জেলা প্রতিনিধি
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০৩:১১ পিএম
ঢাকার সদরঘাটের বিখ্যাত পানের কথা শোনা গেলেও এখন নওগাঁর আত্রাই উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের বজ্রপুর বাজারে আজিম মামার মনকাড়া আগুন পান দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বাহারি রঙয়ের মসলাযুক্ত এ পান মানুষের দৃষ্টি কেড়েছে। প্রায় অর্ধশত উপকরণ দিয়ে তৈরিকৃত মিষ্টিযুক্ত আগুন পানের স্বাদ নিতে পানপ্রেমীদের আগ্রহ বাড়ছে। মুখে দেওয়ার আগে পানে আগুন জ্বেলে দেওয়া হয় বলে এর নামকরণ হয়েছে আগুন পান।
বাঙালি অতিথিপরায়ন জাতি। খাবারের পর পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন বাঙালি জাতির পুরানো ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন নামে নামকরণ হয়েছে পানের। যেমন : বেনারসি পান, শাহী পান, কাশ্মীরি পান, জামাই-বউ পান, প্রেমিক-প্রেমিকা পান, ভালোবাসার পান, হানিমুন পান, আরও কত কী।
যে নামেই ডাকা হয়না কেন পান তো পানই। খেয়ে ঠোঁট লাল করা করতেই হবে। পানে এখন আর কেবল চুন, সুপারি আর খয়েরই ব্যবহৃত হয়না। নানা রকম মসলা হিসেবে দোকানের সামনে কাঁচের কৌটায় সাজিয়ে রাখা হয়েছে পানের উপাদান। এর মধ্যে আছে চকলেট, বাদাম, নারকেল, গুলতান চাটনি, চকলেট ক্রিম, ভ্যানিলা ক্রিম, স্ট্রবেরি ও অরেঞ্জ জেলি, পেঁপে ভাজি, টুটিফুটি মোরব্বা, কোরমা, সুইটবল দানা, কালিজিরা, তবক, সুপারি, লবঙ্গ, একাঙ্গী, চুনসহ অর্ধশতাধিক উপাদান।
বাঙালি অতিথিপরায়ন জাতি। খাবারের পর পান দিয়ে অতিথি আপ্যায়ন বাঙালি জাতির পুরানো ঐতিহ্য। সময়ের সঙ্গে বিভিন্ন নামে নামকরণ হয়েছে পানের। দোকানে বসে পান তৈরি করছেন আজিম হোসেন। আগুন পান তৈরি করতে একটি বড় আকৃতির পানপাতার ওপর একে একে উপাদান সাজালেন। বিভিন্ন রকমের উপাদান দেয়া শেষে সেগুলোর ওপর দিলেন একধরনের বিশেষ তরল পদার্থ। সেটিতে লাইটার দিয়ে আগুন ধরিয়ে দিলেন। উপাদানগুলোতে আগুন জ্বলে ওঠার পর পান ভাঁজ করে নিজেই খাইয়ে দেন ক্রেতাদের।
স্থানীয় বজ্রপুর গ্রামের তাসের হোসেনের ছেলে ৩৫ বছর বয়সী যুবক আজিম হোসেন প্রায় ১৫ বছর থেকে পানের দোকান দিয়ে নানা স্বাদের পান বিক্রি করে আসছেন। গত ১ বছর থেকে শুরু করেছেন আগুন পানের ব্যবসা।
আজিম হোসেন জানান, এক বছর আগে ঢাকার সদরঘাটের একটি পান স্টল থেকে আগুন পানের জন্য সাঁচি পান ব্যবহার করা শেখেন। এই বিশেষ জাতের পান বগুড়া থেকে আনা হয়। আর মসলা আসে ভারত থেকে।
কিন্তু পানে আগুন জ্বালিয়ে পরিবেশনের বিষয়ে জানতে চাইলে আজিম বলেন, ‘‘পানের উপাদানগুলোতে আগুন দিলে উপাদানগুলো ভালোভাবে মিশে যায়। ‘স্মোকি ফ্লেভার’ তৈরি হয়। এই স্বাদ অন্যান্য পান থেকে আলাদা। সাধারণ আগুন পানের দাম ২০ টাকা, আর মসলা ভেদে বিশেষ পানের দাম ৪০ টাকা। ’’

প্রতি খিলি পানের দাম ১০ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। শাহজাদী ১৫, আর বোম্বে মাসালা খিলি বিক্রি হয় ২৫ টাকা। তবে আগুন পান বর্তমানে ভালো বিক্রি হচ্ছে।
কেমন বেচা বিক্রি হয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভালোই বেচা-বিক্রি হয়। পান স্টলের দোকান দিয়ে বউ, সন্তান, মা, বাবাকে নিয়ে সংসার চলে। তবে মাসিক কেমন লাভ হয় এটা সঠিকভাবে বলা যাবেনা। আর ব্যবসার লাভের কথা বলা ঠিকনা।’
আজিম মামার পান স্টলে পান খেতে আসা নাজমুল হক বলেন, ‘আগুন পান এর আগে কখনো খাইনি। এই প্রথম খেলাম। একটা অন্যরকম স্বাদ এই পানে। নানা রকম মসলা দিয়ে এই পান তৈরি করা হয়। খেতে আসলেই অনেক মজা। পান মুখে দিলেই আগুন নিভে যায়। তখন গরম গরম খাবারের যে স্বাদ পাওয়া যায়, পানেও সে স্বাদ লাগে।’
নওগাঁ শহর থেকে ব্যক্তিগত কাজে বজ্রপুর বাজারে এসেছেন মোশারফ দেওয়ান। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আজিম মামার দোকানে থেকে একটি আগুন পান কিনে মুখে দিয়েছেন।
এ সময় মোশারাফ বলেন, ‘পান আমি প্রায় ২০-২২ বছর ধরে খাচ্ছি। তবে আগুন পান এর আগে কখনো খাওয়া হয়নি। এই প্রথম আগুনপানের স্বাদ নিলাম। অন্যরকম একটি স্বাদ অনুভব করলাম। সত্যি আগুনপানের স্বাদের প্রেমে পড়ে গেছি। ভাবছি মাঝে মাঝে এই পান খাব।’
নওগাঁ শহর থেকে ব্যক্তিগত কাজে বজ্রপুর বাজারে এসেছেন মোশারফ দেওয়ান। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে আজিম মামার দোকানে থেকে একটি আগুন পান কিনে মুখে দিয়েছেন। আজিম মামার পান স্টলে পান খেতে আসা মেহেদী হাসান রুবেল বলেন, ‘আমি তো আজিম মামার দোকানের পান ছাড়া অন্য কারো দোকানের পান খাইনা। আমি প্রায় ৬-৭ বছর ধরে এই দোকানের পান খেয়ে আসতেছি। তার বানানো পান আমার মুখে অন্য রকম একটা স্বাদ এনে দেয়।
নওগাঁ সিভিল সার্জন অফিসের মেডিকেল অফিসার ডা. আশিষ কুমার সরকার জানালেন, আগুন পান মূলত গ্লিসারিন পার পটাশিয়াম ও পানির মিশ্রণে তৈরি হয়। আর মানুষের শরীরের ভেতরের স্বাভাবিক তাপমাত্রার চেয়ে আগুন পানের তাপ বেশি থাকবে। সে ক্ষেত্রে মুখের ভেতরের কোষগুলো পুড়ে যেতে পারে। নিয়মিত খেলে ক্যানসার হতে পারে খাদ্যনালিতে। তাই আগুন পান মুখে দিতে সাবধান থাকতে হবে।
এইচই