জেলা প্রতিনিধি
০৪ আগস্ট ২০২৩, ০১:৫২ পিএম
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে শত বছরের প্রাচীন হাট কৈজুরী ডিঙি নৌকার হাট। প্রতি শুক্রবারে উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার পূর্ব দিকে যমুনা নদীর তীরে কৈজুরীতে নৌকার পসরা সাজিয়ে হাট বসে। এ ডিঙি নৌকার হাটে সড়ক ও নদীপথে বিক্রির জন্য শতাধিক ডিঙি নৌকা আনা হয়েছে।
কালের বিবর্তনে প্রত্যন্ত জনপদে রাস্তা ঘাট তৈরি হওয়ায় কোষা, বজরা, গয়না নৌকার সঙ্গে বড় বড় পণ্যবাহী নৌকার বিলুপ্ত ঘটলেও কৈজুরীতে ডিঙি নৌকার হাট এখনও টিকে আছে কালের সাক্ষী হয়ে।
নিম্নাঞ্চল হিসেবে পরিচিত এ উপজেলার সিংহভাগ এলাকা বর্ষার শুরুতেই প্লাবিত হওয়ায় গ্রামীণ জনপদের মানুষের যাতায়াতের মাধ্যম হয় ডিঙি নৌকা। নদীপাড়ের লাখো মানুষকে পুরো বর্ষা মৌসুম এমনকি বর্ষার পরেও অনেক দিন ডিঙি নৌকায় চড়েই চলাফেরা করতে হয়। তাই বর্ষার আগমনকে ঘিরেই কেনাবেচা জমে উঠে কৈজুরী ডিঙি নৌকা হাটে।
যমুনা, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসাগর আর গোহালা নদীর মতো বড় বড় নদী শাহজাদপুর উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহমান থাকায় শত বছর আগে থেকেই যমুনা পাড়ের কৈজুরীতে নৌকার হাট বসে আসছে।
নৌকার কারিগররা জানান, বর্ষা এলেই এ অঞ্চলে নৌকার চাহিদা বেড়ে যায়। সারা বছর অন্য কাজ করলেও এসময় তারা শুধু নৌকাই তৈরি করেন। বছরের তিন থেকে চার মাস তাদের এ ব্যস্ততা থাকে। এখন দিন-রাত নৌকা তৈরিতেই সময় কাটছে তাদের।
কৈজুরী হাটে নৌকা কিনতে আসা আজমত আলী বলেন, এই হাট খুব পুরোনো। আমরা ছোট বেলায় দাদার সঙ্গে এখানে নৌকা কিনতে এসেছি। তখন উৎসাহ আনন্দটা ছিল একেবারে ভিন্ন। তখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা দিয়ে বড় নৌকা কিনে বৈঠা দিয়ে বেয়ে বাড়ি গিয়েছি। এখন সে আমেজ আর নেই। নৌকা নিয়ে যেতে হয় ভ্যানগাড়িতে করে।
রতনকান্দী গ্রামের নৌকা ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক মেম্বর জানান, তিনি নৌকা তৈরি ও বিক্রি পেশার সঙ্গে জড়িত ২০ বছর ধরে। এখন যারা নৌকা কিনছে তারা শুধু নদী ও বন্যায় পারাপারের জন্য কিনছে। প্রতি বছর ৫০ থেকে ১০০টি নৌকা তার কারখানায় তৈরী হয়। এখন পর্যন্ত কেনা-বেচা আশাব্যঞ্জক নয়। তবে বন্যার পানি বাড়লেই নৌকার চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। জমে উঠবে কেনাবেচা।
শাহজাদপুর উপজেলার ১০নং কৈজুরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মোয়াজ্জেম হোসেন খোকন বলেন, কৈজুরী ডিঙি নৌকার হাট প্রাচীণকাল থেকেই বসে আসছে। দুর দুরান্ত থেকে মানুষ নৌকা কিনতে আসতো । তবে আগের মতো জৌলুস নেই এই হাটে। গ্রাম গঞ্জে যত্রতত্র রাস্তা ঘাট হওয়ায় ডিঙি নৌকার কদর কমে গেছে। তবুও কৈজুরী নৌকার হাট শত বছরের ঐতিহ্য বহন করছে।
প্রতিনিধি/এইচই