images

সারাদেশ

বগুড়ার ভদ্রাবতী নদী যেন এক টুকরো রাতারগুল

জেলা প্রতিনিধি

২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১২:৪৫ এএম

বগুড়ার নন্দীগ্রাম উপজেলার বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর বাজারে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ছোট্ট একটি কালভার্ট। কাল ভার্টে দাড়িয়ে দেখা মেলে স্বচ্ছ মিষ্টি নদীর পানি।

চারিদিকের পরিবেশ দেখে মনে হয় এ যেনো একটুকরো রাতারগুল। কালভার্ট থেকে নেমে কিছুটা এগিয়ে দেখা মিলল স্বচ্ছ জলে নৌকা বাইতে আসা ভ্রমন পিপাসুদের একটি দল।

bogura11

এ মুরাদপুর ভদ্রাবতী নদীর নাম শুনেছেন তারা ইউটিউবে।তারা শুনেছেন বগুড়ার বুকে একটুকরো রাতারগুলের নাম।সেখান থেকেই তাদের ইচ্ছে হয় এই ভদ্রাবতী নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে তাই শহর থেকে ছুটে আসেন মুরাদপুর গ্রামে। আরও খানিকটা আগাতেই চোখে মিলবে এই গ্রামের বাসিন্দারা কেউ মাছ ধরছেন আবার কেউ স্বচ্ছ পানিতে ঝুপ করে গোসল করতে নেমেছেন। দুই ধারে গাছপালা তার মাঝ দিয়ে বয়ে চলেছে ভদ্রাবতী নদী।

bogura-44

নদীর দুই ধারের  গাছগুলো বেশ ডালপালা ছড়িয়ে আছে। গাছগাছালির ভেতর দিয়ে নদীতে  ঘুরতে  মনে হচ্ছে এ যেনো রাতারগুল। আহ রাতারগুল বগুড়ায়! সুন্দর সবুজ মনোরম পরিবেশে ভদ্রাবতী  নদী  যেনো সেজেছে তার অলৌকিক রূপে। নৌকার তলায় ঢেউয়ের শব্দে অন্য রকম এক আবহ তৈরি হলো। নীরব প্রকৃতি আর মৃদুমন্দ বাতাসে  এরই মধ্যে নিস্তব্ধতা ভাঙে গাছে বসে থাকা পাখির ডাকে, হঠাৎ ফুড়ুৎ করে উড়াল দেয় একঝাঁক পাখি।

bogura-22

কোলাহলহীন শান্ত-স্নিগ্ধ ভদ্রাবতী ক্ষণে ক্ষণে রূপ বদল করে চলে।এই ভদ্রাবতী নদীর উৎপত্তি নিয়ে কল্প কাহীনিও শোনা যায় এলাকাবাসী মুখে। নন্দীগ্রাম উপজেলা সদর থেকে পূর্ব দিকে প্রায় ৮কিলোমিটার দূরে ১নং বুড়ইল ইউনিয়নের মুরাদপুর গ্রামের শেষপ্রান্তে রয়েছে ভদ্রাবতী নদী। বগুড়া জেলার শাজাহানপুর উপজেলার শাবরুল বিল থেকে উৎপত্তি ভদ্রাবতি নদির। এই নদীর সাথে সিংড়ার চলনবিল ও যমুনা নদীর সংযোগ রয়েছে।

মুরাদপুর গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ আব্দুর কুদ্দুস সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, দাদার মুখে শুনেছি রাজার শাসন আমলে শাবরুল দিঘীর বুক চিরে ভদ্রানদীর আভির্ভাব ঘটে। সেন বংসের অচ্যিন কুমার নামের শেষ রাজার আমলে তার কন্যা ভদ্রাবতীর নাম অনুসারে নদীর নামকরণ। আগে বর্ষা মৌসুমে ভরা পানিতে নদী থৈথৈ করতো। এখন নদীতে পানি থাকেনা।এলাকার  মানুষ হিসেবে কুদ্দুসের  দাবি, সরকারি পৃষ্টপোষকতায় ভদ্রাবতী  খননের মাধ্যমে নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা ও একটি সুইচ গেট।

bogura-33

ভদ্রাবতীর সৌন্দর্য দেখতে এসেছেন বগুড়া শহর থেকে  মাসুদ  নামের এক ভ্রমণপিপাসু।  মাসুদ বলেন  ইউটিউবে দেখলাম বগুড়ায় রাতারগুল, যেহেতু রাতারগুল সিলেটে অবস্থিত হওয়ার কারণে যাওয়া হয়নি, তাই এলাকার পাশে হওয়ায় দেখতে চলে এলাম।আমার খুব ভালো লেগেছে। ইউটিউবে দেখেছি সিলেটের রাতারগুল, আর এখানে এসে দেখলাম অনেকটাই মিল আছে।এটা আমার কাছে গরিবের রাতারগুল বললে ভুল হবেনা।এখানে এসে একটা সমস্যার সম্মুখীন হয়েছি সেটি হলো গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই এবং ভালো কোন খাবারের রেস্টুরেন্ট নেই। আবার নৌকায় ওঠার জন্য ভালো ঘাট ও নেই। যদি সরকার এইসবের দিকে লক্ষ্য রাখে তাহলে এটি একটি সুন্দর  দর্শনীয় স্থান হবে।

শামিম হোসেন নামের এক মাঝি বলেন, আমাদের এলাকায় এই ভদ্রাবতী নদী একটি দর্শনীয় স্থানের মত হয়ে গেছে।প্রতিদিন অনেক দূর থেকে লোকজন আসেন এই স্থানটি ভ্রমণ করতে।  এটি আমাদের এলাকার জন্য একটি গর্বের বিষয়।

bogura-55

বুড়ইল ইউনিয়ান পরিষদের সদস্য   জবায়ের আহমেদ বলেন জৈষ্ঠ্য, আষাঢ়, শ্রাবণ এই তিন মাস পানি থাকে তারপরে আর পানি থাকে না নদীতে। পানি কম হওয়ার কারণে বাকি সময় নৌকাও চলে না। ১৩ কিলেমিটার জুরে  নদীটির দুই পাশে সবুজ গাছ পালা দিয়ে যে সুন্দর মনোরম  প্রাকৃতিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে সেটি দেখতে ছুটে আসছে বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনাথীরা। এটি আমাদের এলাকার জন্য গর্ব।