জেলা প্রতিনিধি
০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২০ এএম
কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার খোশবাস উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের মাঠে আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।
শনিবার (২ সেপ্টেম্বর) অস্ত্র প্রদর্শন করা ব্যক্তিদের শনাক্ত করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। তাদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলেও জানানো হয়েছে।
এর আগে, শুক্রবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া ১ মিনিট ১ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, আগ্নেয়াস্ত্র হাতে স্কুল মাঠে মহড়া দিচ্ছে কয়েকজন যুবক। তাদের মধ্যে কমলা ও সাদা রঙের টি-শার্ট, জিন্স প্যান্ট পরা দুই যুবকের হাতে কয়েক ফুট লম্বা আগ্নেয়াস্ত্র। তারা বারবার সামনে থাকা প্রতিপক্ষের দিকে আগ্নেয়াস্ত্র তাঁক করছিলেন। আর হলুদ রঙের টি-শার্ট পর একজন যুবকসহ কয়েকজন তাদের শান্ত করছিলেন।
মহড়া দেওয়া ব্যক্তিরা কারা এই প্রশ্নে স্থানীয় একাধিক সূত্র ও পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ ঘটনাটি গত ১২ আগস্টের। মহড়া দেওয়া দুজন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবক লীগের কর্মী রিয়াজ হোসেন ও ফরহাদ হোসেন। ১২ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের প্রস্তুতি সভা চলাকালে বাকবিতণ্ডার এক পর্যায়ে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা অস্ত্রের মহড়া দেয়।
দলীয় সূত্র বলছে, জাতীয় শোক দিবসের প্রস্তুতি সভায় স্বেচ্ছাসেবক লীগের উদ্যোগে একটি ব্যানার লাগানো হয়। ওই ব্যানারে বঙ্গবন্ধু ও উপজেলা চেয়ারম্যান এএনএম মইনুল ইসলামের ছবির সাথে রিয়াজ হোসেন ও ফরহাদ হোসেনের ছবি দেওয়া হয়। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান ইউনিয়ন যুব লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম খোকার লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওই ব্যানারটি ছিঁড়ে ফেলেন। ব্যানার ছিঁড়ে ফেলার ঘটনায় এ সময় মাঠে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এতে অস্ত্র নিয়ে ফরহাদ ও রিয়াজ খোরশেদ আলম খোকার লোকজনের ওপর হামলার চেষ্টা করে। মাঠে উভয় গ্রুপের মাঝে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া হয়। এ সময় মাঠে একাধিক ককটেল ফাটায় ফরহাদ ও রিয়াজরা। এতে স্থানীয়দের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ভিডিওতে খোরশেদ আলম খোকার পক্ষের কাউকে দেখা যায়নি।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত যুবলীগের আহ্য়্ক কবির হোসেন বলেন, ব্যানার ছেঁড়ার পর গিয়ে দেখি রিয়াজ ও ফরহাদ অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে। তখন তাদের মাঠ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে এ ঘটনায় কেউ আহত হয়নি। তারা গুলিও চালায়নি।
কেন তারা এসেছিল? এবং তারা কার অনুসারী এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা জানি না তারা এভাবে কেন এসেছিল। তারা কার অনুসারী এ বিষয়ে কিছু জানি না।
সভায় উপস্থিত যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলম খোকা বলেন, যাদের হাতে অস্ত্র দেখা গেছে তাদের শুধু নামই জানি। আর কিছুই জানি না। তাদের কোন পদও নেই। এভাবে অস্ত্রসহ তারা কেন এসেছিল তা তারাই ভালো বলতে পারবে। শোক দিবসের ব্যানারে তাদের ছবি দেখে আমাদের অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হয়। এর কিছুক্ষণপরই ককটেলের শব্দ হতে থাকে। বাইরে গিয়ে দেখি অস্ত্র নিয়ে তারা মহড়া দিচ্ছে। এ বিষয়ে উপজেলা চেয়ারম্যানকে জানানো হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মহড়া দেওয়া রিয়াজ হোসেন ও ফরহাদ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
খোশবাস হাই স্কুল কমিটি সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান মঈনুল গ্রুপের অনুসারীদের কি প্রোগ্রাম ছিলো, সেখানে তাদের কী ঝামেলা হয়। এর চেয়ে আমি বেশি কিছু জানি না।
খোশবাস হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহ আলম বলেন, আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না।
খোশবাস ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হাসান সরদারের মুঠোফোনে বারবার কল করেও পাওয়া যায়নি।
শনিবার বিকেলে কুমিল্লার বরুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো. ফিরোজ হোসেন বলেন, আমরা অস্ত্র প্রদর্শনের পরে জানতে পারলেও তাদের শনাক্ত করা হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে অভিযান চলছে। প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা হবে।
প্রতিনিধি/এইচই