images

সারাদেশ

গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলার নামে অবৈধ লটারি বাণিজ্য

জেলা প্রতিনিধি

০৯ অক্টোবর ২০২৩, ১০:৪৩ এএম

রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি উপজেলার বহরপুর ইউনিয়নে রেলের মাঠে চলছে গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা। গ্রামীণ মেলার অনুমতি নিয়ে কমিটি অবৈধ্যভাবে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা র‌্যাফেল ড্র লটারি বাণিজ্য। মেলা শুরুর দিন থেকেই এই অবৈধ র‌্যাফেল ড্র এর নামে জেলার ৫টি উপজেলাতেই চলছে লটারির এই বাণিজ্য। প্রতিদিন মোটরসাইকেল দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে ফাঁদে ফেলে কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি। আর লটারি কিনে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

সরেজমিনে মেলায় গিয়ে দেখা যায়, বালিয়াকান্দি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এর আয়োজনে গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ শনিবার থেকে বহরপুর রেলের ফুটবল খেলার মাঠে গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা শুরু হয়েছে। মেলার প্রথম দিন থেকেই থেকেই লোভনীয় সব বিজ্ঞাপন প্রচার করে মোটরসাইকেল, বাইসাইকেল, টিভি, ফ্রিজসহ বিভিন্ন রকমের ৬১টি পুরস্কারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত র‌্যাফেল ড্র এর টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে।  পিকআপ, ব্যাটারিচালিত ভ্যান, ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে করে শতাধিক লটারি বিক্রেতা রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি, সদর উপজেলা, গোয়ালন্দ, কালুখালী ও পাংশা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে টিকিট বিক্রি করছে। আর বিক্রেতাদের কথার ফাঁদে পরে ২০ টাকা প্রতিটি টিকিট কিনছে সাধারণ মানুষ। অধিকাংশ ক্রেতাই কমপক্ষে ৫টি করে টিকিট কিনছেন। মেলার আয়োজক ও র‌্যাফল ড্র সংশ্লিষ্টরা এভাবে প্রতিদিন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি টাকা।

মেলার প্রধান গেটে দেখা যায়, কয়েকটি টেবিল সাজিয়ে বাক্স নিয়ে বসে আছে টিকিট বিক্রেতারা।

এসময় কথা হয় রফিকুল মোল্লা নামের একজন লটারি ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, আমি প্রতিদিন ৫টি করে টিকিট কাটছি। এখন পর্যন্ত একটি পুরস্কার পাইনি। আসলে এগুলো মিথ্যা ও ভুয়া। লোভে পরে আমরা যেন হারাচ্ছি কষ্টের টাকা। তেমনি লটারি বিক্রেতারা প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আমার মত লাখ লাখ সাধারণ মানুষ টিকিট কেটে নিঃস্ব হচ্ছে। মেলায় লটারি বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

আরেক ক্রেতা রিকশাচালক সফিক মন্ডল বলেন, প্রতিদিন রাজবাড়ী জেলার সবখানে লটারির বিক্রয় গাড়ি ঘুরছে। নানা ধরনের লোভনীয় কথা বলে মানুষকে ফাঁদে ফেলে হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। মানুষের মনে লোভ জাগিয়ে এমন প্রতারণা করছে চক্রটি। দ্রুত মেলার লটারি বিক্রি বন্ধ হলে জেলার সাধারণ মানুষ বেঁচে যাবে।

thumbnail_IMG_20231006_171548

ভ্যানচালক করিম মন্ডল বলেন, আমি গত কয়েকদিন লোভে পরে ৮০০ টাকার টিকিট কেটেছি। এটা আমার ভুল। আসলে বিক্রেতারা যেভাবে মাইকিং করে তাতে আমার মত অনেক গরীব মানুষ লোভে পরে কষ্টের কামাই করা টাকা ধরা খাচ্ছে। লটারি বিক্রেতারা বাটপারি করছে। দ্রুত লটারি বন্ধ করা হোক।

মেলা পরিচালনা কমিটির সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, কিছু শর্ত মেনে মেলা করার জন্য প্রশাসন আমাদের অনুমতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে প্রশাসন আমাদের লটারি বিক্রির ইজিবাইক জব্দ করেছে। আমরা মেলা কমিটি আলোচনা করে মেলায় লটারি চলবে কিনা সে বিষয় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

বালিয়াকান্দি উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসিবুল হাসান জানান, বালিয়াকান্দি এলাকায় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকে বহরপুর গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলার অবৈধ লটারি খেলার টিকিট বিক্রির সময় টিকিট, ৪টি ড্রাম ও প্রচার মাইক জব্দ করা হয়েছে।

বালিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রফিকুল ইসলাম জানান, শর্তসাপেক্ষে বহরপুরে গ্রামীণ শিল্প পণ্য মেলা করার জন্য প্রশাসনের অনুমতি রয়েছে। শর্তে বলা ছিল লটারি বিক্রি করা যাবে না। কিন্তু মেলা কমিটি নির্দেশনা অমান্য করে অবৈধভাবে লটারি বিক্রি করার অপরাধ করেছে। ইতোমধ্যে অভিযান চালানো হয়েছে। জনস্বার্থে আমাদের এ অভিযান অব্যহত থাকবে।

রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক আবু কায়সার খান জানান, আয়োজক কমিটিকে গ্রামীণ মেলা করার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। র‌্যাফল ড্র চালানোর কোনো অনুমোদন নেই। বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রশাসন অভিযান চালিয়েছে। অবৈধভাবে কোনো কিছু করলে কমিটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

টিবি