জেলা প্রতিনিধি
০৮ অক্টোবর ২০২৩, ০৩:০১ পিএম
নৌকা ট্র্যাজেডির স্মরণীয় এলাকা পঞ্চগড়ের বোদা মাড়েয়ায় করতোয়া নদীতে বহুকাঙ্খিত ওয়াই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হতে যাচ্ছে চলতি মাসেই।
রোববার (৮ অক্টোবর) সকালে পঞ্চগড় স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ জামান ঢাকা মেইলকে জানান, আগামী ১৮ অক্টোবর রেলমন্ত্রী বহুল প্রত্যাশিত মাড়েয়ার আউলিয়া ঘাটে ওয়াই আকৃতির সেতুর নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। ইতোমধ্যে ঠিকাদার নির্বাচন প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ সেতু এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি। সেতুটি হলে স্থানীয় মানুষের দুর্ভোগ অনেকটাই কমে আসবে।
এছাড়াও ওয়াই সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর রেলমন্ত্রী ১৯ অক্টোবর দেবীগঞ্জ উপজেলায় খরখরিয়া নদীর উপর প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯০ মিটার দৈর্ঘের উমেসের ডাঙ্গা ব্রিজ নির্মাণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন।
জানা যায়, ১১৬ কোটি ব্যয়ে জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া বামনহাট ও বড়শশী ইউনিয়নের করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে প্রায় ১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে এই ওয়াই ব্রিজ নির্মিত হচ্ছে। আগামী ১৮ অক্টোবর সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর করবেন রেলপথ মন্ত্রী ও পঞ্চগড় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আলহাজ্ব মো.নুরুল ইসলাম সুজন এমপি।
পরে পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ (দ্বিতীয় পর্যায়) প্রকল্পের আওতায় জেলার বোদা-ভাউলাগঞ্জ জিসি সড়কের আউলিয়া ঘাটে প্রায় ১ হাজার ১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৭ দশমিক ৩২ মিটার প্রস্থের ওয়াই আকৃতির সেতু নির্মাণের প্রস্তাব একনেকে পাস হয়। চূড়ান্ত করা হয় ডিজাইনও। সে ডিজাইনে আগামী ১৮ অক্টোবর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের মধ্য দিয়ে শুরু হবে সেতু নির্মাণের কাজ। দুর্ভোগ লাঘব হবে স্থানীয়দের। দীর্ঘদিন ধরেই এই আউলিয়া ঘাটে সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন স্থানীয়রা।
এর আগে,আউলিয়া ঘাটে ভয়াবহ নৌকা ডুবির ট্রাজেডির ঘটনায় গত বছরের ২ অক্টোবর করতোয়া নদীতে দেশের বৃহত্তম ‘ওয়াই’ ব্রিজ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী। ঘোষণার পর ৭ অক্টোবর স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (সেতু ডিজাইন) মোহা. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল আউলিয়া ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে ওয়াই আকৃতির সেতুর খসড়া লেআউট যাচাই করেন তারা।
স্থানীয়রা বলে আসছিলেন,পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে করতোয়া নদী বোদা বড়শশী ও কাজলদীঘি কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নকে উপজেলা সদর থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। এ কারণে নদীতে সেতুর অভাবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স, কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যসহ যানবাহন গুলোকে জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রায় ৫০ কিলোমিটার পথ ঘুরে যাতায়াত করতে হয়। সেতু না থাকায় বড়শশী ও কালিয়াগঞ্জ ইউনিয়নের মানুষের উপজেলা শহরে যেতে ঝুঁকি নিয়ে নৌকায় পারাপার হতে হয়।
অন্যদিকে, প্রতি বছর বোদার বদেশ্বরী মন্দিরে মহালয়ার দিনে বিশেষ পূজা-অর্চনার আয়োজন করা হয়। সীতার ১৬টি খন্ডের একটি খন্ড এই মন্দিরে রাখা হয়েছিল এমন জনশ্রুতিতে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে পুজায় অংশ নেন অগণিত মানুষ। এসব পূণ্যার্থীদের নদী পার হতে নৌকায় চড়ে বদেশ্বরী মন্দিরে অংশ নিতে হয়। ব্রিজটি নির্মিত হলে বোদা ও দেবীগঞ্জের মানুষের যাতায়াত অনেক সহজ হয়ে যাবে এমনই বলছেন তারা।
প্রসঙ্গত,গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর জেলার বোদা উপজেলার মাড়েয়া ইউনিয়নে করতোয়া নদীর আউলিয়া ঘাটে নৌকাডুবিতে ৭২ জনের মর্মান্তিক মৃত্যুতে ঘটেছিল বিভীষিকাময় ঘটনা। এটি ছিল এ জেলার স্বাধীনতার পর অত্যন্ত বেদনাদায়ক স্মরণকালের ভয়াবহ ঘটনা। নদী থেকে একের পর এক মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিল পঞ্চগড়সহ পুরো দেশ। সেদিন দুর্গাপূজার আগে মহালয়ার দিন হিন্দু ধর্মের শতাধিক পুণ্যার্থী আউলিয়া ঘাট থেকে একটি নৌকায় উঠেছিলেন বোদেশ্বরী মন্দিরে পূজা-অর্চনায় যোগ দিতে। কিন্তু শতাধিক পুণ্যার্থীর ভারে নদীর মাঝে গিয়ে উল্টে যায় নৌকাটি। ৭২ জনের প্রাণহানির মধ্য দিয়ে মৃত্যুপূরী হয়ে উঠেছিল এই আউলিয়া ঘাট।
প্রতিনিধি/একেবি