমিনে জেলা শহরের সেন্ট্রালরোড থেকে কুসুমবাগ পর্যন্ত বেশকয়েকটি ছোট ছোট মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, ক্রেতাদের ভিড়। এখানকার মার্কেটের দশ থেকে পনেরো ফিটের প্রতিটি দোকানে কমপক্ষে তিন থেকে পাঁচজন করে কেনাকাটা করছেন।

দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, অন্যবারের চেয়ে এবার ক্রেতা তুলনামূলক কম। তারা জানান, পাঞ্জাবি ও ছোট ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন কাপড়ের দোকানে কিছুটা ভিড়। দোকানগুলোতে বড়দের সর্বনিম্ন ৩০০ থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে পাঞ্জাবি, ছোটদের পাঞ্জাবি ১০০ থেকে ৩০০ টাকা, পায়জামা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, রয়েছে শিশুদের জামা ২০০ থেকে ৩০০ টাকা, ছেলেদের টি-শার্ট ২০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১০০ টাকায় ওড়নাও পাওয়া যাচ্ছে।

এসব দোকানে হাতের নাগালে থাকা দামের মধ্যে মিলছে শাড়ি, থ্রি-পিস, ফতুয়া, সালোয়ার-কামিজ, জুতা, মেয়েদের নানান অলঙ্কার, বিভিন্ন ধরনের হ্যান্ডব্যাগ এবং মহিলাদের প্রসাধনীসহ সব ধরনের প্রয়োজনীয় পণ্য।

দেখা গেছে, প্রায় সব দোকানের সামনে ক্রেতাদের হালকা ভিড়। বিক্রেতারা ক্রেতাদের বিভিন্নভাবে আকর্ষণ করছেন। প্রতিটি দোকানের সামনে কয়েকজন কর্মচারী আছে ক্রেতাদের ডাকার জন্য। তারা জানান, ঈদ উপলক্ষে আনা হয়েছে নানা ডিজাইনের নতুন নতুন পোশাক। বাচ্চাদের পোশাক, পাঞ্জাবি, জিন্স সবই মিলছে অল্প দামেই। মেয়েদের পোশাকের মধ্যে বুটিকস আইটেমও পাওয়া যাচ্ছে।

সেন্ট্রাল রোডের কাপড় বিক্রেতা ইয়ারস আলী বলেন, ‘ঈদের মূল বিক্রি শুরু হয়েছে। দুপুরে ও সন্ধ্যার পর ক্রেতার ভিড় হয়। যদিও অধিকাংশ ক্রেতা কেনাকাটা শুরু করেননি। আগামী তিন চারদিনের মধ্যে মার্কেট পুরোদমে জমবে।’

ব্যবসায়ী জাফর মিয়া বলেন, ‘রমজানের ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা অবশ্যই হবে। আমাদের এখানে ক্রেতারা একটু দরদাম করেন। সমস্যা না, অল্প লাভেই আমরা বিক্রি করি।’

‘বড় বড় অন্যান্য মার্কেটের তুলনায় আমাদের এখানে পণ্যের দাম কম। তাই ক্রেতারা ভিড় করছে।’ বলেন পশ্চিমবাজারের ব্যবসায়ী ফেরদৌস।

সিলেট থাকেন ওমর ফারুক। তিনি বলেন, প্রতি বছর সাশ্রয়ী দামে কেনাকাটা করি নিজের এলাকায়। বড় বড় মার্কেটে থেকে এখানকার দাম তুলনামূলক কম। তারা প্রথমে দাম একটু বেশি চায়। তবে দর কষাকষি করে সহনীয় দামেই প্রয়োজনীয় জিনিস এখানে পাওয়া যায়।

কমলগঞ্জ থেকে আসা চা জনগোষ্ঠীর সদস্য খায়রুন বেগম বলেন, ‘বাচ্চার জন্য ঈদের কাপড় কিনতে এসেছি। যা রোজগার করি, কোনো রকম বেঁচে আছি। এখানে কম দামে পছন্দমতো কাপড় পাওয়া যায়, এজন্য প্রতি বছরই আমার পরিবারের বেশিরভাগ পোশাক এখান থেকে কেনা হয়।’

জেলা সদরের চাঁদনীঘাট এলাকার লুৎফুর মিয়া ও রিনা বেগম দম্পতি শহরে এসেছেন কেনাকাটা করতে। তারা বলেন, ‘একই কাপড়ের দাম একেক দোকানে একেক রকম চাইছে দোকানিরা। সেজন্য এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ঘুরে, একটু যাচাই করে কিনছি।’

এএ