জেলা প্রতিনিধি
১২ জুলাই ২০২৩, ০৪:৫৪ পিএম
স্বল্প পুঁজিতে কম সময়েই অধিক লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন বাড়ছে ড্রাগন ফলের চাষাবাদ। ভাল দাম পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন জেলার ড্রাঙ্গন চাষীরা।
কৃষিবিদরা বলছেন, নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধড্রাগন ফলটি সব বয়সের মানুষের জন্য একটি আদর্শ ফল। তাই জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে ড্রাগন ফলের চাষ। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে রাজবাড়ীতে এবার ৩২ লাখ টাকার ড্রাগন বিক্রি হবে।
স্বল্প পরিসরে বাগানে, ফসলি জমিতে,এমনকি বাড়ীর ছাদে টব ও ড্রামে ড্রাগন রোপন করে অর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছেন এখন অনেকে। রাজবাড়ীতে এই ড্রাগন ফল মানুষের কাছে নতুন। গত ৫/৭ বছর ধরে এটি পরিচিতি পাচ্ছে। বিভিন্ন রোগের ঔষুধ হিসেবে কাজ করায় রাজবাড়ীতে প্রায় প্রতিটি বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় ও ছাদে ব্যাপক ভাবে শুরু হয়েছে ড্রাগন ফল এর চাষ ।
রাসায়নিক সার ও কিটনাশক ছাড়াই ড্রাগন ফল চাষ করা যায়। শুধু মাত্র একটু পরিচর্যা করলেই ড্রাগন গাছে ফল ধরে তাই অনেক গৃহবধূ ও চাষীরা ড্রাগন ফলের চাষে দিন দিন আগ্রহী হয়ে উঠছেন। দেখতে সুন্দর স্বাদে সুস্বাদু ও অধিক পুষ্টিগুন থাকায় রাজবাড়ী জেলার মানুষের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ড্রাগন ফল।
জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, রাজবাড়ী জেলার ৫টি উপজেলায় বর্তমানে প্রায় শতাধিক চাষী ৩ হেক্টর জমিতে করছেন ড্রাগন ফলের চাষ। যাতে চলতি মৌসুমে উৎপাদিত হবে প্রায় ১৬ মেট্রিক টন ড্রাগন ফল। প্রতি কেজি ২০০ টাকা হলে অর্থের হিসেবে যা প্রায় ৩২ লক্ষ টাকা।
রাজবাড়ী জেলা সদরের রূপপুর গ্রামের ৬৬ বছর বয়সী কৃষক গফুর কাজী। দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে তিনি কৃষি কাজের সাথেই নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন। গত ৮ বছর আগে ২০১৫ সালে কৃষি বিভাগে একটি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ড্রাগন ফল সম্পর্কে জানতে পারেন। তারপর ১০ শতাংশ জমিতে ড্রাগন চাষে একটি প্রদর্শনী বাগান শুরু করেন। এরপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি ড্রাগন চাষী গফুর কাজীকে। প্রথম বছরেই ৪০টি গাছে ধরে ফল। পরের বছর দেড় লাখ টাকার ফল বিক্রি করেন তিনি। এভাবেই অর্থনৈতিক ভাবে স্বচ্ছল হয়েছেন। এখন তিনি ১৫ শতাংশ জমিতে ৭৪টি গাছ থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় থেকে ২ লাখ টাকার ড্রাগন ফল বিক্রি করছেন।
কৃষক গফুর কাজী বলেন, আমি দীর্ঘদিন কৃষিকাজ করি। ধান, পাট, গম, পেঁয়াজ, রসুন, শাক সবজি সহ সব ধরনের ফসলের আবাদ করেছি। গত ৭ বছর আগে কৃষি অফিসে একটি প্রশিক্ষণে ড্রাঙ্গণ ফলর কথা জানতে পেরে চাষের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করি। পরে কৃষি অফিস থেকে ১০ শতাংশ জমিতে ৪০টি চারা দিয়ে একটি প্রদর্শনী প্লট পাই। সেখান থেকেই ড্রাঙ্গণ চাষ শুরু। এরপর আর ড্রাঙ্গণ চাষে লোকসান হয়নি। ভালো লাভ হয়েছে। প্রতি বছর প্রায় দেড় লক্ষ টাকার মত ড্রাগন বিক্রি করছি। কৃষি কাজ করেই আমি বাড়ি তৈরি করেছি। ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শিখেয়েছি। আমার সফলতা দেখে অনেকই এখন ড্রাগনের চাষ শুরু করেছে।
স্থানীয় কৃষক আব্দুল জলিল শেখ (৬০) বলেন, গফুর কাজী ড্রাগন চাষ করে লাভোবান হয়েছেন। তার কাছ থেকে চারা নিয়ে আমি আমার ৫ শতাংশ জমিতে ড্রাগনের বাগান করতে ইচ্ছুক।
কৃষাণী সাহেরা বেগম বলেন, ড্রাগন ফল চাষ লাভজনক। আমরা স্বামী স্ত্রী দুইজনে মিলে এখন ড্রাগন বাগানে কাজ করি। বাজারের ফল ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে প্রতি কেজি ২০০ টাকা দরে ড্রাগন কিনে নিয়ে যায়।
স্কুলছাত্রী শর্মিলা খাতুন বলেন, আমি আমার বাড়ির আঙ্গিনায় ৫টি ড্রাগন গাছ রোপন করেছি। ড্রাঙ্গণ ফল দেখতে যেমন সুন্দর খেতেও অনেক মজাদার।
ক্রেতা চম্পা বেগম বলেন, আমরা নিয়মিত এই বাগান থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে ড্রাগন ফল কিনে খাই। রাজবাড়ী, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যাপারীরা এসে ড্রাগন কিনে নিয়ে যাচ্ছে।
রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জনি খান বলেন, ভিয়েতনামে মিষ্টি ড্রাগন, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়াতে ড্রাগন ফল, থাইল্যান্ডে ড্রাগন স্ফটিক নামে পরিচিত। ড্রাগন ফলের গাছ দেখতে একদম ক্যাকটাসের মতো। পাতাবিহীন এই গাছটি দেখে অনেকেই একে ক্যাকটাস বলেই মনে করেন। ডিম্বাকৃতির উজ্জ্বল গোলাপি রঙের এই ফলের বর্তমানে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। ২০১১ সালে রাজবাড়ী হর্টিকালচার সেন্টারে পরীক্ষামূলকভাবে ড্রাগন ফলের চাষ শুরু হয়। প্রতি হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষের জন্য প্রয়োজন দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। বছরে একটি ড্রাগন গাছ থেকে প্রায় ১৪০ টি ফল পাওয়া যায়। এসব ফল স্থানীয় বাজারে বর্তমানে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, অল্প পরিশ্রমে স্বল্প পুঁজিতে কম সময়েই অধিক লাভ হওয়ায় রাজবাড়ীতে দিন দিন বাড়ছে ড্রাঙ্গণ ফলের চাষ।
তিনি আরও বলেন, বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল হচ্ছেন জেলার ড্রাগন চাষীরা। নানা পুষ্টিগুনে সমৃদ্ধ ড্রাঙ্গণ ফলটি সব বয়সের মানুষের জন্য একটি আদর্শ ফল। তাই জেলার অর্থনীতিতে ব্যাপক ভুমিকা রাখছে ড্রাগন ফলের চাষ। এতে বদলে যাচ্ছে কৃষকদের ভাগ্য। রাজবাড়ী জেলার মাটি ড্রাগন চাষের উপযোগী। আমরা চাষীদের নিয়মিত পরামর্শ প্রদান করছি।
প্রতিনিধি/ এজে