নিজস্ব প্রতিবেদক
২৪ অক্টোবর ২০২৩, ০৪:৩৫ পিএম
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর প্রভাবে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুর থেকে চট্টগ্রামে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে দুর্ভোগ। একই সাথে সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বন্দরের ক্ষয়ক্ষতি কমাতে নিজস্ব অ্যালার্ট-৩ জারিসহ ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
বন্দর জেটি থেকে বহির্নোঙরে সব রকম মাদার ভেসেল থেকে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পণ্যবাহী সব জাহাজ। সাগরে থাকা সকল লাইটার জাহাজকে কর্ণফুলী নদির উজানে নিরাপদে চলে যেতে বলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে আমরা ঘুর্ণিঝড়ের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে একটি সভা করেছি। সেখানে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে যাতে বন্দর চ্যানেল, জাহাজ, হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট, কার্গো ও কনটেইনারের ক্ষতি না হয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে বন্দরের নিজস্ব সতর্কতা সংকেত অ্যালার্ট-৩ জারি করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বন্দর জেটিতে ২২টি জাহাজ অবস্থান করছিল। সবগুলোকে গভীর সাগরে নিরাপদে অবস্থান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কিছু জাহাজ চলে গেছে। আরও কিছু জাহাজ আছে। সেগুলো জোয়ারের সাথে চলে যাবে।
সচিব জানান, বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্ট নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশের সহায়তায় বন্দর চ্যানেল ও জেটি থেকে ছোট বড় সব জাহাজ বহির্নোঙরে কিংবা কর্ণফুলী নদির উজানে শাহ আমানত সেতুর পূর্বপাশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বন্দরের নিজস্ব ছোট জাহাজ-নৌযানগুলো জেটিতে বাঁধা হচ্ছে। কি গ্যান্ট্রি ক্রেন (কিউজিসি), রাবার টায়ার গ্যান্ট্রি ক্রেন (আরটিজি)সহ সব কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট পর্যায়ক্রমে প্যাকিং করা হচ্ছে।
খালি কনটেইনারগুলো নিচে বা নিরাপদে রাখা হচ্ছে। বহির্নোঙরে পণ্য খালাস বন্ধ রাখা হয়েছে। জেটি, টার্মিনাল ও ইয়ার্ডে পূর্বনির্ধারিত ডেলিভারি কার্যক্রম চলছে। পাইলটের তত্ত্বাবধানে ২৪ ঘণ্টার বিশেষ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।
উত্তাল সাগর:
ঘুর্ণিঝড় ‘হামুন’ এর প্রভাবে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা উপকুলে সাগর খুব উত্তাল হয়ে পড়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে জোয়ারের সময় সাগরের বড় বড় ঢেউ পতেঙ্গা উপকুলে আছড়ে পড়ে। এ সময় সৈকতে বেড়াতে আসা অনেক পর্যটককে ঢেউয়ের সাথে গা ভাসাতে দেখা যায়।
এ তথ্য জানান পতেঙ্গা সৈকত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. ওয়াহিদ। তিনি বলেন, পতেঙ্গা ট্যুরিষ্ট পুলিশ ও আনসার পর্যটকদের সাগরে নামতে বাধা দিচ্ছে। কেউ কেউ বাধা শুনে উঠে আসলেও কেউ কেউ বাধা মানছে না।
ট্যুরিষ্ট পুলিশের এএসআই শাহীনুল ইসলাম জানান, ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাবে পতেঙ্গা এলাকায় এখন বড় বড় ঢেউ আছড়ে পড়ছে। জোয়ারের সাথে পানির উচ্চতা কয়েকফুট বেড়েছে। তবে পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে সতর্কবার্তা পাওয়ার পর পর্যটকদের সাগর থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। সেই সাথে উপকুলীয় এলাকার মানুষদে সতর্ক থাকার জন্য বলা হচ্ছে।
ভুমিধ্বসের সতর্কতা :
এদিকে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’-এর অগ্রভাগের মেঘে মঙ্গলবার দুপুর থেকে চট্টগ্রামে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। এটি ক্রমেই বাংলাদেশের স্থলভাগের কাছাকাছি চলে আসছে। এর প্রভাবে চট্টগ্রামসহ উপক‚লীয় তিন বিভাগে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর। ভারী বৃষ্টির কারণে চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় ভ‚মিধস হতে পারে বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দুপুরে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রবল ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাবে ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগে ভারী (৪৪ থেকে ৮৮ মিমি) থেকে অতিভারী (২৮৯ মিমি) বর্ষণ হতে পারে। অতি ভারী বর্ষণের প্রভাবে কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও চট্টগ্রামের পাহাড়ী অঞ্চলের কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং এর অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরগুলোতে নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩ থেকে ৫ ফুটের বেশি উচ্চতার বায়ু তাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ উপক‚লের কাছাকাঠি চলে আসায় পায়রা ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৫ নম্বর বিপৎ সংকেত জারি করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
‘হামুন’ মোকাবিলায় প্রস্তুত ২৯০ মেডিকেল টিম:
প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করেছে চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়। ঘূর্ণিঝড় পূর্ববর্তী, ঘূর্ণিঝড়কালীন এবং পরবর্তীতে যেকোনো ধরনের সেবা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বিশেষ কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্যমতে, ১৫টি উপজেলার ২০০টি ইউনিয়নের ২০০টি মেডিকেল টিম, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫টি করে ৭৫টি টিম, ৯টি আরবান ডিসপেনসারিতে ৯টি মেডিকেল টিম, স্কুল হেলথ ক্লিনিকে ১টি মেডিকেল টিম, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে ৫টি মেডিকেল টিমসহ ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয়ের জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া। তিনি বলেন, যেকোনো ধরনের সেবা গ্রহণের উদ্দেশ্যে বা তথ্য জানার জন্য আমাদের ২৪ ঘণ্টা কন্ট্রোল রুম চালু আছে। যেটা সারাবছর থাকে। একইসঙ্গে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ মোকাবিলায় জরুরি পরিস্থিতিতে উপজেলাসহ আমাদের মোট ২৯০টি মেডিকেল টিম প্রস্তুত করা হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যবিভাগ প্রস্তুত আছে। এছাড়াও যেকোনো জরুরি প্রয়োজনে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে যোগাযোগ করতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’
প্রতিনিধি/একেবি